প্রতীকী চিত্র
পুরুলিয়ায় দলের বিপর্যয়ের কারণ অনুসন্ধানে বসে আমলাতন্ত্রের দিকে আঙুল তুললেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁদের অনেকের অভিমত, সরকারি প্রকল্প রূপায়ণে দলকে এড়িয়ে গিয়েছেন আমলারা। যার ফলে মানুষের ধারণা হয়েছে, তৃণমূল নেতাদের থেকে আমলাদের প্রভাব বেশি। যদিও দলীয় নেতাদের মুখে ভোট-বিপর্যয়ের এই ব্যাখ্যা শুনে মুচকি হেসেছেন নিচুতলার কর্মীদের অনেকেই। তাঁদের অভিমত, বাড়তে থাকা ‘আখের গোছানোর প্রবণতা’, নেতৃত্বের একাংশের ‘ঔদ্ধত্য’, মানুষের ‘ক্ষোভের’ মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে উপেক্ষা করা দলের পরাজয়ের অন্যতম কারণ।
লোকসভা ভোটে হারের কারণ খতিয়ে দেখতে গত সোমবার বৈঠক করেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সূত্রের খবর, বৈঠকে উপস্থিত অনেক নেতাই বাড়তে থাকা আমলাতন্ত্রর প্রভাব এবং তীব্র মেরুকরণকেই বিপর্যয়ের প্রধান দুই কারণ বলে মনে করছেন।
তৃণমূল জেলা সভাপতি শান্তিরাম মাহাতো বলেন, ‘‘বৈঠকে বিপর্যয়ের কারণ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমলাতান্ত্রিক নির্ভরতাকেই বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ বলেই সকলে মনে করেছেন। এ ছাড়া মেরুকরনের বিষয়টিও রয়েছে।’’ দলের বরিষ্ঠ সহ-সভাপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘উন্নয়নমূলক কাজের বিষয়ে অনেক ক্ষেত্রেই আমলারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমনকি, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি প্রকল্পে উপভোক্তাদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রেও দলের নেতাদের মতামত গুরুত্ব পায়নি। ‘কন্যাশ্রী’র মতো প্রকল্পের উপভোক্তারা বুঝে গিয়েছিলেন যে, সুবিধা পাওয়ার প্রশ্নে দলের কোন ভূমিকা নেই।’’
তৃণমূল সূত্রের খবর, পর্যালোচনা বৈঠকে একাধিক নেতা জানান, ব্লকে দলীয় নেতৃত্বের সুপারিশকে উপেক্ষা করেছেন আমলারা। এক নেতার কথায়, ‘‘নেতাদের কথার গুরুত্ব যে দেওয়া হচ্ছে না, তা মানুষ বুঝতে পেরে গিয়েছেন। উপেক্ষিত থেকেছেন দলের নেতারা।’’ বিষয়টি রাজ্য নেতৃত্বকে জানানো হবে।
দলের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের একাংশের দাবি, ‘পিঠ বাঁচাতে’ আমলাতন্ত্রের ঘাড়ে পরাজয়ের দায় চাপাতে চাইছেন নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, মেরুকরণ এবং আমলাতন্ত্রকে কাঠগড়ায় দাঁড় করালে বিপর্যয়ের সঠিক ব্যাখ্যা হবে না। এক তৃণমূল কর্মীর কথায়, ‘‘পঞ্চায়েত ভোটে বিপর্যয়ের পরে ঠিক যে প্রক্রিয়ায় বিপর্যয়ের কারণ খোঁজা হয়েছিল, এ বারের পর্যালোচনাও অনেকটা সে ভাবেই হয়েছে। আসল সমস্যা এড়িয়ে যাওয়া হচ্ছে। পঞ্চায়েত ভোটের পরে যে ভাবে একের পর এক অন্য দলের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের তৃণমূলে যোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে, তাতে দলের ক্ষতি-ই হয়েছে।’’
কর্মীদের একাংশের মতে, জেলায় তৃণমূলের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপগুলিতে যে পোস্টগুলি করা হয়েছে, সেগুলি খতিয়ে দেখলেই বিপর্যয়ের প্রকৃত কারণ উঠে আসবে। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপগুলিতে অনেক কর্মীই লিখেছেন— ‘ব্লকের নেতারা ‘আখের গোছাতে’ ব্যস্ত, তাঁরা ‘এসি’ গাড়ি চড়েছেন, বাড়ি হাঁকিয়েছেন, সাধারণ কর্মী ও মানুষের ক্ষোভ টের পাননি’। অনেকে লিখেছেন, ‘ দল যোগ্য নেতাদের উপেক্ষা করেছে, পঞ্চায়েত ভোটের ময়নাতদন্ত হয়নি’। কেউ লিখেছেন, ‘পুরুলিয়া জেলায় দল বহিরাগত নেতাদের সম্পত্তি হয়ে উঠেছিল, কর্মীদের বক্তব্য শোনার কেউ ছিল না’। কেউ সরব হয়েছেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের ‘দুর্নীতি’ নিয়েও।
কর্মীদের এই অভিযোগ সম্পর্কে কোনও জেলা নেতাই প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি নন। তবে জেলা কমিটির সহসভাপতি রথীন্দ্রনাথ মাহাতো বলেন, ‘‘আমাদের দলে গণতন্ত্র রয়েছে। মন্তব্য করার অধিকার
রয়েছে সকলের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy