তিন দিনের রাজ্য সফরে এসে মঙ্গলবার অনুপ্রবেশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সেই বল শাহের কোর্টে পাঠাতে চাইলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শাহের সাংবাদিক বৈঠকের পরে বাঁকুড়ার বড়জোড়ার সভা থেকে একপ্রস্ত পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতা। তার পর দিল্লি যাওয়ার আগে কলকাতা বিমানবন্দরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বিজেপির দুই সাংসদের কথা টেনে প্রশ্ন তুললেন শাহ এবং বিজেপির উদ্দেশে।
অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে শাহের অভিযোগকে ‘পুরনো চিত্রনাট্য’ এবং ‘ভাঙা ক্যাসেট’ বলে কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। সেই সঙ্গে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ অনন্ত মহারাজ এবং রানাঘাটের সাংসদ জগন্নাথ সরকারের কথা তুলে শাহকে বিঁধেছেন ডায়মন্ড হারবারের সাংসদ। অভিষেক বলেন, ‘‘বিজেপির প্রতীকে জেতা রাজ্যসভার সাংসদ অনন্ত মহারাজ। তিনি বলেছেন, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হচ্ছেন সব থেকে বড় ঘুসপেটিয়া আর পাকিস্তানি। জগন্নাথবাবু বলেছিলেন, বিজেপি ক্ষমতায় এলে সীমান্ত থেকে কাঁটাতার তুলে দেবেন। এ পার বাংলা-ও পার বাংলার মধ্যে কোনও সীমান্তই রাখবেন না। অমিত শাহ বা বিজেপি নেতৃত্ব কি এঁদের ‘শো কজ়’ বা বহিষ্কার করেছেন? আমি যত দূর জানি করেননি।’’
এর পরেই পহেলগাঁওয়ে জঙ্গি হানা এবং দিল্লিতে লালকেল্লার সামনে বিস্ফোরণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শাহকে বেঁধেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘জম্মু ও কাশ্মীরে সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে বিএসএফ আর সেখানকার পুলিশ। দুটোই কেন্দ্রের অধীন। দুটোই অমিত শাহের মন্ত্রকের অধীন। সেখানে কী ভাবে চার জন জঙ্গি ঢুকে দিনের আলোয় ২৬ জন মানুষকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দিল? দিল্লির পুলিশও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অধীন। সেখানে কী ভাবে বিহারের নির্বাচনের চার দিন আগে বিস্ফোরণে অতগুলো প্রাণ গেল? দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের দায়িত্বে যিনি রয়েছেন, তাঁকেই তো দায় নিতে হবে। এই সব জায়গায় তো আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস সরকার নেই।’’ অভিষেক আরও বলেন, ‘‘১১ বছর ধরে বিজেপির সরকার চলছে, ৬ বছর আপনি (অমিত শাহ) স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। অনুপ্রবেশ হয়ে থাকলে দায় কার? স্বাধীনতার পর দেশের অপদার্থতম স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নাম অমিত শাহ।’’
আরও পড়ুন:
-
শাহ-মমতা নারদ নারদ! পাঁচটি অমিত-অভিযোগ ধরে ধরে কড়া জবাব দিদির, ‘ভাইপো খোঁচা’র পাল্টা হাতিয়ার হলেন ‘পুত্র’ জয়
-
বিজেপির লোকজন নেই বলেই কমিশন শুনানিকেন্দ্রে ঢুকতে দিচ্ছে না: মমতা! বাইরে শিবির করতে নির্দেশ দলীয় বিএলএদের
-
অনুপ্রবেশই পশ্চিমবঙ্গের ভোটে বিজেপির সবচেয়ে বড় অস্ত্র হতে চলেছে! সঙ্গে দুর্নীতি, অপশাসন ও সন্ত্রাসও, বুঝিয়ে দিলেন শাহ
বঙ্গের পরিবেশে আহ্বান
ভোটের আগে শাহের রাজ্য সফরকে কটাক্ষ করেছেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘যত বার খুশি বাংলায় আসুন। রসগোল্লা খান। এখানকার বাতাসের গুণগত মান (একিউআই) দিল্লির থেকে ভাল। দূষণ কম। যত খুশি আসুন। প্রাণ ভরে শ্বাস নিন। প্রাণায়ম করুন। আর শুধু ভোটের আগে আসবেন না। প্রতি মাসে আসুন। রাজ্যের মানুষের কথা শুনুন।’’
রবীন্দ্রনাথ ‘স্যান্যাল’ বিতর্ক
শাহের সাংবাদিক বৈঠকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পদবি ‘বিভ্রাট’ হয়েছে বলে দাবি করলেন অভিষেক। তাঁর কথায়, ‘‘এরা বাংলার ইতিহাস জানে না। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে আজকেও বলেছে রবীন্দ্রনাথ সান্যাল। এর আগে শান্তিনিকেতনকে রবীন্দ্রনাথের জন্মস্থান বলেছিল। প্রধানমন্ত্রী বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে বলেছেন বঙ্কিমদা। মা দুর্গার বংশপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তোলে। এরা আবার নাকি পশ্চিমবাংলার মানুষের জন্য কাজ করবে।’’ মঙ্গলবার দুপুরে সল্টলেকে সাংবাদিক বৈঠক করেন শাহ। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টার ওই সাংবাদিক বৈঠকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন মণীষীদের কথা উল্লেখ করেন তিনি। উঠে আসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুদের কথা। ওই সময়েই একটি পর্যায়ে রবীন্দ্রনাথের নামের শেষে ‘সান্যায়’ জুড়ে দেন শাহ। তৃণমূলের দাবি, আসলে পদবিতেই ভুল করেছেন তিনি। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে তিনি ‘রবীন্দ্রনাথ সান্যাল’ বলে অভিহিত করেছেন বলে দাবি রাজ্যের শাসকদলের।