রাজ্য বিজেপির ‘কোর’ গোষ্ঠীকে বৈঠকে এলাকা ধরে ধরে পরিস্থিতির পুঙ্খানুপুঙ্খ খবরাখবর জানলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। শুধু তা-ই নয়, বৈঠকে উপস্থিত সকলের থেকে পরামর্শও চান তিনি। ‘সেটিং’ তত্ত্বের
জল্পনা নিয়ে ওঠা প্রশ্নে নিজের বিরক্তি চেপে রাখেননি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বুঝিয়ে দেন, সাংবাদিক বৈঠকে ‘সেটিং তত্ত্ব’ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছিল, তা মোটেই ভাল ভাবে নেননি!
মঙ্গলবার ছিল কলকাতায় শাহের দ্বিতীয় দিন। দিনের শুরুতে তিনি একটি সাংবাদিক বৈঠক করেন। তার পরে সল্টলেকে বিজেপি দফতরে ‘কোর কমিটিকে’ নিয়ে বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে ছিলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি শমীক ভট্টাচার্য, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী, দুই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার এবং শান্তনু ঠাকুর। এ ছাড়াও বৈঠকে ছিলেন দুই সংগঠন সম্পাদক অমিতাভ চক্রবর্তী এবং সতীশ ঢুন্ড। পাশাপাশি, পাঁচ জন রাজ্য সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক-প্রভারীরা। সেই তালিকায় ছিলেন সুনীল বনসল, মঙ্গল পান্ডে, অমিত মালবীয়, ভূপেন্দ্র যাদব ও বিপ্লব দেব।
বিজেপি সূত্রে খবর, বৈঠকে সকলের থেকে নানা পরামর্শ চান শাহ। এলাকা ধরে ধরে খোঁজখবর নেন। রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিস্থিতি সম্পর্কে সব কিছু জেনে নেন শাহ। বিজেপির এক সূত্রের দাবি, এই বৈঠকে শাহ কম বলেছেন, বেশি শুনেছেন। তবে বুথস্তর পর্যন্ত সংগঠন জোরদার করার বিষয়টি আরও এক বার মনে করিয়ে দেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। নির্বাচনে বুথস্তরের কর্মীরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন, তা প্রকারান্তরে আরও এক বার বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
আলোচনা প্রসঙ্গে উঠে এসেছে ‘সেটিং তত্ত্ব’। সাংবাদিক বৈঠকে শাহকে এই প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়েছিল। সাংবাদিক বৈঠকে যদিও তিনি এ প্রশ্নে কোনও অসন্তোষ প্রকাশ করেননি। তবে ‘কোর কমিটির’ বৈঠকে এ নিয়ে উষ্মাপ্রকাশ করেন। নিজের বিরক্তি লুকিয়ে রাখেননি শাহ। দাবি বিজেপি সূত্রের। এ ছাড়াও, এই বৈঠকে সংগঠন মজবুত করার কথাও বলেন তিনি। বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন কর্মসূচি সম্পর্কে জানতে চান শাহ। পাশাপাশি, পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে আন্দোলন তীব্র করে তুলতে দল কী ভূমিকা নিচ্ছে, তা স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।
নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী হোক বা তিনি নিজে কত বার এ রাজ্যে এসেছেন, কতটা সময় দিয়েছেন, তা-ও রাজ্য নেতৃত্বকে জানান শাহ। তার পরেও সাংবাদিক বৈঠকে ‘সেটিং তত্ত্ব’ নিয়ে কী ভাবে প্রশ্ন উঠতে পারে তা নিয়ে বিস্ময়প্রকাশ করেন শাহ। মতুয়াদের এসআইআর সংক্রান্ত উদ্বেগ নিয়েও ওই বৈঠকে শাহ ফের আশ্বাসবাণী শুনিয়েছেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি। মতুয়াদের নাম যাতে ভোটার তালিকা থেকে বিপুল সংখ্যায় বাদ না-পড়ে এবং তৃণমূল যাতে মতুয়া এলাকায় ‘আতঙ্ক তৈরি করে ফায়দা তুলতে না-পারে’ তা তিনিই নিশ্চিত করবেন বলে শাহ রাজ্য বিজেপিকে আশ্বস্ত করেছেন বলে বিজেপি সূত্রের দাবি।
এই বৈঠকের পর শাহ চলে যান নিউ টাউনের ‘তালকুঠি’তে। সেখানেই রাত্রিবাস করবেন তিনি। সেখানে সঙ্ঘের সঙ্গে সমন্বয় বৈঠক করেন শাহ। তাৎপর্যপূর্ণ হল, এই বৈঠকে যোগ দিতে কলকাতায় এসেছিলেন আরএসএসের অন্যতম সর্বোচ্চ পদাধিকারী অরুণ কুমার, যিনি সর্বভারতীয় স্তরে সঙ্ঘ এবং বিজেপির মধ্যে সমন্বয় রাখার দায়িত্বে আছেন। এ ছাড়াও, ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় পদাধিকারী রামদত্ত চক্রধর, পূর্ব ভারত ক্ষেত্রের প্রচারক এবং সহ-প্রচারক রমাপদ পাল, জলধর মাহাতো। বৈঠকে আর উপস্থিত ছিলেন সহ ক্ষেত্রে প্রচারপ্রমুখ জিষ্ণু বসু। যদিও বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে কিছু বলতে চাননি সঙ্ঘ নেতৃত্ব।