৯০ বছরের বৃদ্ধার পেনশন সমস্যা মেটাতে ব্যাঙ্ককে বাড়িতে যেতে বলল হাই কোর্ট। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
সরকার যদি দুয়ারে যেতে পারে, তবে ব্যাঙ্ক যেতে পারবে না কেন? এক স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন সংক্রান্ত মামলায় এমনই প্রশ্ন তুলল কলকাতা হাই কোর্ট। বিচারপতি অরিন্দম মুখোপাধ্যায়ের নির্দেশ, ব্যাঙ্কের কর্মীদেরই যেতে হবে ওই গ্রাহকের কাছে। পাশাপাশি, আদালত জানায়, ওই স্বাধীনতা সংগ্রামীর পেনশন সংক্রান্ত নথি যাচাই করতে বাড়িতে যাবেন জেলাশাসক বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি।
দেশের সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামী এবং তাঁদের পরিবারকে পেনশন দেয় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই মতো দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা স্বাধীনতা সংগ্রামী বিশ্বরঞ্জন সেনও পেনশন পেতেন। ২০১৭ সালের ২২ এপ্রিল তাঁর মৃত্যুর পর পেনশনের অধিকারী হন স্ত্রী অনিতা সেন। অভিযোগ, স্বামীর মৃত্যুর চার বছরের মাথায় স্ত্রীর পেনশন বন্ধ করে দেয় লেক মার্কেটের একটি বেসরকারি ব্যাঙ্ক। যেখানে বিশ্বরঞ্জন এবং অনিতার জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ব্যাঙ্কের সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ৯০ বছরের বৃদ্ধা অনিতা। আদালতে ব্যাঙ্ক জানায়, জয়েন্ট অ্যাকাউন্ট থাকার কারণে একজন মারা যাওয়ার ফলে সমস্যা তৈরি হয়েছে। ব্যাঙ্কের কাজকর্মও নিয়মিত হয়নি। এর ফলেই পেনশন বন্ধ করা হয়েছে বিশ্বরঞ্জনের স্ত্রীর।
৯০ বছরের এক বৃদ্ধা কী ভাবে ব্যাঙ্কে গিয়ে কাজ করবেন সেই প্রশ্ন তোলেন আইনজীবী সৈয়দ মনসুর আলি। তিনি আদালতকে জানান, বয়সজনিত কারণে ওই বৃদ্ধা বাড়ির বাইরেই যেতে পারেন না। ব্যাঙ্কে যাওয়া তাঁর পক্ষে অসম্ভব। তা ছাড়া ব্যাঙ্ক আগাম কোনও নোটিস ছাড়াই পেনশন বন্ধ করে দেয়। আদালতের পর্যবেক্ষণ, সরকার যদি মানুষের দুয়ারে যেতে পারে, ব্যাঙ্ক কেন পারবে না? কোনও নথি বা স্বাক্ষর যা যা প্রয়োজন, ওই বৃদ্ধার বাড়ি গিয়েই তা সংগ্রহ করতে হবে ব্যাঙ্ককে। ব্যাঙ্কের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে হাই কোর্ট।
এই মামলা চলাকালীন এক মাস পেনশন দিয়ে ফের অন্য একটি সমস্যার কথা তোলে ওই ব্যাঙ্ক। তাদের বক্তব্য, অনিতার স্বামী যে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন সেই দাবির সপক্ষে জোরালো প্রমাণ দরকার। না হলে পেনশন দেওয়া সম্ভব নয় অনিতাকে। আইনজীবী সৈয়দ বলেন, ‘‘বিশ্বরঞ্জন যে স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন সেই বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি ব্যাঙ্ক। তারা স্ত্রীর দাবির সপক্ষে প্রমাণ চেয়েছেন। সেই মতো অনিতা স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্র দেখালেও ব্যাঙ্ক তা গ্রহণ করেনি।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক জানায়, জেলাশাসক বা জেলার রেভিনিউ অফিসারের শংসাপত্র দরকার। তাঁরা যদি স্বাক্ষর করে অনুমতি দেন তবেই ফের পেনশন পাবেন ওই বৃদ্ধা।’’
আইনজীবীর এই বক্তব্য শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেন বিচারপতি মুখোপাধ্যায়। বিষয়টি দেখার জন্য সরাসরি তিনি জেলাশাসককে নির্দেশ দেন। তাঁর নির্দেশ, দক্ষিণ ২৪ পরগনার জেলাশাসক নিজে বা তাঁর কোনও প্রতিনিধি অনিতার বাড়িতে যাবেন। পেনশন পেতে ওই বৃদ্ধার জন্য যা যা করণীয়, তা তিনি ব্যক্তিগত ভাবে করবেন। বিচারপতির মন্তব্য, ‘‘দেশের এক যোদ্ধাকে তাঁর প্রাপ্য সম্মান বা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায় না! আর এই আদালত সেই অধিকার বুঝিয়ে দেবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy