Advertisement
২১ মে ২০২৪
Mamata Banerjee

সুর বদল, জনস্বার্থেই জমি নিতে রাজি মমতা

‘জনস্বার্থ’-এ জমি অধিগ্রহণে সায় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জগন্নাথ চট্টোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৩:৫৫
Share: Save:

সাত বছর আগে, ২০১১ সালে ক্ষমতায় এসে যে-কোনও ধরনের জমি অধিগ্রহণে ‘না’ বলে দিয়েছিলেন তিনি। এত দিন পরে ‘জনস্বার্থ’-এ জমি অধিগ্রহণে সায় দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

জমি অধিগ্রহণে রাজ্য সরকারের এই অবস্থান বদলের মধ্যে অবশ্য অন্য একটি স্তরও ছিল। সেটা হল অধিগ্রহণের বদলে সরাসরি জমি কিনে নেওয়া। ২০১৬ সালে ফের কুর্সিতে বসে দু’-একটি প্রকল্পে জমি নিতে রাজি হন মমতা। দীর্ঘদিন আটকে থাকা প্রকল্পগুলির জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শেষ করতে বলেন তিনি। সেই কাজে কোথাও তেমন গোলমাল হয়নি। এ বার নানা উন্নয়ন প্রকল্পে জনস্বার্থে জমি অধিগ্রহণে আর ‘না’ করছেন না মুখ্যমন্ত্রী।

নবান্নের পরিবর্তিত অবস্থান অনুসারে কেন্দ্রের ভারতমালা প্রকল্পে ৪৩টি রাস্তা, গেল-এর গ্যাস পাইপলাইন এবং অম়ৃতসর-ডানকুনি রেলের পণ্য করিডরের জন্য জমি অধিগ্রহণের কাজ শুরু হয়েছে জোর কদমে। তিনটি প্রকল্প মিলিয়ে কয়েক হাজার একর জমি নিতে হতে পারে। তার মাপজোক শুরু হয়েছে।

জমি নেওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্যমন্ত্রীর শর্ত দু’টি। প্রথমত, নরেন্দ্র মোদীর সংশোধিত ভূমি আইনে তিনি রাজ্যে কোনও জমি নিতে দেবেন না। সেই জন্য ১৯৬২ সালের পেট্রোলিয়াম অ্যান্ড মিনারেলস পাইপলাইন আইন, জাতীয় সড়ক আইন এবং রেলের জমি অধিগ্রহণের নিজস্ব আইনে জমি নেওয়া হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, অধিগ্রহণ সংক্রান্ত সব ফাইলে অধিগ্রহণে সায় দেওয়ার পাশাপাশি ‘নো ফোর্সিবেল ল্যান্ড অ্যাকুইজিশন’ অর্থাৎ জের করে অধিগ্রহণ চলবে না বলে নোট দিয়ে রেখেছেন মুখ্যমন্ত্রী।

ভূমি দফতরের কর্তাদের একাংশ জানান, এত দিন পরে একসঙ্গে এত প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণের অনুমতি মিলেছে, সেটাই বড় ব্যাপার। কোথাও জোর করে জমি নেওয়া হবে না। জমির মালিকেরা যাতে ঠিকঠাক ক্ষতিপূরণ পান, তা-ও দেখা হবে।

আরও পড়ুন: শিক্ষায় ‘অনিলায়ন’: সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে

ভূমি ও পূর্ত দফতর সূত্রের খবর, ভারতমালা প্রকল্পে রাজ্যের ৪৩টি রাস্তার উন্নয়ন হবে। রাজ্য সড়ককে জাতীয় সড়কে উন্নীত করার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সড়কগুলিকে আরও চওড়া করা হবে। তাই জমি দরকার। ওই সব রাস্তা যাবে বিভিন্ন জেলার উপর দিয়ে। খড়্গপুর-আরামবাগ-বর্ধমান-পলাশি-মালদহ-কিষাণগঞ্জ-বাগডোগরা রাস্তাটি হবে ৫১৬ কিলোমিটার। এটিকে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সমান্তরাল জাতীয় সড়ক হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এ ছাড়া রয়েছে জঙ্গিপুর থেকে বসিরহাট পর্যন্ত ২৭৫ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি সীমান্ত সড়ক। রয়েছে গীতালদহ-দিনহাটা-আলিপুরদুয়ার-বক্সাদুয়ার পর্যন্ত ২৮১ কিলোমিটারের রাস্তা। জমি লাগবে এই তিনটি প্রকল্পেই।

পূর্ত দফতরের এক কর্তা জানান, যে-বিশাল প্রকল্প রূপায়িত হতে চলেছে, সেই অনুপাতে জমি নেওয়া হবে সামান্যই। উত্তর ২৪ পরগনায় ১৪০০ একর, হুগলিতে কমবেশি ৬০ একর জমি নিতে হবে।

জগদীশপুর-হলদিয়া-বোকারো-ধামরা পাইপলাইন বসানোর কাজেও জমি নিতে হবে পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, বর্ধমান, হুগলি, হাওড়া, পূর্বমেদিনীপুর, নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনায়। পাইপলাইন বসানো হয়ে গেলেই মালিকেরা জমি ফিরে পাবেন। অমৃতসর-কলকাতা রেলের পণ্যবাহী করিডরের কাজেও হুগলি ও বর্ধমানে জমি নেওয়ার কাজ চলছে।

রাস্তা, রেললাইনের কাজে জমি নিতে মুখ্যমন্ত্রী রাজি হলেন কেন?

এক ভূমিকর্তা জানান, গত সাত বছরে কয়েকটি জায়গায় জমি নিতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, মানুষ উন্নয়নের স্বার্থে জমি দিতে রাজি। মালদহ থেকে কাটিহার ৮১ নম্বর জাতীয় সড়ক এবং ৬০এ নম্বর জাতীয় সড়কে বাঁকুড়া-পুরুলিয়ায় জমি নিতে সমস্যা হয়নি। মালদহের সামসি, চাঁচল ও মালতীপুরের বাইপাস নির্মাণে জমি না-নিলে পাল্টা মামলা করার হুমকি দিয়েছিলেন জমিদাতারা। দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এখন জমিদাতাদের সহযোগিতাই মিলবে। তাই একসঙ্গে গুচ্ছ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE