রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়।—ফাইল চিত্র।
বুধবার সন্ধে গড়িয়ে রাত নামার আগেই গুটি গুটি পায়ে হাজির সবাই। রাত বাড়ছে। গুমোট গরমের মধ্যে মাঝে মাঝে ঝিরঝিরে বৃষ্টি।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরের আলো যতটা সম্ভব সবই জ্বালানো হয়েছে। তার পর শুরু অপেক্ষা। কেউ কেউ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন, আবার অনেকের মুখেই একটা আশঙ্কার ছাপ। তারই মধ্যে মাঝে মাঝেই সময় দেখছেন সবাই।
রাত তখন প্রায় ১২টা। নিঝুম বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। তার মধ্যেই সেই নিস্তব্ধতা চিরে একটা আওয়াজ। সবাই চমকে উঠলেন আওয়াজটা শুনে। এ রকমই আওয়াজ গত কয়েক দিন ধরে পাচ্ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা চার রক্ষী অভিনন্দন দাস, নারায়ণ সাহা, মঙ্গল মাঝি ও দেবজ্যোতি চক্রবর্তী।
আওয়াজটা বেশ স্পষ্ট। দোতলার পদার্থবিদ্যার গবেষণাগার থেকে আসছে। এর আগেও ওই একই আওয়াজ শুনেছেন ওই চার নিরাপত্তারক্ষী— বেশ কয়েক জন যেন বন্ধ ঘরের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। শুধু ঘুরে বেড়ানো নয়, ঘরের মধ্যে যেন রীতিমতো কর্মযজ্ঞ চলছে। চেয়ার টেবিল সরানো হচ্ছে, আলমারি সরানোর ধাতব তীক্ষ্ণ আওয়াজ, আবার কখনও কাচ ভাঙার আওয়াজ।
দেখুন ভিডিয়ো
কয়েক দিন ধরে এই সব আওয়াজ শুনে বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিলেন ওই চার নিরাপত্তাকর্মী। তার পর মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে রাত কাটিয়েছিলেন এস্টেট অফিসার স্বপন পাইন নিজে। বুধবার ইদের দিন সকালে তাঁর অবস্থাও ওই নিরাপত্তাকর্মীদের থেকে বিশেষ ভাল কিছু ছিল না।
তবে বুধবার রাতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন এক দল ছাত্রছাত্রী, উপাচার্য অনিল ভুঁইমালি নিজে, উপাচার্যের আপ্তসহায়ক ছাড়াও আরও কয়েক জন।টিএমসিপি নেতা অনুপ করের দাবি, ওই শব্দ পাওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলায় পদার্থবিদ্যা বিভাগের সামনের বারান্দায় কোল্যাপসিবল গেটের সামনে গিয়ে তাঁরা দাঁড়ান। সমস্ত দরজা তালা দেওয়া ছিল, জানলা বন্ধ ছিল। ভিতরে কারও থাকারও কথা নয়। অনুপের বক্তব্য, ‘‘আমরা শব্দের উৎস বুঝে ওঠার আগেই বারান্দায় থাকা প্লাস্টিকের ডাস্টবিন থেকে একটি বড় ইঁদুর ও বারান্দার ছাদের কোণ থেকে একটি পাখি উড়ে বেরিয়ে যায়। আমাদের সন্দেহ, মঙ্গলবার রাতে সেগুলোর জন্যই নানা রকম শব্দ ভেসে আসছিল।’’
আওয়াজ শুরু হতেই চিনতে পারেন নিরাপত্তারক্ষীরা এবং স্বপনবাবু নিজে। ঠিক ওই রকম আওয়াজ। আগের রাতেও আওয়াজটা আসছিল দোতলার পদার্থবিদ্যার গবেষণাগার থেকে। সেই একই বন্ধ ঘরের ভেতর থেকে অদ্ভুতুড়ে আওয়াজ। মঙ্গলবার রাতে পুলিশকে সঙ্গে করে গবেষণাগার খুলিয়েছিলেন স্বপনবাবু। কিন্তু কোথায় কী! সব স্বাভাবিক।
বুধবার আওয়াজ শুনেই প্রথমে দোতলায় দৌড়য় ছাত্রছাত্রীরা। তখনও নিচ থেকে আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ছাত্ররা ওপরে কী পায় জানার জন্যে অপেক্ষা করছিলেন বাকি সবাই। আর ঠিক তার মধ্যেই সবার গা ছমছম করা অনুভূতিটা বাড়িয়ে দিয়ে সশব্দে ডানা ঝাপটাতে ঝাপটাতে উড়ে যায় একটা প্রকাণ্ড পেঁচা।
আরও পড়ুন: রাতারাতি বদলে গেল স্কুল সার্ভিসের ওয়েট লিস্ট, শীর্ষে সদ্য তৃণমূলে যোগ দেওয়া নেতার মেয়ে!
রায়গঞ্জ ইউনিভার্সিটি কলেজের ভবনেই গড়ে উঠেছে রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়। পুরনো বাসিন্দারা, যাঁরা ওই কলেজের পুরনো ছাত্র তাঁরা অনেকেই জানেন, আগেও এ রকম নানা আওয়াজ শোনা যেত কলেজের বদ্ধ ঘরে। এ রকমই এক প্রাক্তন ছাত্র বলেন, “তলায় রসায়ন বিভাগের গ্যালারি। আর তার ওপর পদার্থবিদ্যার ল্যাবেরটরি। রাতের কলেজে ওই রসায়নের গ্যালারিতেই বাণিজ্য বিভাগের ক্লাস হত। আমাদের কলেজ জীবনেও ওই ঘরগুলো কুখ্যাত ছিল। রাতে লোকজন কম থাকলে আমরা যথেষ্ট ভয় পেতাম।”
এই গল্পগুলো এখন ফের গোটা রায়গঞ্জ জুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে। কানে গিয়েছে উপাচার্য এবং বাকিদেরও।
আরও পড়ুন: সোশ্যাল মিডিয়ায় ফাঁদ, সহবাসের পর ভিডিয়ো করে ব্ল্যাকমেল, নির্যাতন সোনারপুরে
ইতিমধ্যে বুধবার ছাত্ররা দোতলা থেকে আবিষ্কার করে একটি বড়সড় ডাস্টবিন। সেই ডাস্টবিনের মধ্যে আটকে ছিল একটা ধেড়ে ইঁদুর। প্রায় খরগোশের চেহারার ওই ইঁদুর নাকি বেকায়দায় আটকে পড়ে গোটা ডাস্টবিন নিয়েই চলাফেরার চেষ্টা চালাচ্ছিল। আর তাতেই নিস্তব্ধ ওই ঘরে ও রকম গমগমে আওয়াজ হচ্ছিল, এমনটাই দাবি ছাত্রদের। অনুপ কর বিসিএ-র পড়ুয়া। তিনি ছিলেন ওই ছাত্রদের দলে। তাঁর কথায়: “ফাঁকা ঘরে ইঁদুরটার ডাস্টবিনের মধ্যে দৌড়ঝাঁপের চেষ্টায় তৈরি হওয়া আওয়াজ ও রকম বিদঘুটে চেহারা নিয়েছিল।” বাকি ছাত্রদেরও একই দাবি।
বুধবার রাতে আওয়াজ শুরু হওয়ার খবর পেয়েই বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে গিয়েছিল পুলিশ। ছাত্রদের মুখে সব শুনে স্বপনবাবু বলেন, “হতে পারে ওই কারণেই আওয়াজ।” যদিও তাঁর বা যাঁরা এর আগে আওয়াজ শুনেছেন, তাঁদের মুখ দেখে মনে হয়নি যে তাঁরা খুব নিশ্চিন্ত হয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরও বেশি আলো এূবং আরও দু’জন নিরাপত্তা রক্ষী নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন দেখার সেই ভুতুড়ে আওয়াজ আবার ফিরে আসে কি না।
পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাংলায় খবর জানতে পড়ুন আমাদের রাজ্য বিভাগ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy