রবিবার নকশালদের ডাকা সমাবেশে গ্রামবাসীরা। সামসুল হুদার তোলা ছবি।
গ্রামে সভা করছেন নকশাল নেতা। পুলিশ নিষ্ক্রিয় ভাবে থানায় বসে। শনিবার এ দৃশ্য দেখা গিয়েছিল ‘মুক্তাঞ্চল’ ভাঙড়ে। রবিবার সেই ছবি যেন আরও বড় ফ্রেমে ধরা পড়ল!
কাশীপুর থানা থেকে সাত কিলোমিটার দূরে, পোলেরহাট-২ পঞ্চায়েতের ডিবডিবে বাজারে এলাকার তিনটি মৌজার প্রায় হাজার খানেক গ্রামবাসীকে নিয়ে চৌকি-চেয়ার পেতে সমাবেশ করে গেলেন নকশাল নেতাদের একাংশ। যাঁরা এ বার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনার প্রস্তাবও দিয়েছেন। ওই নেতাদের অনেকেই গত মঙ্গলবারের তাণ্ডবে অভিযুক্ত।
পুলিশ সব জেনেও কেন এগোচ্ছে না? জেলা পুলিশ কর্তারা মনে করছেন, নকশাল নেতাদের ধরতে গেলে হিতে-বিপরীত হতে পারে। গত সোমবার দুই আন্দোলনকারীকে সিআইডি ধরার পরদিনই অগ্নিগর্ভ হয়েছিল ভাঙড়। পুলিশ তো নয়ই, শাসক দলের নেতারাও এলাকায় এখনও দাঁত ফোটাতে পারছেন না। শনিবার তৃণমূল ভবনে দলের সর্বভারতীয় সভাপতি মুকুল রায় ভাঙড়ের দলীয় নেতা কাইজার আহমেদ, নান্নু হোসেনদের ওই এলাকা থেকে অবরোধ তোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাতে ফিরে তাঁরা নতুনহাট এলাকা থেকে অবরোধ তুলতে গেলে গ্রামবাসীরা আপত্তি তোলেন। তৃণমূল নেতাদের ফিরে যেতে বাধ্য করেন। রবিবার সকালে ফের নতুন করে ব্যারিকেড গড়া হয়। শুধু তাই নয়, আরাবুল ইসলামকে গ্রেফতার এবং পাওয়ার গ্রিডের কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন প্রত্যাহার করা হবে না বলে মাইকে প্রচারও করা হয়।
এই যেখানে অবস্থা, সেখানে এখনই আর ধরপাকড়ের রাস্তায় যেতে চাইছে না প্রশাসন। ফলে কার্যত খোলা মাঠ পেয়ে গিয়েছেন নকশাল নেতারা। এ দিনের সভায় গ্রামবাসীদের উপস্থিতিও সে কথাই বলছে! রাজ্য পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘এলাকার মানুষ নকশাল নেতাদের সঙ্গেই রয়েছেন। মানুষের ক্ষোভ এখনও কমেনি। ফের তল্লাশি শুরু করলে পরিস্থিতি বেলাগাম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’’ জেলাশাসক পি বি সেলিম জানিয়েছেন, প্রশাসনের শীর্ষস্তরের নির্দেশে আলোচনার একটা প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তাও জানান, এই আলোচনা যাতে কোনও ভাবেই ভেস্তে না যায়, সে জন্যই নকশাল নেতাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। প্রশাসনের শীর্ষস্তর থেকে এমন নির্দেশই এসেছে বলে ওই কর্তার দাবি।
আলোচনায় কী চান নকশাল নেতারা? তাঁদের দাবি, ই-মেল করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তাঁরা চান, পাওয়ার গ্রিডের প্রকল্প বন্ধের জন্য মুখ্যমন্ত্রী মুখে যা বলেছেন, সেটাই বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানাক সরকার। এ দিন ডিবডিবে বাজারে সভার আগে সাংবাদিকদের কাছেও নকশাল নেত্রী শর্মিষ্ঠা বলেন, ‘‘বিজ্ঞপ্তি জারি করে মুখ্যমন্ত্রী তাঁর সদিচ্ছায় সিলমোহরের ব্যবস্থা করুন।’’ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের ধারণা, আপাতত নকশাল নেতারা রাজ্য সরকারের মনোভাব আন্দাজ করার চেষ্টা করছেন। ভাঙড়-কাণ্ডে ধৃত ১৮ জন পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের আজ, সোমবার ফের আদালতে হাজির করানোর কথা। ইতিমধ্যেই তাঁদের জামিনের দাবি করেছেন নকশাল নেতারা। তাঁরা মনে করছেন, ধৃতেরা আজ জামিন পেলেন কি না দেখলেই বোঝা যাবে রাজ্য সরকার আলোচনার প্রস্তাব কতটা কার্যকর করতে চায়। সেই কারণেই তাঁরা এখনই আন্দোলনের রাস্তা থেকে সরছেন না।
এ দিন ভাঙড়ে গিয়ে নকশাল নেতাদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন ‘সেভ ডেমোক্রেসি’ সংগঠনের সদস্যেরা। তাঁদের তরফে চঞ্চল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘নকশাল নেতারা যেমন কয়েক জন অধ্যাপক-বিশেষজ্ঞকে নিয়ে এসে পাওয়ার গ্রিডের সাব-স্টেশনজনিত সমস্যার কথা জানিয়েছিলেন, তেমনই রাজ্য সরকারের উচিত, নামী বিজ্ঞানীদের এনে গ্রামবাসীদের বোঝানো।’’
প্রশাসন অবশ্য এখনই এ বিষয়ে আলোচনার কোনও ইঙ্গিত দেয়নি।
তথ্য সহায়তা: সামসুল হুদা
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy