Advertisement
০১ নভেম্বর ২০২৪
Pay Commisssion

কেন্দ্রীয় হারেই বাড়তে পারে রাজ্যের কর্মীদের বেতন, কিন্তু প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে সংশয়

রাজ্য সরকারের নির্দেশেই বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার জমা দিচ্ছেন না নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ, দাবি কর্মী সংগঠনগুলির।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ১৮:২২
Share: Save:

উর্দু প্রবচন আওড়াচ্ছেন বিজেপি প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের এক নেতা— ‘দের আয়ে, পর দুরুস্ত আয়ে’। পৌনে চার বছর ধরে বেতন কমিশনের মেয়াদ বাড়ছে তো বাড়ছেই। কিছুতেই জমা পড়ছে না নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ। কিন্তু কমিশন সূত্রে খবর, সুপারিশ তৈরি। চলতি মাসেই তা জমা পড়ছে নবান্নে। কেন্দ্র যে হারে বেতন কাঠামোর সংস্কার করে থাকে, রাজ্যও সেই হারই অনুসরণ করছে বলেও জানা যাচ্ছে। বকেয়া বেতনের কতটা মিলবে, তা নিয়ে সংশয় যথেষ্টই। কিন্তু কেন্দ্রীয় হারেই বেতন সংস্কার হচ্ছে বলে যা শোনা যাচ্ছে, তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তিতে কর্মী সংগঠনগুলি।

সিপিএমের ছাতার তলায় থাকা কর্মচারী সংগঠন কোঅর্ডিনেশন কমিটি, কংগ্রেসের কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ বা বিজেপির সরকারি কর্মচারী পরিষদ— বেতন কমিশন এবং রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে সরব সব পক্ষই। ২০১৫ সালের নভেম্বরে এই বেতন কমিশন গঠিত হয়েছিল। তার মেয়াদ বাড়াতে বাড়াতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ২০১৯-এর শেষ পর্যন্ত। দেশের ইতিহাসে কোনও বেতন কমিশনের কার্যকাল এত দীর্ঘায়িত হয়নি। রাজ্য সরকারের নির্দেশেই বেতন কমিশনের চেয়ারম্যান অভিরূপ সরকার জমা দিচ্ছেন না নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ, দাবি কর্মী সংগঠনগুলির। শুধু বিরোধী দলের সংগঠনগুলি নয়, তৃণমূলের ছাতার তলায় থাকা সংগঠন স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশনের একাংশও বেতন কমিশনের চেয়ারম্যানকে তীব্র আক্রমণ করেছে।

আক্রমণ করলেও রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতার কারণে তৃণমূলের সংগঠন আন্দোলনে নামতে পারেনি। কিন্তু অন্য সংগঠনগুলি নানা ভাবে ক্ষোভ-বিক্ষোভ শুরু করে দিয়েছিল রাজ্য জুড়ে। কর্মীদের সর্ব শেষ কর্মসূচি পালিত হয় গত বুধবার। কর্মচারী পরিষদের ডাকে বেতন কমিশন অভিযান হয় সে দিন। ফেডারেশনের একাংশও তাতে যোগ দেয়। মিছিলকে শেষ পর্যন্ত বেতন কমিশনে পৌঁছতে দেয়নি পুলিশ। তবে যে প্রতিনিধি দল কমিশনে গিয়ে স্মারকলিপি তুলে দেয়, কমিশনের তরফে সেই প্রতিনিধি দলকে মৌখিক আশ্বাস দেওয়া হয়, নতুন বেতন কাঠামোর সুপারিশ চলতি মাসেই জমা পড়ে যাবে।

কমিশন সূত্রে কর্মী সংগঠনগুলি আরও জেনেছে যে, কেন্দ্রীয় সরকার যে পদ্ধতি মেনে বা যে হিসেব অনুযায়ী বেতন সংস্কার করে থাকে, পশ্চিমবঙ্গ সরকারও সেই হারেই বেতন সংস্কার করতে চলেছে। বেতন কমিশনের সুপারিশ অন্তত সে রকমই হতে চলেছে বলে খবর।

আড়ও পড়ুন: অনাস্থা মোকাবিলায় ‘পরামর্শ’ দিতে সব্যসাচীর বাড়িতে গেলেন মুকুল

২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি অথবা ১৪.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি— কেন্দ্র সাধারণত এই পদ্ধতি অনুসরণ করেই বেতন সংস্কার করে। একই পদ্ধতি অনুসরণ করে বিভিন্ন রাজ্য সরকারও। পশ্চিমবঙ্গ সরকারকেও সেই হারেই বেতন সংস্কার করার পরামর্শ বেতন কমিশন দিতে চলেছে বলে খবর।

বেতন সংস্কারের সুপারিশ কেমন হতে চলেছে, সে সম্পর্কে কমিশনের তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনও মন্তব্য কোথাওই করা হয়নি। কিন্তু কমিশন সূত্রে কর্মী সংগঠনগুলি যেমন খবর পেয়েছে, সেই অনুযায়ী বেতন বৃদ্ধির হারটা কেমন হতে পারে, দেখে নিন:

*হাউজ রেন্ট অ্যালাউন্স এবং মেডিক্যাল অ্যালাউন্সের হিসেব এর মধ্যে ধরা হয়নি।

যে পদ্ধতি অনুসরণ করে বেতন সংস্কারের সুপারিশ জমা পড়ছে বলে খবর, তাতে নতুন বেতনক্রম চালু হওয়ার পর থেকে রাজ্য সরকারি চাকরিতে ন্যূনতম বেতন হবে এইটা। ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর বা ১৪.৩৮ শতাংশ বৃদ্ধি— এর মধ্যে দ্বিতীয় পদ্ধতি অনুসৃত হলে, বেতন বৃদ্ধির পরিমাণ সামান্য বেশি হবে। তবে ফারাকটা উনিশ-বিশ।

তবে যত ক্ষণ না বেতন কমিশনের রিপোর্ট জমা পড়ছে, তত ক্ষণ নিশ্চিত হতে রাজি নয় কর্মী সংগঠনগুলি। রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয়শঙ্কর সিংহের কথায়, ‘‘যত ক্ষণ না সুপারিশ জমা পড়ছে, তত ক্ষণ কিছুই বিশ্বাস করতে পারছি না। তবে আমরা আশা করব, কেন্দ্রীয় হারে অর্থাৎ ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি মেনেই রাজ্যে বেতন বৃদ্ধি হবে।’’ বাম জমানার কথা মনে করিয়ে বাম কর্মী ইউনিয়নের ওই নেতার মন্তব্য, ‘‘জ্যোতি বসু যখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তখন নজিরবিহীন ভাবে রাজ্য সরকারের গ্রুপ-ডি এবং লোয়ার ডিভিশন ক্লার্করা কেন্দ্রের ওই স্তরের কর্মীদের চেয়ে বেতন বেশি পেতেন। ৫০ বা ১০০টাকা বেশি পেলেও পেতেন। এই সরকারের কাছে তেমন কিছু প্রত্যাশা করছি না। কিন্তু অন্তত ২.৫৭ ফিটমেন্ট ফ্যাক্টর পদ্ধতি অনুসৃত হোক।’’

সরকারি কর্মচারী পরিষদের দেবাশিস শীলের সুরও একই রকম। তিনি বললেন, ‘‘কেন্দ্রীয় হার অনুযায়ীই যে বেতন সংস্কার হচ্ছে, সে রকম কথা আমাদের কানেও এসেছে। কিন্তু এই সরকারের জমানায় না আঁচানো পর্যন্ত বিশ্বাস করতে পারব না যে খেয়েছি।’’ কেন্দ্রীয় পদ্ধতিতে বেতন সংস্কার হলেও কর্মীদের প্রাপ্য বকেয়া নিয়ে সরকার কী নীতি নেবে, তা নিয়ে দেবাশিস শীল সংশয় প্রকাশ করেছেন। তাঁর কথায়, ‘‘পৌনে চার বছর ধরে বেতন কমিশন চলছে। বেতন সংস্কারের পরে বৃদ্ধি কার্যকর হওয়া উচিত পৌনে চার বছর আগের তারিখটা থেকে। অর্থাৎ বর্ধিত বেতন অনুসারে এই ক’বছরের জন্য কর্মীদের যে অতিরিক্ত প্রাপ্য, তা মিটিয়ে দেওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের আশঙ্কা, এক পয়সা বকেয়া এঁরা মেটাবেন না। বৃদ্ধিটা ওই পৌনে চার বছর আগের তারিখ থেকেই কার্যকর হিসেবে ধরা হবে। তার ভিত্তিতেই গত কয়েক বছরে বেতন বৃদ্ধির (ইনক্রিমেন্ট) হিসেব কষা হবে এবং সেই অনুযায়ীই নতুন বেতন দেওয়া হবে। কিন্তু প্রাপ্য বকেয়াটা আদৌ দেওয়া হবে কি না, সংশয় রয়েছে।’’

আড়ও পড়ুন: ভুল কবুল করে নিন, শোধরানোর চেষ্টা করুন, বিধায়কদের বার্তা মমতার

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE