Advertisement
১৭ মে ২০২৪
পাড়ুইয়ে খুনে গ্রেফতার চার বিজেপি কর্মী

নিহত কর্মী কার, তরজা শুরু দু’দলে

দু’মাস আগেই পুরনো দল তৃণমূল ছেড়ে প্রকাশ্য মঞ্চে বিজেপি-র পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সোমবার রাতে নিহত হওয়ার পরে পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকার সেই নেতা রবাই চৌধুরীকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করল তৃণমূল-বিজেপি, দু’দলই। আর তার পরেই ওই খুনের ঘটনায় দু’দলই পরস্পরের দিকে আঙুলও তুলতে শুরু করেছে। সোমবার রাতে সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদমাধ্যমকে নিহতের ছেলে আজিজুল চৌধুরী বাবাকে বিজেপি কর্মী বলেই দাবি করেছিলেন।

ডিসেম্বরে সাত্তোরে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন রবাই চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

ডিসেম্বরে সাত্তোরে বিজেপি-তে যোগ দিচ্ছেন রবাই চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাড়ুই ও সিউড়ি শেষ আপডেট: ১১ মার্চ ২০১৫ ০১:৩৩
Share: Save:

দু’মাস আগেই পুরনো দল তৃণমূল ছেড়ে প্রকাশ্য মঞ্চে বিজেপি-র পতাকা হাতে তুলে নিয়েছিলেন। সোমবার রাতে নিহত হওয়ার পরে পাড়ুইয়ের সাত্তোর এলাকার সেই নেতা রবাই চৌধুরীকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করল তৃণমূল-বিজেপি, দু’দলই। আর তার পরেই ওই খুনের ঘটনায় দু’দলই পরস্পরের দিকে আঙুলও তুলতে শুরু করেছে।

সোমবার রাতে সিউড়ি সদর হাসপাতাল চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদমাধ্যমকে নিহতের ছেলে আজিজুল চৌধুরী বাবাকে বিজেপি কর্মী বলেই দাবি করেছিলেন। যদিও পরের দিনই তিনি বাবার খুনের ঘটনায় পাড়ুইয়ের বিজেপি নেতা নিমাই দাস-সহ ১৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন। তারই ভিত্তিতে পুলিশ মঙ্গলবার চার ব্যক্তিকে গ্রেফতারও করেছে। দুপুরে সিউড়িতে দলের পার্টি অফিসে আজিজুলের সঙ্গে দেখা করেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়। সেখানে পার্থ নিহতের দেহে মাল্যদান করে শেষশ্রদ্ধাও জানান। নিহতের পরিবারের পাশে দল থাকবে বলে আশ্বাসও দেন। পরে সাংবাদিকদের পার্থবাবু বলেন, “বিজেপি বীরভূম-সহ বেশ কিছু জেলায় খুন জখমের রাজনীতি শুরু করেছে। রবাই চৌধুরী খুন তারই প্রমাণ।”

বিজেপি অবশ্য পার্থর অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে। দলের জেলা সভাপতি দুধকুমার মণ্ডলের পাল্টা অভিযোগ, “ওই ঘটনার সঙ্গে দলের কেউ যুক্ত নয়। তৃণমূলই রবাইকে খুন করেছে। রবাই ক’দিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে আমাদের দলে যোগ দিয়েছিল। ওই মঞ্চ থেকেই রবাই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হুঙ্কার দিয়েছিল। সেই আক্রোশ থেকেই পরিকল্পিত ভাবে তৃণমূল ওঁকে খুন করেছে।” তাঁর দাবি, “রবাইকে খুন করে ওঁর পরিবারকে ভয় দেখানো হচ্ছে। চাপ দিয়ে রবাইয়ের ছেলেকে দিয়ে আমাদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করিয়েছে।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধ্যায় নমাজ পড়ে বাড়ি ফিরছিলেন পাড়ুই থানার সালন গ্রামের বাসিন্দা রবাই চৌধুরী (৪৩)। বাড়ি বাড়িতে ঢোকার মুখে তাঁকে বোমা মারা হয়। তিনি পালিয়ে একটি ক্যানালের ধারে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাঁকে লক্ষ করে ফের বোমা মারা হয়। ঘণ্টা দুয়েক পরে বিশাল পুলিশ বাহিনী গ্রামে গিয়ে মৃতদেহটি উদ্ধার করে। এ দিন সকালে গ্রামের পশ্চিম পাড়ায় গিয়ে দেখা গেল বোমার সুতলি এবং পোড়া কাগজ এ দিক ওদিকে পড়ে রয়েছে। রাস্তার ধারে জমির পাশে একটি বাঁশঝাড়ে নিহতের ছেঁড়া এবং রক্তমাখা জামার অংশ লেগে রয়েছে। গোটা গ্রামে চাপা উত্তেজনা। গ্রামজুড়ে চলছে পুলিশ টহলদারি। ধরপাকড়ের ভয়ে গোটা গ্রাম কার্যত পুরুষ শূন্য। নিহতের বাড়ির অদূরেই বসেছে অস্থায়ী পুলিশ পিকেট। বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ঘটনার আকস্মিকতায় কার্যত বাকরুদ্ধ নিহতের স্ত্রী তহমিনা বিবি। বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে শ্বশুরবাড়ি থেকে ছুটে এসেছে মেয়ে সুহেমিনা বিবি। তিনি বারবার জ্ঞান হারাচ্ছেন। নিহতের দিদি ফেরেজা বিবির আবার দাবি করলেন, “জমিজমা সংক্রান্ত বিষয় সম্পত্তি নিয়ে তুতোভাই শুকুর এবং মোহরের সঙ্গে রবাইয়ের দীর্ঘ দিনের বিবাদ। তৃণমূল করার জন্য এবং পারিবারিক বিবাদের জেরেই রবাইকে খুন করা হয়েছে।” এ দিন অবশ্য গ্রামে নিহতের ওই দুই ভাইয়ের পরিবারের সঙ্গে বহু চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা যায়নি।

ঘটনা হল, সাত্তোর পঞ্চায়েত এলাকায় রবাই তৃণমূলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। কিন্তু, গত ডিসেম্বর মাসে সাত্তোর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিজেপির একটি জনসভায় বিজেপি নেতা জয়প্রকাশ মজুমদারের হাত থেকে পতাকা নিয়ে তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি-তে যোগ দেন। তৃণমূলের দাবি, ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি ফের দলে যোগ দেন। স্থানীয় একটি সূত্রের দাবি, বারবার এই দলবদল নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপি, উভয় শিবিরেই রবাইকে নিয়ে চাপা উত্তেজনা ছিল। তার জেরে দু’দলেরই একাংশের কাছে রবাই বিরাগভাজন হয়ে উঠেছিলেন বলে ওই সূত্রের দাবি। তৃণমূলের সাত্তোর অঞ্চল সম্পাদক শেখ মুস্তফার যদিও অভিযোগ, “বিজেপির দিকে ভিড়েছিল রবাই। কিন্তু, ভুল বুঝতে পেরে কিছু দিন আগেই দলে ফিরে এসেছিল। তার বদলা নিতেই বিজেপি এবং তাদের আশ্রিত দুষ্কৃতীরা রবাইকে খুন করেছে।”

নিহতের ছেলের পাশে পার্থ চট্টোপাধ্যায়। —নিজস্ব চিত্র।

এ দিকে, তৃণমূলের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলের আবার দাবি, “রবাই চৌধুরী বরাবর তৃণমূল করতেন। যখন কংগ্রেস করেছি, তখন থেকেই তিনি আমাদের সঙ্গে আছেন। আবার তৃণমূল দলের জন্ম থেকেও তিনি আমাদের সঙ্গে ছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “সাত্তোর এলাকায় অশান্তি গণ্ডগোল জিইয়ে রাখতেই বিজেপি ওঁকে খুন করেছে।” কিন্তু, রবাই চৌধুরী তো প্রকাশ্য মঞ্চে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছিলেন? অনুব্রতর জবাব, “এই তথ্য ঠিক নয়। এটা আনন্দবাজারের দাবি।” দুধকুমারের অবশ্য দাবি, আসন্ন পুরভোটের আগে জেলায় হারানো জমি ফেরত পেতেই রবাইকে খুন করে তৃণমূল বিজেপি-কে বদনাম করার চক্রান্ত করছে।

অন্য দিকে, নিহতের ছেলের অভিযোগের ভিত্তিতে এ দিন সকালেই পুলিশ সালোন গ্রাম থেকে শেখ হাসিব, মমতাজ হোসেন, শেখ রবিউল এবং শেখ বসিরকে গ্রেফতার করেছে। প্রত্যেকেই এলাকায় বিজেপি কর্মী-সমর্থক বলে পরিচিত। এ দিনই সিউড়ির মুখ্য বিচার বিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট ইন্দ্রনীল চট্টোপাধ্যায় জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে ধৃতদের পাঁচ দিনের পুলিশি হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE