জলের দাবিতে সিউড়ি-বোলপুর রাস্তায় অবরোধ। বুধবার সিউড়ি পুলিশ লাইনে ছবিটি তুলেছেন তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়।
জলের দাবিতে পথ অবরোধ করলেন পুলিশ আবাসিকেরা। কয়েক মিনিটের জন্য যান চলাচল থমকে গেল সিউড়ি চাঁদমারি মাঠের পুলিশ লাইনের মেন গেটের সামনে। সিউড়ি-বোলপুর রাস্তায় ওই অবরোধ হয় বুধবার সকালে। অবরোধ সামিল হওয়া পুলিশ কর্মীদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, বেশ কিছুদিন ধরে জল নিয়মিত মিলছে না। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলেও লাভ হয়নি। তাই কর্তৃৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য তাঁরা কয়েক মিনিট প্রতীকী অবরোধ করেন। অবরোধের আগে তাঁরা আর আই অফিসে বিক্ষোভও দেখান।
পুলিশ আবসিক পরিবারের সদস্যরা জানান, প্রতি বছর গরমের সময় জল নিয়ে চরম সমস্যা দেখা দেয়। এ বার সেই সমস্যা চরম মাত্রাও ছাড়িয়ে গিয়েছে। একে এই গরম, তার উপর ঠিকমতো জল পাওয়া যাচ্ছে না। এক মাসের বেশি সময় ধরে দু’বেলা সামান্য করে জল দেওয়া হচ্ছে। দিন সাতেক ধরে তাও পাওয়া যাচ্ছে না। জল সরবরাহ একরকম বন্ধ বললেই চলে। ফলে আবসিকদের জল-সমস্যা চরম আকার নিয়েছে। তাঁদের প্রশ্ন, “এ ভাবে বাঁচা যায়? তাই বাধ্য হয়ে প্রতিবাদের রাস্তা বেছে নিতে হয়েছে।” তাঁদের কথায়, গত ক’দিন থেকে জল না পেয়ে এ দিন সকালে আবাসিকের কিছু মহিলা ক্ষোভে ফেটে পড়েন। একযোগে প্রথমে আর আই অফিসে তাঁরা যান। কিন্তু আর আই এর কাছ থেকে জলের ব্যাপারে তেমন কোনও আশ্বাস পাওয়া যায়নি বলে তাঁদের দাবি। প্রতীকী প্রতিবাদ জানাতে ৫-৭ মিনিট সিউড়ি-বোলপুর পথ অবরোধ করা হয়। ডিএসপি (হেড কোয়াটার) পার্থ ঘোষের হস্তক্ষেপে অবশ্য পরিস্থিতি শান্ত হয়।
পুলিশ ও আবাসন সূত্রে জানা যায়, চাঁদমারি মাঠের যে আবসিকরা এ দিন বিক্ষোভ দেখিয়েছেন, তাঁরা সাধারণত কনেস্টবল ও এএসআই-দের পরিবারের সদস্য। সেখানে আটটি ভবনে ৯৬ জন কনেস্টবলের পরিবার এবং একটি ভবনে চারজন এএসআই-র পরিবার বাস করেন। তবে বেহাল দশার কারণে কয়েকটি কোয়ার্টারে কেউ থাকেন না। এতগুলি পরিবারের জন্য জলের উৎস বলতে একটি সাব মার্সিবল পাম্প ও দু’টি কুয়ো রয়েছে। প্রতি বার গরম পড়তেই কুয়োর জল শুকিয়ে যায়। তাই এই সময় সম্বল বলতে ওই একটি মাত্র সাবমার্সিবল। স্বাভাবিক ভাবেই জল কম দেওয়া হয়। এ বারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এরই মধ্যে সাব মার্সিবলের মোটর খারাপ হয়ে যায়। ফলে জলের সমস্যা চরম আকার নেয়। এমনিতেই গরমের সময় জলের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এখানে গরমেই জল পাওয়া যায় না। আবাসিকরা আরও জানান, বছর পাঁচ-ছয় আগে পুরসভা থেকেও জল দেওয়া হত। কিন্তু অজানা কারণে এখন তা বন্ধ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, জলের উৎস পুলিশের নিজস্ব হলেও তা দেখাশোনা এবং জল সরবরাহের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের ইলেকট্রিক্যাল বিভাগের। ওই দফতরের সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার সৌমিত্র মণ্ডল বলেন, “একেবারে জল সরবরাহ বন্ধ ছিল এই অভিযোগ ঠিক নয়। গত শনিবার আমরা খবর পাই যে, ওই আবাসনের জলের পাম্পের মোটর খারাপ হয়ে গিয়েছে। তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সোমবারের মধ্যে তা ঠিক করে দেওয়া হয়েছে। তবে, ওই সময়ের মধ্যেও কুয়ো থেকে যে সামান্য জল পাওয়া গিয়েছে, তা সরবরাহ করা হয়েছে।’’ তবে তাঁর মতে, ওখানে প্রয়োজনের তুলনায় যা জল দেওয়া হয়, তা সত্যিই কম। জলের চাহিদা পূরণের জন্য আরও উৎসের প্রয়োজন। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ পাল বলেন, “পুলিশ আবাসিকদের জল সমস্যা সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ওই পুলিশ আবাসনটি যে ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে, ঘটনা চক্রে তার কাউন্সিলর হলেন সিউড়ির পুরপ্রধান। পুরপ্রধান উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় বলেন, “ওখানে পুলিশের নিজস্ব জলের ব্যবস্থা আছে। দু’দিন থেকে যে জল নেই, সে বিষয়ে আমাকে কেউ কিছু জানায়নি। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আনন্দ রায় এ দিন দুপুরেই আমাকে জলের ব্যাপারে ফোন করেছিলেন।” তাঁর আশ্বাস, চাঁদমারি মাঠে জলাধার থেকে যে পাইপ লাইন গিয়েছে, সেই পাইপ লাইন দু’-এক দিনের মধ্যে ওই আবাসনে জুড়ে দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy