Advertisement
২১ মে ২০২৪

প্রকাশ্য রাস্তায় তৃণমূল নেত্রীকে অস্ত্র ‘প্রশিক্ষণ’ বিধায়কের

দিনের বেলায় প্রকাশ্য রাস্তায় উদ্যত রিভলভার হাতে এক মহিলা! আগ্নেয়াস্ত্র ধরা তাঁর সেই হাত ধরে আছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, স্থানীয় বিধায়ক! এককালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ আইপিএস অফিসার, অধুনা রাজনীতিক, শাসক দলের নেতা সুলতান সিংহ!

বিতর্কের কেন্দ্রে সুলতান সিংহের এই ছবি।—নিজস্ব চিত্র।

বিতর্কের কেন্দ্রে সুলতান সিংহের এই ছবি।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৬ অগস্ট ২০১৫ ২১:৩০
Share: Save:

দিনের বেলায় প্রকাশ্য রাস্তায় উদ্যত রিভলভার হাতে এক মহিলা! আগ্নেয়াস্ত্র ধরা তাঁর সেই হাত ধরে আছেন যিনি, তিনি আর কেউ নন, স্থানীয় বিধায়ক! এককালের দোর্দণ্ডপ্রতাপ আইপিএস অফিসার, অধুনা রাজনীতিক, শাসক দলের নেতা সুলতান সিংহ!

বালির রাস্তায় যে মহিলাকে তিনি রিভলভার চালানোর ‘প্রশিক্ষণ’ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, তিনিও তৃণমূলেরই স্থানীয় নেত্রী মিলি রায়। যিনি নিজেই বলছেন, ‘‘স্যার (বিধায়ক সুলতান সিংহ) এক দিন নিজের খালি পিস্তলটা দেখাতে নিয়ে এসেছিলেন। সেটাই আমি হাতে নিয়ে দেখছিলাম। ভারী ছিল বলে স্যার আমার হাতটা ধরে দেখিয়ে দিচ্ছিলেন কী ভাবে ট্রিগার টিপতে হয়।’’

যদিও ‘প্রশিক্ষণ’-এর এই মুহূর্ত ফ্রেমবন্দি হলেও সুলতান সিংহের জবাব, ‘‘এ রকম কোনও ঘটনা মনে নেই।’’ আর এই নিয়েই আপাতত সরগরম রাজনীতির আঙিনা।

স্থানীয় বিধায়ক সুলতান সিংহের ঘনিষ্ঠ মিলিদেবী স্থানীয় টোটো সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকও বটে। বস্তুত, দীর্ঘ দিন ধরেই বালিতে টোটোর দৌরাত্ম্য নিয়ে জেরবার সাধারণ মানুষ থেকে প্রশাসন। প্রত্যেকেরই অভিযোগ, প্রতিদিন নতুন টোটোর সংখ্যা বাড়ছে। বহু বার এই বিষয়ে বৈঠক করেও কোনও সুরাহা হয়নি বলে দাবি ছিল স্থানীয় প্রশাসনের। এ বার সেই সমস্ত অভিযোগ স্বীকার করে নিয়ে টোটো চালকরাই অভিযোগের আঙুল তুললেন তৃণমূলের স্থানীয় নেত্রী মিলি রায়ের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, মোটা টাকার বিনিময়েই টোটোর দৌরাত্ম্যকে মদত দিচ্ছিলেন ওই নেত্রী। নতুন টোটো নামানোর নামে চলছিল ‘তোলাবাজি’।

বৃহস্পতিবার সেই নেত্রীর বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলে বালিখাল টোটো স্ট্যান্ডে ব্যানারও ঝুলিয়ে দেন চালকেরা। তাঁদের অভিযোগ, মোটা টাকার বিনিময়ে প্রতিদিন নতুন নতুন টোটো স্ট্যান্ডে ঢুকিয়ে দিচ্ছেন মিলি রায়। সে জন্যই বালিতে টোটো সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ছে।

বালি খাল টোটো স্ট্যান্ডের চালকেরা জানান, বালিতে প্রথম টোটো চালু হয় এই স্ট্যান্ড থেকেই। প্রথমে ৫০টি মতো থাকলেও এখন টোটোর সংখ্যা বাড়তে বাড়তে ১৮৫। চালকদের অভিযোগ, প্রতিদিনই নতুন টোটো স্ট্যান্ডে আসছে। এর ফলে রাস্তায় যানজট যেমন হচ্ছে, তেমনই আবার ব্যবসারও লোকসান হচ্ছে। অভিযোগ, বার বার এ বিষয়ে মিলিদেবীকে জানানো হলেও তিনি কর্ণপাত করতেন না। উল্টে তাঁর লেখা চিঠি নিয়ে এসেই স্ট্যান্ডে দাঁড়াতো নতুন টোটো। এলাকায় নতুন টোটো চলার জন্য স্থানীয় বিধায়ক সুলতান সিংহের অনুমতিপত্র প্রয়োজন বলে নোটিস জারি করেছিলেন মিলিদেবী। স্থানীয় সূত্রের খবর, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সুলতান সিংহের সঙ্গে মিলিদেবীকে দেখা যেত।

যদিও সুলতান সিংহ সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘এটা মিথ্যা রটানো হচ্ছে। আমাদের দলেরই আর একটা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃত ভাবে এটা করাচ্ছে।’’ হাওড়া জেলা তৃণমূল সভাপতি (শহর) তথা মন্ত্রী অরূপ রায় বলেন, ‘‘মিলি রায় কে তা চিনি না। তবে তিনি দলের কোনও সদস্য নন। আর কে কবে ওই টোটো সংগঠন বানালো তা-ও জানি না। সংগঠন বানাতে গেলে দলের শ্রমিক সংগঠনের অনুমোদন নিতে হয়।’’ নতুন টোটো নামানোর নামে তোলাবাজির বিষয়ে পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলা হবে বলে জানান অরূপবাবু। মিলিদেবী অবশ্য বলেন, ‘‘সমস্ত টোটো চালকের সম্মতি নিয়ে বিধায়ক আমাকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। কোনও দিন আমি কারও কাছে এক টাকাও নিইনি। উল্টে টোটোচালকদের বিপদে পাশে দাঁড়াতাম। এটা স্থানীয় তৃণমূল নেতা ভাস্করগোপাল চট্টোপাধ্যায়ের পরিকল্পনায় হচ্ছে।’’ যদিও ভাস্করবাবু বলেন, ‘‘দলের অনুমোদিত কোনও টোটো সংগঠন বালিতে আছে বলে জানি না। উচ্চ নেতৃত্ব আমাকে টোটো দেখভালের দায়িত্ব কখনওই দেননি। অহেতুক এ বিষয়ে আমার নাম কেন জড়ানো হচ্ছে, বুঝতে পারছি না।’’

বালি খাল স্ট্যান্ডের টোটো সংগঠনের সদস্য অশোক অধিকারী জানান, বিভিন্ন জায়গায় টোটো চলাচল শুরু হতেই বালিখাল, বেলুড় স্টেশন, বেলুড়মঠ ও লিলুয়া স্ট্যান্ডের জন্য একটি কেন্দ্রীয় সংগঠন তৈরি হয়। বালির রবীন্দ্রভবনে প্রায় ৯৫০ জন টোটোচালককে নিয়ে বৈঠকও হয়েছিল। সেখানেই সংগঠনের সভাপতি হন বিধায়ক সুলতান সিংহ। সাধারণ সম্পাদক হন মিলিদেবী। অভিযোগ, এর পরেই ওই নেত্রীর ঘনিষ্ঠ দু’জন যুবককে বালি খালে স্টার্টারের চাকরি দেওয়া হয়। তাঁরাই প্রতিটি টোটো থেকে প্রতিদিন ১০ টাকা করে চাঁদা সংগ্রহ করতেন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘বিপদে পড়লে এবং চালকদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য চাঁদা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। সেই টাকা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করে জমা রাখার কথা ছিল। কিন্তু দিনের পর দিন তা মানা হচ্ছিল না।’’ ১৮৫টি টোটো থেকে প্রতি দিন ১৮৫০ টাকা, অর্থাৎ মাসে ৫৫ হাজার ৫০০ টাকা আদায় হত। কিন্তু সেই টাকা থেকে স্টার্টারদের প্রায় ১২ হাজার টাকা বেতন দেওয়ার পরে বাকি টাকা কথায় যেত তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন চালকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Sultan Singh Trinamool bjp road bali MLA
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE