হুলা জ্বালিয়ে, পটকা ফাটিয়ে হাতি তাড়ানোই দস্তুর। এ বার হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে তারস্বরে বাজানো হচ্ছে সাউন্ড বক্স। জঙ্গল থেকে হাতি বেরনোর উপক্রম হলেই শালবনির বিষ্ণুপুর-সহ একাধিক গ্রামে সাউন্ড বক্স বাজানো হচ্ছে। বিকট শব্দে হাতি যদি বাগ মানে। যদিও বিকট শব্দে হাতি দল ভেঙে ছড়িয়ে পড়ছে। ফলে ফসলের ক্ষতির বহরও বাড়ছে। মেদিনীপুরের ডিএফ ও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, ‘‘হাতির তাণ্ডব ঠেকাতে কিছু এলাকায় ডিজে বাজানো হচ্ছে। তবে এর ফলে ক্ষতি আরও বাড়ছে।’’
হাতির দল একাধিক ভাগে দিন কয়েক ধরেই শালবনির বিভিন্ন জঙ্গলে ঘুরছে। হাতি তাণ্ডবে ক্ষতি হচ্ছে ধান, আলু-সহ বিভিন্ন ফসলের। হাতির পাল আসার খবর রটলেই গ্রামের সীমানায় জড়ো হচ্ছেন বাসিন্দারা। নিজের এলাকা পার করেই বাড়ি ফিরে আসছেন গ্রামবাসীরা। পাশের গ্রাম থেকে বাধা পেয়ে ফের পুরনো জায়গায় ফিরছে হাতি। ফলে অভিযানে নেমে হিমশিম খাচ্ছেন হুলা পার্টির লোকেরা।
বিকট শব্দে হাতি গ্রামে ঢুকবে না, এই বিশ্বাস থেকেই বাজানো হচ্ছে মাইকও। শুধু তাই নয়, গ্রামের সীমানায় একাধিক ট্রাক্টর এক জায়গায় নিয়ে এসে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে হেডলাইট। বিষ্ণুপুর গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘ফসল নষ্ট হয়ে গেলে সংসার চলবে কী ভাবে। তাই নানারকম ভাবে হাতি আটকানোর চেষ্টা করতেই হয়। বাধ্য হয়েই আমরা মাইক বাজাচ্ছি।’’ যাত্রা গ্রামের এক বাসিন্দা বলেন, ‘‘হাতি এখন আর হুলার আগুনকে ভয় পায় না। বোমা ফাটিয়েও কাজ হয় না। তাই গ্রামের যে ক’টি ট্রাক্টর আছে সেগুলো গ্রামের বাইরে এনে হেডলাইট জ্বালিয়ে গোল করে মাঠে ঘোরানো হয়। অনেক আলো দেখে যদি হাতি ভয় পায়।’’
মাইক বাজানোর ঠেলায় অভিযানে বিপত্তি বাড়ছে। বন দফতর সূত্রে খবর, মাইকের তীব্র আওয়াজে দল ভেঙে হাতি ছড়িয়ে যাচ্ছে। ভয়ে যেখানে সেখানে ছুটে যাচ্ছে হাতির শাবকেরাও। ফের হাতিগুলিকে এক জায়গায় নিয়ে এসে অভিযান শুরু করতে অনেক সময় লেগে যাচ্ছে।
শালবনি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নেপাল সিংহ বলেন, ‘‘মাইক বাজিয়ে, ট্রাক্টরের আলো জ্বালিয়ে হাতিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা করছে একাংশ গ্রামবাসী। এর ফলে হাতির স্বাভাবিক গতিপথ ব্যাহত হচ্ছে।’’ হুলা পার্টির সদস্য মধূসূসদন মাহাতোও বলেন, ‘‘হাতি সারিবদ্ধ হয়ে লাইন করে যায়। জোরে মাইকের শব্দে ভয় পেয়ে এ দিক ও দিক ছড়িয়ে পড়ছে হাতিরা। এর ফলে ক্ষতির বহর বাড়ছে। এক জায়গায় সব হাতিকে জড়ো করে ফের অভিযান শুরু করতেও সময় লেগে যাচ্ছে।’’
গত রবিবার হাতি তাড়ানোর অভিযানে ছিলেন বিডিও পুষ্পল সরকার। তিনি বলেন, ‘‘হাতি তাড়াতে একসাথে অনেক পাম্পসেটও চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আকাশে হাউই জ্বালিয়ে হাতিকে ভয় দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে। তবে কয়েকটি জায়গায় স্থানীয়দের বাধায় হাতি তাড়ানোর অভিযান ব্যাহত হয়েছে।’’ মেদিনীপুর ডিএফও রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘গ্রামবাসীরা বিভিন্ন শব্দ করে হাতিদের বিরক্ত করছে। হাতির দলে অনেক শাবকও রয়েছে। বিকট শব্দে শাবক হাতিরা ভয় পেয়ে অনেকগুলো দলে ভাগ হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। ক্ষতিও বাড়ছে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘হাতির দল ক্ষিপ্ত হলে অঘটন ঘটতে পারে। হাতি তাড়িয়ে অন্যত্র নিয়ে যেতে গ্রামবাসীর সহযোগিতা চাই।’’
প্রতিরোধ উড়িয়েই এগোচ্ছে বন দফতর
গ্রামবাসীরা প্রতিরোধ করছেন। হুলাপার্টির সদস্যরা মারধরও খাচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতেও হাতির দলকে লালগড়ের দিকে নিয়ে যেতে মঙ্গলবার ফের অভিযান শুরু করল বন দফতর। এ দিন আড়াবাড়ির জঙ্গল থেকে হাতিগুলিকে ঝিটকার জঙ্গলে নিয়ে যাওয়ার জন্য অভিযান শুরু হয়। এখন বেশিরভাগ হাতি আড়াবাড়ি রেঞ্জে রয়েছে। বন দফতর জানিয়েছে, বাগালডোবাতে ৪০-৪৫টি, টুঙ্গিতে ২০-২৫টি হাতি রয়েছে। আর পিরাকাটা রেঞ্জের রঞ্জা বিটে রয়েছে ২০-২৫টি হাতি। এ ছাড়াও আশপাশের জঙ্গলে কোথাও ২টি, আবার কোথাও চারটির দল ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। বন দফতর জানিয়েছে, হাতির দল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলে অভিযান চালানো কঠিন। তার উপর প্রতিরোধ এলে তো কথাই নেই। মেদিনীপুরের ডিএফও রবীন্দ্রনাথ সাহা বলেন, “সবস্তরে বৈঠক করে অভিযান শুরু করা সত্ত্বেও গ্রামবাসীরা বাধা দিচ্ছেন। ফলে, হাতির দলকে সরানো দূর, তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে একাধিক দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে। ক্ষয়ক্ষতি বাড়ছে। স্থানীয় মানুষকে বারবার বুঝিয়েও লাভ হচ্ছে না!” তাও গ্রামবাসীকে ফের বুঝিয়েই অভিযানে সফল হতে চাইছে বন দফতর। লালগড়ের আজনাশুলি গ্রামে বুনো হাতির হামলায় জখম হলেন এক ব্যক্তি। বছর পঁয়তাল্লিশের দিবাকর মাহাতো জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাওয়ার সময় আচমকা একটি বুনো হাতির সামনে পড়ে যান। হাতিটি তাঁকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে মাটিতে আছড়ে দেয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy