সাংবাদিক বৈঠকে শিবরাজ সিংহ চৌহান। ছবি: বিজেপির টুইটার হ্যান্ডল থেকে সংগৃহীত।
শিয়রে লোকসভা নির্বাচন। তার আগে উত্তাল বাংলা। সারদা-কাণ্ডে কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে টানাপড়েন চলছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের। নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকার খামোখা সিবিআই ‘লেলিয়ে দিচ্ছে’ বলে বিরোধীদের অভিযোগ। তবে এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনও যোগ নেই বলে এ বার দাবি করলেন বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা তথা মধ্যপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান।
বৃহস্পতিবার কলকাতায় রাজ্য বিজেপির দফতরে বসে শিবরাজের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘গরিব মানুষের টাকা ডুবেছে। তা নিয়ে চিন্তা নেই মমতাদির। রাজীব কুমারকে নিয়ে বেশি তত্পর তিনি।’’সেই সঙ্গে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে গলা টিপে হত্যা করার অভিযোগও তুলেছেন শিবরাজ।
নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ এবং যোগী আদিত্যনাথের পর, ‘পদ্ম ফোটানো’র লক্ষ্যে এ রাজ্যে এসেছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। খড়্গপুর ও বহরমপুরে সভা করার কথা ছিল তাঁর। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে হেলিকপ্টার নামানোর অনুমতি না দিলে, বুধবার সড়কপথে শুধুমাত্র খড়্গপুরে সভা করেই ফিরতে হয় তাঁকে। কলকাতায় ফিরে তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন শিবরাজ। বৃহস্পতিবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ শীর্ষ দলীয় নেতাদের নিয়ে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘সরকার চালানো ছাড়া বাকি সবকিছুই করছেন মমতাদিদি। বিজেপিকে সভা করতে দিচ্ছেন না। হেলিকপ্টার নামতে দিচ্ছেন না অমিত শাহ ও যোগীজির। খড়্গপুর ও বহরমপুর, দু’জায়গায় সভা করার কথা ছিল আমার। কিন্তু কপ্টার নামানোর অনুমতি মেলেনি। সড়কপথে শুধুমাত্র খড়্গপুর যেতে পেরেছি। কিন্তু যতই বাধা দিন, এ ভাবে আমাদের আটকানো যাবে না। কপ্টার নামতে না দিলে গাড়ি নিয়ে বেরোব। সেটাও না দিলে পায়ে হেঁটে পৌঁছে যাব সাধারণ মানুষের কাছে।”
আরও পড়ুন: শিলংয়ে রাজীব কুমারের মুখোমুখি হবেন সিবিআইয়ের বাছাই ১০ অফিসার
তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় সন্ত্রাস ছড়াচ্ছে বলেও এ দিন অভিযোগ করেন শিবরাজ। তিনি বলেন, ‘‘বাংলার সংস্কৃতি নিয়ে একসময় গর্ব বোধ হত। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখানে সন্ত্রাস ঢুকিয়েছেন। গলা টিপে গণতন্ত্রকে হত্যার মতো মহাপাপ করেছেন। এই মুহূর্তে হিংসায় ডুবে রয়েছে বাংলা। ৪৪টিরও বেশি বিজেপির অফিসে ভাঙচুর চালানো হয়েছে। শুধমাত্র বিজেপি করার অপরাধে পুরুলিয়ায় গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে ত্রিলোচন মাহাতোকে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, বিজেপি প্রার্থীরা জিতেছেন বলে অনেক জায়গায় বোর্ড পর্যন্ত গঠন করতে দেওয়া হয়নি। প্রশ্ন তুলেছেন, এটাই কি গণতন্ত্র?
শিবরাজ এ দিন অভিযোগ করেন অন্য রাজ্যের তুলনায় বাংলায় হিংসার মাত্রা অনেক বেশি। তাঁ কথায়, ‘‘এ রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। অথচ গতবছরই বিধানসভা নির্বাচন হয়েছে মধ্যপ্রদেশে। সেখানে একজনও হতাহত হননি। গণতন্ত্র রয়েছে বলেই মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় আসতে পেরেছে কংগ্রেস। মানুষ সব দেখছেন। বাংলায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য মানুষই বিজেপিকে ক্ষমতায় আনবেন।”
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে সারদা মামলায় তদন্তে বাধা দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছেন শিবরাজ। তাঁর দাবি, ‘‘গরিব মানুষের কোটি কোটি টাকা ডুবে গেল। হতাশায় কতজন আত্মহত্যা করলেন। অথচ তদন্ত নিয়ে কোনও হেলদোল নেই বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর। দরিদ্র মানুষের জন্য একেবারেই চিন্তিত নন তিনি। বরং কমিশনার রাজীব কুমারকে নিয়েই যত মাথাব্যথা তাঁর। যে অফিসার তদন্তে সহযোগিতা করেননি, তাঁকেই আগলে রাখছেন মমতাদিদি। জিজ্ঞাসাবাদ করলে সত্যিটা যদি বেরিয়ে আসে? সেই ভয়েই এত হম্বিতম্বি করছেন উনি। নইলে কখনও পুলিশ কমিশনারকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ধর্নায় বসতে দেখেছেন? আমিও মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। কোনওকালে এমনটা হতে দেখিনি।”
आज ममता दीदी के राज में एक तरफ गरीबी है, दूसरी तरफ हिंसा है और तीसरी तरफ सिंडिकेट्स की अराजकता है। बंगाल जिसकी संस्कृति पर हम गर्व करते हैं, उसकी छवि आपने धूमिल कर दी है। सारा देश को आज बंगाल के शारदा चिटफंड घोटाले को जानता है।@BJP4India @BJP4Bengal @DilipGhoshBJP pic.twitter.com/ZMOYYdIgHy
— Shivraj Singh Chouhan (@ChouhanShivraj) February 7, 2019
সাংবাদিক বৈঠকে শিবরাজ সিংহ চৌহান
আরও পড়ুন: রেপো রেট কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, কমতে পারে গৃহঋণে সুদের হার
সিবিআইয়ের সঙ্গে টানাপড়েনে ইতিমধ্যেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে দাঁড়িয়েছেন বিজেপি বিরোধী দলের নেতারা। মোদী সরকারের বিরুদ্ধে স্বৈরাচারের অভিযোগও তুলছেন তাঁরা। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে সিবিআইকে অপব্যবহার হচ্ছে, ইচ্ছাকৃতভাবে সারদা মামলায় রাজীব কুমার এবং ডিএলএফ মামলায় রবার্ট বঢরাকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে তাঁদের দাবি। কিন্তু যাবতীয় অভিযোগ খারিজ করেছেন শিবরাজ। তাঁর মতে, ‘‘তদন্ত তো চলছিলই। এতদিনে তাতেগতি এসেছে। তাই বলে লোকসভা নির্বাচনের সঙ্গে এর যোগ রয়েছে, এমনটা ভাবা ভুল। নরেন্দ্র মোদীকে হটাতে যাঁরা একজোট হয়েছেন, তাঁরা সকলেই দুর্নীতিতে যুক্ত। নরেন্দ্র মোদীর জনপ্রিয়তায় ভয় পেয়েছেন। দায়ে পড়ে তাই একে অপরের হাত ধরেছেন। এটা কোনও গঠবন্ধন নয় ঠগবন্ধন।’’
শিবরাজ এ দিন রাহুল গাঁধীকেও এক হাত নিয়েছেন। তাঁর দাবি, মধ্যপ্রদেশে ক্ষমতায় এলে কৃষিঋণ মকুব এবং কৃষি অনুদানের ঘোষণা করেছিলেন কংগ্রেস সভাপতি। না হলে মুখ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেবেন বলেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু আজও তার বাস্তবায়ন হয়নি বলেই অভিযোগ শিবরাজের।তাঁর কথায়, ‘‘কই মুখ্যমন্ত্রীকে তো সরাননি রাহুল! ওদের নিজেদের মধ্যেও কোনও একতা নেই। তাই সিবিআই তদন্ত নিয়ে রাহুল যখন মমতার পাশে দাঁড়াচ্ছেন, বাংলায় তাঁর দলেরই নেতা অন্য কথা বলছেন। নিজেদের স্বার্থে একজোট হয়েছে এরা। বিজেপিকে কিছু করতে হবে না, আসন্ন নির্বাচনে মানুষই জবাব দেবেন।’’ শিবরাজ এ দিন দাবি করেন, ‘মানুষের আশীর্বাদে’ তাঁরা লোকসভা নির্বাচনে ৪০০-র বেশি আসন পাবেন। তাঁর কথায়, ‘‘ফের প্রধানমন্ত্রী হবেন নরেন্দ্র মোদী। তার পর বাংলাতেও সরকার গড়ব আমরা।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy