একই রাস্তা তৈরির জন্য দু’দুটি নির্দেশিকা (সিডিউল) জারি হয়েছে। প্রধানের সই করা ওই নির্দেশিকা দু’টিতে কাজের বরাদ্দ এক থাকলেও দু’রকম মাপ উল্লেখ ছিল। সেটা প্রকাশ্য আসতেই বিতর্ক শুরু হয়েছে। প্রশ্ন উঠছে, কোন নির্দেশিকাটি আসল? প্রধানের সই আসল না নকল? কী ভাবে অন্যায় হতে যাচ্ছিল? কেন একই কাজে দু’রকম মাপ হবে? তাই নিয়েই বিবাদের জেরে থমকে গেল ১০০ দিন প্রকল্পের মাধ্যমে ঢালাই রাস্তা তৈরির কাজ। সোমবার থেকে থমকে থাকা ওই কাজ কখন শুরু হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে খয়রাশোলের লোকপুর পঞ্চায়েতর লোকপুর গ্রামের। লোকপুরের তৃণমূল প্রধান বন্দনা চৌধুরী অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর সই জাল করা হয়েছে। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসার পর প্রশাসন তদন্ত শুরু করেছে। তবে এর মধ্যে তৃণমূলের দ্বন্দ্বের ছায়া দেখছেন অনেকে।
খয়রাশোলের বিডিও মহম্মদ ইসরার বলছেন, “প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে তদন্ত শেষ না করে কিছু বলা ঠিক হবে না।” ব্লক প্রশাসন সূত্রে খবর, ঘটনার দায় কেন নেবে না প্রধান, জানতে ইতিমধ্যেই লোকপুরের তৃণমূল প্রধানকে শো-কজ করেছেন বিডিও। অন্য দিকে, যে ঠিকাদার সংস্থাকে এই কাজের বরাত দেওয়া হয়েছে তাকেও শো-কজ করেছেন প্রধান।
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ১০০ দিনের কাজ প্রকল্পে ২০১৩-১৪ আর্থিক বর্ষে মঞ্জুর হওয়া গ্রামেরই একটি কাঁচা রাস্তা (ধর্মরাজ মন্দির থেকে ২৬৮ মিটার পর্যন্ত) ঢালাই করার কাজ শুরু হতে যাচ্ছিল গত সোমবার। সেই কাজ দেখভালের জন্য তৈরি হয়েছিল বেনিফিসিয়ারি কমিটি। অভিযোগ, ওই কাজে বরাত পাওয়া ঠিকাদার বেনিফিসিয়ারি কমিটির কাছে যে নির্দেশিকা দেখিয়েছে তাতে ৫ লক্ষ টাকা বরাদ্দের ওই রাস্তার মাপ উল্লেখ করা ছিল ২০০ মিটার। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যে বিষয়টি জানাজানি হয় মূল যে নির্দেশিকা তাতে রাস্তার মাপ উল্লেখ রয়েছে রয়েছে ২৬৮ মিটার। এর পরই শুরু হয় বচসা। বন্ধ করে দেওয়া হয় কাজ। ঠিকাদারের সঙ্গে প্রাধানের যোগসাজোসে এমন ঘটনা ঘটেছিল দাবি করে খয়রাশোলের যুগ্ম বিডিও-র কাছে এ ব্যাপারে লিখিত ভাবে জানান স্থানীয় বাসিন্দা তথা তৃণমূল নেতা দীপক শীল। লোকপপুরের তৃণমূল প্রধান অবশ্য লিখিত ভাবে খয়রাশোলের যুগ্ম বিডিওকে জানিয়েছেন, ওই ঠিকাদার তাঁর সই জাল করে এমনটা করেছেন। প্রধান বন্দনা চৌধুরী বলেন, “ইতিমধ্যেই ওই ঠিকাদারকে শো-কজ করা হয়েছে।” অন্য দিকে, ওই কাজের বরাত পাওয়া ঠিকাদারের শেখ পিয়ারুলের দাবি, “আমি কোনও সই নকল করিনি। আমার কাছে আসল নির্দেশিকাটি রয়েছে। ভুয়ো নির্দেশিকা সম্পর্কে আমি কিছু জানি না।” তিনি আরও দাবি করেছেন, “রাস্তা চওড়া করতে হবে বলে স্থানীয় বাসীন্দারা দাবি করায় ২২০ মিটার খুঁড়েছিলাম। এই বিষয়টি অভিযোগকারী দিপক শীল জানতেন। উনি আমার সঙ্গে রফায় বসতে চেয়েছিলেন। সেটাতে রজি না হওয়ায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।” তা হলে, প্রধান শো-কজ করলেন কেন? এর অবশ্য কোনও উত্তর দেননি পিয়ারুলবাবু।
বেনিফিসিয়ারি কমিটিতে নাম থাকা দু’জন স্থানীয় বাসিন্দা অবশ্য দু’রকম কথা বলছেন। অপূর্ব দে বলছেন, “ঠিকাদার আমাকে যে নির্দেশিকা দিয়েছিল সেটাতে ২৬৮ মিটার রাস্তার উল্লেখ ছিল।” আর প্রেমানন্দ চৌধুরী বলছেন, “মোটই তা নয়। ঠিকাদারের কাছেই মিলেছিল ওই ২০০ মিটার রাস্তার উল্লেখ থাকা নকল নির্দেশিকাটি।” তবে বিষয় যাই থাক খয়রাশেলের দীর্ঘ দিনের অশোক ঘোষ ও অশোক মুখোপাধ্যায়ের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ছায়া এর মধ্যেও রয়েছে বলে জানাচ্ছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অধিকাংশ গ্রামবাসীই। কারণ, ১১ আসনের ৮টিতে তৃণমূল জয়ী হলেও ৪ জন তৃণমূল সদস্য বিরোধী (বিক্ষুব্ধ) আসনে রয়েছে। দীপক শীল পঞ্চায়েত সদস্য না হলেও মুখোপাধ্যায় গোষ্ঠীর স্থানীয় নেতা। ফলে সংঘাত অনিবার্য। দীপক শীল বলছেন, “পঞ্চায়েতের যোগ যদি ঘটনায় না থাকে, তা হলে যে ঠিকাদার প্রধানের সই নকল করলেন সেই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শুধু মাত্র শো-কজে আটকে না থেকে তাঁর বিরুদ্ধে কেন পুলিশের কাছে লিখিত আভিযোগ করলেন না প্রধান?” বিরোধী আসনে বসা তৃণমূল সদস্যদের মধ্যে দু’জন শেখ বুদ্রাইল ও শ্রীদাম বাউড়িরা দীপকবাবুর বক্তব্যকেই সমর্থন করছেন। তবে ঘটনার মধ্যে কতটা রাজনীতি আর কতটা দুর্নীতি সেটা নিয়ে বিভ্রান্ত প্রশাসনও। সাধারণ মানুষ চাইছেন, যাই হোক দ্বন্দ্বের জেরে এলাকা উন্নয়নের কাজ যেন না থমকে যায়। রাস্তাটি ঢালাই হোক এবং যথার্থ ভাবেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy