কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ কনস্টেবলকে চড় মারার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। পুলিশের নথিতে ফেরার থাকার পরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে হয় তাঁকে। ওই মামলার নিষ্পত্তি না-হতেই এবার বিরোধী সিপিএম ও কংগ্রেস সমর্থকদের উপরে সশস্ত্র হামলার ঘটনায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠল জলপাইগুড়ি জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে।
তৃণমূল পরিচালিত পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে সিপিএম ও কংগ্রেস সদস্যদের আনা অনাস্থা প্রস্তাবের তলবি সভাকে ঘিরে বুধবার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই পক্ষের ৯ জন জখম হন। তলবি সভা ভেস্তে যায়। বুধবার রাত থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তৃণমূল এবং সিপিএমের তরফে কোতোয়ালি থানায় পরস্পরের বিরুদ্ধে একাধিক সশস্ত্র হামলার অভিযোগ জমা পড়ে। সিপিএমের পক্ষ থেকে সৈকতবাবুর বিরুদ্ধে হামলায় নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়। তৃণমূলের পক্ষ থেকে হামলা চালিয়ে তলবি সভা ভেস্তে দেওয়ার ষড়যন্ত্রে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয় সিপিএমের প্রাক্তন সাংসদ জিতেন দাসের বিরুদ্ধে। জলপাইগুড়ির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জেমস কুজুর বলেন, “দু’পক্ষের অভিযোগই আমরা পেয়েছি। পুরো বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।”
সংঘর্ষের ঘটনার পরে বুধবার রাতে পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সিপিএম সদস্য পদ্মা সরকার যে ১৬ তৃণমূল নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ জানান, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন জেলা তৃণমূল সভাপতি সৈকত চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূল কিষাণ সংগঠনের জেলা সভাপতি দুলাল দেবনাথ, ছাত্র নেতা দেবল দত্ত। সৈকতবাবুর বিরুদ্ধে দলীয় কর্মীদের হামলার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগ জানানো হয়। যুব তৃণমূল সভাপতি সৈকতবাবু সিপিএমের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “গোলমাল হচ্ছে শুনে বেলা পৌনে ১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে যাই। ততক্ষণে সিপিএমের হামলায় আমাদের কয়েকজন কর্মী জখম হয়েছেন। ওঁদের হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করি। ঘটনার সঙ্গে আমাকে জড়ানো হচ্ছে কেন সেটা বুঝতে পারছি না।” একই বক্তব্য তৃণমূল কৃষক নেতা দুলাল দেবনাথের।
বৃহস্পতিবার সকালে দলের জেলা দফতরে বসে কয়েকজন নেতা অভিযোগ করেন, গত ১৭ জুলাই কর্তব্যরত পুলিশ কনস্টেবলকে চড় মারার পরে প্রকাশ্যে সভা করে বেড়ালেও সৈকতবাবুকে পুলিশ না ধরে ফেরার দেখায়। গত ১৯ নভেম্বর আদালতে আত্মসমর্পণ করে তাঁকে জামিন নিতে হয়। দলের প্রাক্তন সাংসদ জিতেনবাবু বলেন, “এর পরে আর কি বলার থাকে!” বৃহস্পতিবার দুপুরের পরে সিপিএমের তরফে তৃণমূল নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে কোতোয়ালি থানায় আরও একটি অভিযোগ দায়ের করেন পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা সানন্দকুমার সরকার।
পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রহেনা খাতুন এদিন ১৩ জন সিপিএম নেতা কর্মীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে তলবি সভা ভেস্তে দেওয়ার পাল্টা অভিযোগ জানান কোতোয়ালি থানায়। ওই অভিযুক্তদের তালিকায় আছেন প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ তথা দলের জলপাইগুড়ি সদর জোনাল কমিটির সম্পাদক জিতেন দাসও। সিপিএম নেতৃত্ব অবশ্য তৃণমূলের অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দেন। জিতেনবাবু বলেন, “তলবি সভায় হাজির না হয়ে হামলা চালিয়ে আমাদের কর্মীদের রক্তাক্ত করে পঞ্চায়েত প্রধান আত্মরক্ষার পথ খুঁজছেন।” তিনি জানান, ঘটনার প্রতিবাদে ২৯ নভেম্বর জেলাশাসককে স্মারকলিপি দেওয়া হবে। দ্রুত তলবি সভা না ডাকা হলে একদিকে যেমন অনশন আন্দোলন চলবে, অন্যদিকে হাইকোর্টে আইনি লড়াই শুরু হবে বলে সিপিএম জানিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy