Advertisement
১৯ মে ২০২৪

অমিত-খুনের পরেই অন্য মামলায় ধৃত তৃণমূল নেতা

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের মাঝে পড়ে বোমায় আহত দুবরাজপুরের ‘টাউনবাবু’ অমিত চক্রবর্তী মারা গিয়েছেন সোমবার। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে কিছুটা তৎপরতা চোখে পড়ল। ১৩ দিন আগে খয়রাশোলে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় বুধবার গ্রেফতার করা হল অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে।

অমিত চক্রবর্তী খুনে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে দুবরাজপুরে বিজেপির মৌনী মিছিল। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

অমিত চক্রবর্তী খুনে অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে দুবরাজপুরে বিজেপির মৌনী মিছিল। বুধবার তোলা নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দুবরাজপুর শেষ আপডেট: ৩১ জুলাই ২০১৪ ০০:৪০
Share: Save:

সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের মাঝে পড়ে বোমায় আহত দুবরাজপুরের ‘টাউনবাবু’ অমিত চক্রবর্তী মারা গিয়েছেন সোমবার। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই বীরভূম জেলা পুলিশের তরফে কিছুটা তৎপরতা চোখে পড়ল। ১৩ দিন আগে খয়রাশোলে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় বুধবার গ্রেফতার করা হল অন্যতম অভিযুক্ত তৃণমূল নেতাকে।

স্বাভাবিক ভাবেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে, এই ১৩ দিন তা হলে পুলিশ কেন হাত গুটিয়ে বসেছিল? কেনই বা এখনও অমিতবাবুর উপরে হামলায় অভিযুক্ত তৃণমূল নেতা শেখ আলিমকে পুলিশ এখনও ধরতে পারল না? জেলার নিচুতলার পুলিশকর্মীদের একাংশের ক্ষোভ, এ ক্ষেত্রে যে সক্রিয়তা পুলিশকর্তারা দেখালেন, তা তো নিহত সাব-ইনস্পেক্টরের উপরে হামলার ঘটনার ক্ষেত্রেও দেখাতে পারতেন। অমিত চক্রবর্তী খুনে মূল অভিযুক্তদের ধরার দাবিতে এ দিন বীরভূমের বিভিন্ন জায়গায় মৌনী মিছিল করে বিজেপি। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের বক্তব্য, “জেলা জুড়ে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে যে ভাবে হৈচৈ হচ্ছে, তাতে একটু সক্রিয়তা দেখানো দরকার ছিল। সেই সক্রিয়তা প্রমাণ করতেই হয়তো পুলিশ ১৩ দিন আগের একটি ঘটনায় শাসক দলের এক নেতাকে ধরা হল।”

গত ১৯ জুলাই খয়রাশোলের লোকপুর গ্রামে পুকুরে মাছ ধরাকে ঘিরে হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েছিল শাসকদলের দুই গোষ্ঠী। সেই গণ্ডগোলের রেশ গড়ায় স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়িতে। লোকপুর ফাঁড়ি তছনছ করেই ক্ষান্ত হয়নি তৃণমূলের একটি গোষ্ঠীর সমর্থকেরা। মারধর করা হয়েছিল ফাঁড়ির এক আধিকারিককেও। ওই ঘটনায় তৃণমূলের ২৯ জন নেতা-কর্মীর নামে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, সরকারি কর্মীর কাজে বাধা দান ও তাঁদের মারধর করার অভিযোগ আনে পুলিশই। ঘটনার রাতে কয়েক জনকে গ্রেফতার করলেও প্রভাবশালী কাউকেই এত দিন পুলিশ ধরেনি। বুধবার দুপুরে বোলপুরের একটি হোটেলে খাওয়ার সময় আভিযুক্তদের অন্যতম, তৃণমূলের জেলা কমিটির সদস্য উজ্জ্বল হক কাদেরীকে ধরা হয়। এই খবর ছড়াতেই খয়রাশোলে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ ছড়ায়। বাবুইজোড়-সিউড়ি রাস্তা অবরোধ এবং স্থানীয় বাজার বন্ধ করে বিক্ষোভ দেখান ধৃত তৃণমূল নেতার অনুগামী ও পরিবারের লোকজন।

ফাঁড়িতে হামলার ঘটনায় তৃণমূল নেতাকে গ্রেফতারের
প্রতিবাদে অবরোধ বাবুইজোড়-সিউড়ি রাস্তায়। —নিজস্ব চিত্র

খয়রাশোলের ঘটনায় অবশ্য তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও প্রকাশ্যে এসেছে। দলের উঁচুতলার নির্দেশেই উজ্জ্বল হক কাদেরীকে ধরা হয়েছে বলে দাবি স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীদের। ধৃত নেতার বোন তথা বড়রা পঞ্চায়েতের তৃণমূল সমর্থিত নির্দল সদস্য কেনিজ রাসেদের অভিযোগ, “পুলিশ মিথ্যা ঘটনায় দাদাকে ফাঁসিয়েছে। দলের নেতাদের নির্দেশেই তারা দাদাকে ধরেছে। যদি গ্রেফতার করতেই হয় তা হলে পুলিশের খাতায় অভিযুক্ত সকলকে এখনই ধরতে হবে। যতক্ষণ না সেটা হচ্ছে আন্দোলন চলবে।” জেলা পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া অবশ্য বলেন, “ওই নেতা অভিযুক্ত ছিলেন বলেই তাঁকে ধরেছে পুলিশ। ধৃতের বাড়ির লোকেদের ক্ষোভ থাকতে পারে। সেটা কোনও বিষয় নয়।”

শাসক দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে কি ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না? এ প্রশ্নের জবাবে তৃণমূলের বীরভূম জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “পুলিশ তাদের কাজ করেছে। দল কোনও হস্তক্ষেপ করবে না।” তা হলে দুবরাজপুরের ঘটনায় কেন এখনও শেখ আলিম অধরা? অনুব্রতবাবুর সংক্ষিপ্ত জবাব, “ওটাও পুলিশের ব্যাপার!”

অথচ ঘটনা হল, খয়রাশোল ও দুবরাজপুরদু’টি ক্ষেত্রেই পুলিশ আক্রান্ত হয়েছে। দু’টি ঘটনাতেই তারা স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) এফআইআর দায়ের করেছে। তা হলে দু’ই ঘটনায় পুলিশের দুই ভূমিকা কেন? জেলার এক শীর্ষ পুলিশকর্তার অবশ্য আশ্বাস, “দুবরাজপুরের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা নেওয়ায় অন্যথা হবে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

tmc leader arrested khairasol
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE