Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
education

শিক্ষায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ, রাজ্যে বাম ধারা অব্যাহত

সেই একই ধারা চলছে। বাম আমলে শিক্ষা ব্যবস্থায় শাসক দলের হস্তক্ষেপ ঠিক যেমনটা ছিল, তৃণমূলের আমলেও তাই।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

স্যমন্তক ঘোষ
শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৮ ০৪:০৬
Share: Save:

সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। রাজ্যের শিক্ষাক্ষেত্রের বর্তমান হাল দেখে শিক্ষাবিদদের একাংশ বলছেন, বাম আমলে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে ভাবে আলিমুদ্দিন স্ট্রিট হস্তক্ষেপ করত, সেই ট্র্যাডিশন মেনেই তৃণমূলের হস্তক্ষেপ চলছে। সে সময় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক ছিলেন অনিল বিশ্বাস। শিক্ষাক্ষেত্রে দলীয় হস্তক্ষেপের বহর দেখে তখন অনেকেই বলেছিলেন, শিক্ষায় ‘অনিলায়ন’ ঘটেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে সে কথা মাথায় রেখেই একটি নতুন শব্দের আমদানি ঘটেছে শিক্ষামহলে— ‘মমতায়ন’ বা ‘পার্থায়ন’।

বাম আমলে শিক্ষাবিদদের অনেকেরই অভিযোগ ছিল, কলেজের অধ্যক্ষ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগ হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে। শাসক দলের প্রতিনিধি, ছাত্র এবং কর্মী ইউনিয়নগুলি কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়গুলির পরিচালন সমিতিতে সরাসরি অংশ নিত। আশির দশকে সন্তোষ ভট্টাচার্য কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পরে তাঁর পুরো মেয়াদ জুড়ে তৎকালীন শাসক দল যা করেছিল, তা এখনও শিক্ষামহলে বহু আলোচিত ‘কলঙ্কে’র ইতিহাস।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় আসার পর বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের পরিচালন ব্যবস্থাকে রাজনীতিমুক্ত করার কথা বলেছিলেন। ব্রাত্য বসু শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন সেই নিরিখে বিধানসভায় বিল পাস হয়েছিল। কিন্তু অল্পদিনেই তা সংশোধন করে কার্যত পুরনো ব্যবস্থাই আবার ফিরিয়ে আনা হল। শিক্ষাক্ষেত্রে ফিরে এল রাজনৈতিক নেতা, ছাত্র এবং কর্মী ইউনিয়নের প্রতিনিধিত্ব।

আরও পড়ুন: ক্ষোভের যুগলবন্দি যাদবপুরে

শুধু তাই নয়, শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, তাঁরা টাকা দেন। তাই তাঁদের কথা মানতে হবে। শিক্ষাবিদদের অনেকেরই বক্তব্য, এই প্রবণতা থেকেই প্রেসিডেন্সিতে মানের সঙ্গে আপস করে ভর্তির দরজা খুলে দিতে হয়। যাদবপুরে তুলে দিতে হয় প্রবেশিকা পরীক্ষা। এমনকি, এই ধারা মেনেই কলেজগুলিতে দাপিয়ে বেড়ায় শাসক দলের ছাত্র ইউনিয়ন।

শিক্ষাবিদ সৌরীন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘বাম আমলে যে দূষণ ছড়াতে শুরু করেছিল, এখন তা অন্তিম চেহারায় পৌঁছেছে। কোনও রাখঢাক নেই। তার-ই মাসুল গুনতে হচ্ছে যাদবপুর-প্রেসিডেন্সি-সহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে।’’

ইতিমধ্যেই এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন শঙ্খ ঘোষ, সুকান্ত চৌধুরী, নবনীতা দেবসেনের মতো বিশিষ্ট জনেরা। তবে এই উদ্বেগ যে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে না, যাদবপুরে প্রবেশিকা পরীক্ষা তুলে দেওয়া তার টাটকা উদাহরণ। সুকান্তবাবুর মন্তব্য, ‘‘আগের আমলে যা হয়েছে, তা অবশ্যই নিন্দনীয়। কিন্তু বাড়ি জবরদখল হলে তা ফেরত পাওয়া যায়। বাড়িটাই ভেঙে ফেললে আর কিছু ফেরত আসে না। এখন যা দেখছি, তা চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ও অপটুতা। লেখাপড়ার বিষয়ে যে ন্যূনতম দায়বদ্ধতা ও কাণ্ডজ্ঞান থাকা দরকার, তা চোখে পড়ছে না।’’

বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথায় শিক্ষাবিদের বদলে পেশাদার প্রশাসক বসালে কি পরিস্থিতি বদলের সুযোগ থাকে? লেখক অমিত চৌধুরীর বক্তব্য, ‘‘শিক্ষাবিদও ভাল প্রশাসক হতে পারেন। সমস্যা হল, আমরা যাঁদের দেখছি, তাঁরা সরকারের ম্যানেজারে পরিণত হয়েছেন। অন্য কোনও প্রশাসক নিয়োগ করলে তাঁরাও যে সরকারেরই ম্যানেজার হবেন না, তার নিশ্চয়তা কোথায়?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE