Advertisement
১৯ মে ২০২৪

শিক্ষকের চেষ্টায় বাড়ছে ফলন

সামনে জনাদশেক আমচাষি। রবিবারের দুপুরে মালদহের চাঁচলের অলিহন্ডার এক আমবাগানে তাঁদের সামনে হাজির এক শিক্ষক। পেশা শিক্ষকতা। আর নেশা আম চাষ নিয়ে গবেষণা। চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস পাঁচ বছর ধরে আম উত্‌পাদনের গুণগত মান বাড়ানো নিয়ে চাষিদের মধ্যে প্রচার করছেন। হাতে-কলমেও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন কমলকৃষ্ণ। গত পাঁচ বছর ধরে ওই প্রচারে ফলও মিলেছে। কমলবাবুর দেখানো পথে আমের উত্‌পাদনের গুণগত মানও বেড়েছে বলে দাবি আমচাষিদের।

আম বাগানে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস। নিজস্ব চিত্র।

আম বাগানে চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস। নিজস্ব চিত্র।

বাপি মজুমদার
চাঁচল (মালদহ) শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৫ ০২:০৪
Share: Save:

সামনে জনাদশেক আমচাষি। রবিবারের দুপুরে মালদহের চাঁচলের অলিহন্ডার এক আমবাগানে তাঁদের সামনে হাজির এক শিক্ষক। পেশা শিক্ষকতা। আর নেশা আম চাষ নিয়ে গবেষণা।

চাঁচল সিদ্ধেশ্বরী স্কুলের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক কমলকৃষ্ণ দাস পাঁচ বছর ধরে আম উত্‌পাদনের গুণগত মান বাড়ানো নিয়ে চাষিদের মধ্যে প্রচার করছেন। হাতে-কলমেও তাঁদের প্রশিক্ষণ দেন কমলকৃষ্ণ। গত পাঁচ বছর ধরে ওই প্রচারে ফলও মিলেছে। কমলবাবুর দেখানো পথে আমের উত্‌পাদনের গুণগত মানও বেড়েছে বলে দাবি আমচাষিদের।

উদ্ভিদবিদ্যার ওই শিক্ষক আম সংক্রান্ত বিষয়ে গবেষণা করেছেন। কিন্তু, গবেষণার বিষয় ফাইলবন্দি না রেখে ছুটি পেলেই হাজির হন এক বাগান থেকে অন্য বাগানে। আম উত্‌পাদনের গুণগত মান বাড়ানো নিয়ে চাষিদের মধ্যে সচেতনতার প্রচার চালান তিনি।

উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা যায়, আমের জেলা হিসাবেই মালদহের পরিচিতি। গোটা রাজ্যে ৭৫ হাজার হেক্টরের মধ্যে মালদহেই আম চাষ হয় ৩০ হাজার হেক্টরে। প্রায় ১১ লক্ষ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আম চাষের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু এ হেন অর্থকরী বাগিচা ফসলের জন্য একমাত্র জেলা সদর ছাড়া ব্লক স্তরে কোনও দফতর নেই। ফলে যোগাযোগের পাশাপাশি সঠিক প্রশিক্ষণের অভাব রয়েছে আমচাষিদের বলে অভিযোগ।

সমস্যার কথা অস্বীকার করেননি জেলা উদ্যান পালন দফতরের আধিকারিক প্রিয়রঞ্জন সন্নিগ্রাহী। তিনি বলেন, “একমাত্র মালদহ সদরে দফতরের অফিস রয়েছে। ফলে বিভিন্ন ব্লকে আয়োজিত কৃষিমেলার পাশাপাশি মুকুল আসার আগে লিফলেট বিলি করে আমরা আমচাষিদের নানা ভাবে সচেতন করার চেষ্টা করি।”

কিন্তু কমলবাবুর উদ্যোগের কথা অজানা নয় উদ্যান পালন দফতরের। প্রিয়রঞ্জনবাবু বলেন, “কমলবাবু আম নিয়ে গবেষণা করেছেন। আমাদের দফতরেও নিয়মিত আসেন। তিনি যে ভাবে আমচাষিদের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাতে জেলার আমচাষিরা উপকৃত হবেন। যা জেলার অর্থনীতির সঙ্গে সম্পর্কিত।”

উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানা যায়, জানুয়ারির শেষ থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আমগাছে মুকুল ধরা শুরু হয়। কিন্তু সঠিক পরিচর্যা না পেলে মুকুল তো ভাল হয়ই না, আমের গুণগত মানও খারাপ হয়। শীতের সকালে পাতায় শিশির জমে। রোদের অভাবে তা শুকোতে না পারায় পাতায় ধুলোর আস্তরণ জমতে থাকে। ফলে মুকুলের জন্মলগ্নে খাদ্যাভাব দেখা দেয়। এতে উত্‌পাদন মার খায়।

তাই মুকুল আসার আগে পাতা স্প্রে করা কতটা জরুরি, কী ভাবেই বা তা করতে হবে সেই পরামর্শ আমচাষিদের দিচ্ছেন কমলবাবু। রাসায়নিকের ব্যবহার না করে জৈব সার প্রয়োগে কী ভাবে রোগ-পোকার আক্রমণ থেকে গাছ-ফল বাঁচবে, তাও তিনি শেখাচ্ছেন। এ ছাড়া প্রতিটি বাগানে কী ভাবে আলোর ফাঁদ গড়ে তুলতে হবে শেখাচ্ছেন তাও। বাগানে আলো ঢুকলে রোগের আক্রমন অনেকটাই প্রতিহত করা সম্ভব। নিমপাতা জলে সেদ্ধ করে ওই ঠান্ডা জল পাতায় স্প্রে করলে যে রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করলেও ফল মিলবে বোঝাচ্ছেন। এতে খরচও বাঁচবে। অলিহন্ডার আমচাষি সুদীপ্ত ঘোষ মকবুল হোসেন, মনোজ ঘোষরা বলেন, “গ্রামে এসে কখনও কেউ এভাবে আমচাষ নিয়ে কিছু বলেন না। তাই উনি এলেই আমরা ছুটে যাই। কমলবাবুর পরামর্শে চাষ করে সুফল পেয়েছি।” কমলবাবু বলেন, “গবেষণা করতে গিয়ে মনে হয়েছে, আমকে ঘিরে মালদহে বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই নেশার টানেই চাষিদের পাশে দাঁড়াই।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chanchal mango kamal krishna das bapi majumdar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE