বামেদের ছয় সদস্যকে দলে টেনে উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদ দখল করতে আসরে নামল তৃণমূল। জেলা সদর রায়গঞ্জে এইমস হওয়া নিয়ে মতপার্থক্য আপাতত দূরে সরিয়ে তৃণমূলকে সমর্থনের ঘোষণা করেছেন কংগ্রেসের স্থানীয় নেতৃত্বও। তবে বামেদের দখলে থাকা ওই জেলা পরিষদের এমন কোনও ঘটনা তাঁর জানা নেই বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, বামেদের ছ’জন জেলা পরিষদ সদস্য-সদস্যার সঙ্গে শনিবার কলকাতায় বৈঠক করেছেন উত্তর দিনাজপুরের জেলা তৃণমূল সভাপতি অমল আচার্য। ওই বৈঠকে জেলা পরিষদের কংগ্রেস সদস্যদের একাংশও ছিলেন। অমলবাবু বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে জেলা পরিষদের বামফ্রন্টের ছয় সদস্য তৃণমূলে যোগ দেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। জেলার উন্নয়নের স্বার্থে তাঁদের আমরাও স্বাগত জানিয়েছি।” তৃণমূল সূত্রের দাবি, দু’য়েক দিনের মধ্যেই প্রদেশ তৃণমূল কার্যালয়ে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায় বামফ্রন্টের ওই ছয় সদস্যের হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেবেন। তারপরেই জেলা পরিষদে অনাস্থা আনা হবে।
এ কথা সমর্থন করেছেন উত্তর দিনাজপুর জেলা কংগ্রেস সভাপতি মোহিত সেনগুপ্তও। তিনি বলেন, “জেলা পরিষদ থেকে সিপিএমকে সরানোই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। সে জন্য আমরা অনাস্থায় সমর্থন করব। বাকি বিষয়ে কী হবে তা পরে ভাবা যাবে।” অধীরবাবু অবশ্য বলেন, “বামেদের কেউ কেউ তৃণমূলের দিকে ঝুঁকছে। তবে আমাদের কোনও ভূমিকা আছে বলে আমার জানা নেই। প্রদেশ সভাপতি হিসেবে আমি তৃণমূলের সঙ্গে কোনওরকম জোট মানব না। কেউ তা করলে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” রায়গঞ্জের কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ দীপা দাশমুন্সির সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা যায়নি।
বস্তুত, রায়গঞ্জে এইমস হওয়া নিয়ে তৃণমূল সরকারের সঙ্গে দীপাদেবী-সহ স্থানীয় কংগ্রেস নেতৃত্বের ‘দ্বন্দ্ব’ দীর্ঘদিনের। ঘটনাচক্রে, শনিবারই রায়গঞ্জে এইমসের ধাঁচে হাসপাতাল গড়ার দাবিতে ঘণ্টাখানেক জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন জমি দিতে ইচ্ছুক কৃষকদের একাংশ। ওই কৃষকদের নিয়েই কংগ্রেস বরাবরই এইমসের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তা হলে এখন কংগ্রেস কেন তৃণমূলের পাশে দাঁড়াচ্ছে? জেলা কংগ্রেসের সহকারী সভাপতি তথা জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা পূর্ণেন্দু দে’র অভিযোগ, “জেলা পরিষদ গঠনের পরে বামেরা কোনও উন্নয়নের পরিকল্পনা করতে পারেননি।” তাঁর যুক্তি, “তৃণমূল ওই বোর্ড গড়লে রাজ্য সরকারও সার্বিক উন্নয়নে বরাদ্দ করবে। তাই জেলা নেতাদের মত নিয়ে তৃণমূলকে সমর্থনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।”
উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের মোট আসন ২৬টি। বামেদের দখলে রয়েছে ১৩টি। কংগ্রেস আটটি ও তৃণমূল পাঁচটি আসন পেয়েছিল। এখন বামেদের ছ’জনকে পাশে পেলেও তৃণমূলের শক্তি দাঁড়াতে পারে ১১ জনে। কিন্তু, জেলা পরিষদ দখল করতে হলে ১৪ জন সদস্যের সমর্থন দরকার। সে ক্ষেত্রে কংগ্রেসকে পাশে না পেলে তৃণমূলের পক্ষে বোর্ড দখল অসম্ভব। কংগ্রেসের অন্দরের খবর, পরিস্থিতি তেমন হলে কংগ্রেসেও ভাঙন ধরতে পারে বলে দলের নেতাদের আশঙ্কা। সে জন্যই তৃণমূলকে সব সদস্য মিলে সমর্থন করার কথা প্রাথমিক ভাবে ভাবা হয়েছে। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “জেলা পরিষদের কংগ্রেসের সমস্ত সদস্যই তৃণমূলকে সমর্থন করবে। সভাপতি ও সহকারী সভাপতি পদে কারা বসবেন, সেই বিষয়ে তৃণমূলের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
জেলা বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান তথা সিপিএমের জেলা সম্পাদক বীরেশ্বর লাহিড়ী বিষয়টি জানেন। তিনি বলেন, “জানতে পেরেছি চোপড়ার সিপিএম সদস্য শিবাণী সিংহ, ইসলামপুরের সিপিএম সদস্য মহম্মদ হাফিজুদ্দিন, গোয়ালপোখরের সিপিএম সদস্য আলেমা নুরি, করণদিঘির সিপিএম সদস্য বিপাশা দাস সিংহ, হেমতাবাদের সিপিএম সদস্য প্রফুল্লচন্দ্র বর্মন ও হেমতাবাদের আরএসপি সদস্য মহসিনা খাতুন তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছেন।” তাঁর অভিযোগ, ক্ষমতা দখলের স্বার্থে তৃণমূল টাকা দিয়ে বামফ্রন্টের ছয় সদস্যকে কিনে নিয়েছে। তা শুনে তৃণমূল বিধায়ক অমল আচার্যের প্রতিক্রিয়া, “রাজ্যের মানুষ বামফ্রন্টকে নির্বাচনে পাঠিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন। তাই ওঁদের কথার জবাব দিলে মানুষকে অসম্মান করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy