প্রতীকী ছবি।
বছরভর মশার দাপটে কুপোকাত বঙ্গবাসী। এ বার তার দোসর হয়েছে সোয়াইন ফ্লু ভাইরাস।
জানুয়ারি মাস থেকেই সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্তের ভর্তির সংখ্যা বাড়ছে। ইতিমধ্যেই সোয়াইন ফ্লুতে তিন জন মারা গিয়েছেন বলে অভিযোগ। যদিও স্বাস্থ্য-অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তীর দাবি, নথি যাচাই করে এক জনের মৃত্যুর কারণ সোয়াইন ফ্লু পাওয়া গিয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘জানুয়ারি ২০১৮-র তুলনায় এ বার আক্রান্তের সংখ্যা বেশি। তবে নিয়মিত জেলাস্তর থেকে খবর নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। উদ্বেগের প্রয়োজন নেই।’’
গত সেপ্টেম্বর মাস থেকেই দাপট বে়ড়েছিল সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসের। তবে সরকারি স্তর থেকে ২০১৮ সালে সোয়াইন ফ্লুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা প্রকাশ করা হয়নি। বেসরকারি হিসেব অবশ্য বলছে, গত বছরে রাজ্যে দশ জন সোয়াইন ফ্লুতে মারা গিয়েছে। যার মধ্যে অধিকাংশ শিশু।
চিকিৎসকেরা জানান, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সোয়াইন ফ্লু-র রিপোর্ট দেরিতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রয়োজনীয় শারীরিক পরীক্ষা দেরিতে হওয়ার জেরেই সমস্যা জটিল হচ্ছে। চিকিৎসার পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যাচ্ছে না। বেসরকারি হাসপাতালে সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষা করাতে প্রায় ছ’হাজার টাকা খরচ হয়। তবে অধিকাংশ চিকিৎসক এখন ‘কম্প্রিহেনসিভ ভাইরাল টেস্ট’ অর্থাৎ একসঙ্গে ১৭ ভাইরাসের পরীক্ষার পরামর্শ দিচ্ছেন। যার খরচ প্রায় ২০ হাজার টাকা। ব্যয়বহুল এই পরীক্ষার খরচ অনেকের পক্ষে বহন করা কঠিন হয়ে উঠছে।
আরও পড়ুন: বিক্ষোভেও নাগরিকত্ব বিল নিয়ে অনড় মোদী
সরকারি স্তরে জ্বরে ভর্তি হওয়া রোগীদেরই সোয়াইন ফ্লু পরীক্ষা হচ্ছে। কিন্তু বহির্বিভাগে রোগীদের পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, জ্বর কমার পরে শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকলেই পরীক্ষা করানো দরকার।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক অরুণাংশু তালুকদারের কথায়, ‘‘সোয়াইন ফ্লু ভাইরাসঘটিত অসুখ। আক্রান্তকে বিশেষ পর্যবেক্ষণে রাখার পাশাপাশি তাঁর হাঁচি-কাশি থেকেও নিরাপদ দুরত্বে থাকতে হবে। রোগের প্রকোপ ঠেকাতে এন৯৫ নামে বিশেষ ধরনের মাস্ক পরা জরুরি।’’
এই রোগে শিশুদের ঝুঁকি আরও বেশি বলে মনে করছেন শিশুরোগ চিকিৎসক প্রভাসপ্রসূন গিরি। তিনি বলেন, ‘‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকার জেরেই শিশুদের বিপদ বেশি। আগে এই ধরনের অসুখের প্রকোপ বর্ষায় দেখা যেত। কিন্তু সম্প্রতি বছরভর দাপট দেখা যাচ্ছে। ফলে রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজনীয় পূর্ব পরিকল্পনার সুযোগ কম। তাই শীতেও জ্বর-কাশি হলে সতর্কতা জরুরি। দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ মতো পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া দরকার।’’
পরজীবী বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, সোয়াইন ফ্লু নিয়ে সবিস্তারে প্রচার করা জরুরি। শুয়োরের মাধ্যমেই সোয়াইন ফ্লু মানুষের দেহে প্রবেশ করে। তাই শুয়োরপালকদের বিশেষ সচেতনতা পাঠ জরুরি। প্রয়োজনে সরকারি স্তরে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। যে সব অঞ্চলে শুয়োর প্রতিপালন হয়, সেখানে বাড়তি নজর দিতে হবে। তা না-হলে বিপদ আরও বাড়বে বলে তাঁদের আশঙ্কা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy