সনাতন গোস্বামী
স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই জানিয়েছিল, আবার বিয়ে করবে। কয়েক মাসের মধ্যেই কম বয়েসি স্বামী বিচ্ছিন্না এক তরুণীকে বিয়েও করেছিল। কিন্তু দু’জনের মধ্যে বাধা হয়ে উঠেছিল সেই তরুণীর আগের পক্ষের সাড়ে তিন বছরের মেয়ে। তাই ‘পথের কাঁটা’ দূর করতে সনাতন গোস্বামী (ঠাকুর) তার সৎ–মেয়ের শরীরে একের পর এক সুচ বিঁধে দিয়ে ধীরে ধীরে মেরে ফেলতে চেয়েছিল। নিজেদের হেফাজতে সনাতনকে নিয়ে জেরা করার পরে এমনই দাবি করছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশ।
জেলা পুলিশের এক কর্তা রবিবার বলেন, ‘‘জেরায় শেষ পর্যন্ত শিশুটিকে সুচ ফোঁটানোর কথা সনাতন স্বীকার করেছে। শিশুটি নিজের নয় বলে, তার প্রতি সনাতনের কোনও স্নেহও ছিল না। আমাদের ধারণা, ওই শিশুটিকে নিয়ে বৃন্দাবনে যাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি হচ্ছিল বলেই সুকৌশলে সে শিশুটিকে সরিয়ে দেওয়ার কাজ শুরু করেছিল।’’
সনাতনের সঙ্গে নিজের দুই ছেলের বনিবনা ছিল না। ছেলেরা কর্মসূত্রে বাইরে থাকেন। পুরুলিয়া মফস্সল থানার নদিয়াড়ায় একা থাকত বছর বাষট্টির সনাতন। কীর্তন আর তুকতাক নিয়ে থাকলেও স্ত্রীর মৃত্যুর পরেই সে পরিজনদের জানিয়েছিল, শীঘ্রই বিয়ে করবে। মফস্সল থানারই সতেরো গ্রামের বছর বাইশের এক স্বামী বিচ্ছিন্না তরুণীকে গত দোলের সময় বিয়ে করে সে বাড়ি নিয়ে আসে। কিন্তু ওই তরুণীর একরত্তি মেয়েকে নিয়ে আসেনি। শিশুটি তার দিদিমার কাছে রয়ে যায়।
জেরার পরে পুলিশ দাবি করেছে, সনাতন ঠিক করেছিল, দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীকে নিয়ে সে বৃন্দাবনে গিয়ে জীবনের বাকি দিন কাটাবে। দু’জনেই পূর্ব জীবনের সাথে সম্পর্ক না রাখারও সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেই মতো নিজের পরিবারের সঙ্গেও সম্পর্ক ক্রমশই ছিন্ন করতে শুরু করেছিল সনাতন। এমনিতেই তার ছেলে-বৌমাদের সঙ্গে সনাতনের সম্পর্ক মোটেই ভাল নয়। নদিয়াড়া গ্রামে থাকতে হলে তার কাছ থেকে জমি কিনেই থাকতে হবে বলে সে ছোট ছেলেকে জানিয়েছিল। সেই মতো বাবার কাছ থেকে কিছু জমি কিনেছিল ছোট ছেলে। টাকা জোগাড় হলেই দু’জনের বৃন্দাবনে রওনা দেওয়ার কথা ছিল।
কিন্তু জুন মাসে পড়শিদের চাপে দিদিমা শিশুটিকে সনাতনের সংসারে দিয়ে যাওয়ার পরেই সে দুর্ভাবনায় পড়ে যায়। ওই শিশুকে নিয়ে সে বৃন্দাবনে যেতে রাজি হয়নি। তাই শেষ পর্যন্ত শিশুটির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় একের পর এক সুচ বিঁধতে থাকে সে। পরিকল্পনা মতোই শিশুটি দিন দিন নেতিয়ে পড়ছিল।
কিন্তু শাশুড়ির বাৎসরিক শ্রাদ্ধানুষ্ঠান করতে বাড়িতে আসা সনাতনের পুত্রবধূদের নজরে পড়ে যায় শিশুটি। তাতেই সনাতনের শিশুটিকে সরিয়ে ফেলার চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায়।
ধরা পড়ার পর থেকে সনাতন আগাগোড়া নিজেকে নির্দোষ দাবি করে শিশুটিকে সুচ ফোঁকানোর অভিযোগ অন্যদের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করে আসছিল। কিন্তু পুলিশের লাগাতার জেরায় তার মনোবল ভাঙতে শুরু করেছে। পুলিশ সূত্রে খবর, সনাতনের সেই বেপরোয়া মনোভাব আর নেই। প্রথম ক’দিন লকআপে সে কীর্তন গাইত। খোসমেজাজে তাকে দেখতে পাওয়া যেত। কিন্তু এখন তার গলা থেকে কীর্তন উড়ে গিয়েছে। থম মারা মুখে সারাক্ষণ লকআপে বসে থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy