নতুন সভাপতি বাছাইয়ে জিইয়ে রইল জল্পনা। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
প্রথমে অপসারণের খবর। তার পর পুনর্বহাল নিয়ে জোর চর্চা। অবশেষে অপসারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের শীর্ষপদ ঘিরে বেশ কয়েক দিন ধরে এ ভাবেই চলেছে জল্পনার চড়াই-উতরাই। সে হইচই কিছুটা থিতিয়ে আসতেই নতুন সভাপতি বাছাই ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর তৎপরতা। উঠে আসছে অন্তত চারটি নাম। তার মধ্যে তিন জনকে মঙ্গলবারই দেখা গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে। কয়েক জন ছাত্রনেতার সঙ্গে পার্থবাবু আলাদা করে কথা বলেছেন বলেও জানা গিয়েছে।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে জয়া দত্তকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভানেত্রী পদ থেকে সরানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু সে বিষয়ে প্রকাশ্যে কিছু বলতে দেখা যায়নি তৃণমূলনেত্রীকে। জল্পনার অবকাশ তৈরি হয়েছিল সেখান থেকেই। দলের মহাসচিব তথা ছাত্র সংগঠনের দেখভালে থাকা নেতা তথা রাজ্যের শিক্ষা মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রথমে কিছুতেই মুখ খুলছিলেন না বিষয়টি নিয়ে। তাই জল্পনার আগুন আরও বাড়ছিল। পরে বিধানসভায় তিনি বলেছিলেন, জয়ার অপসারণের খবর তিনি সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছেন। তাতে আরও ধোঁয়াশা তৈরি হয়। কিন্তু শেষে পার্থবাবু স্বীকার করেন, জয়াকে সরিয়ে দিয়েছেন দলনেত্রী, সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার প্রশ্নও নেই।
জল্পনা থিতিয়ে আসার পরই সংগঠনের মধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে জোর তৎপরতা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে দিন জয়ার অপসারণের নির্দেশ দিয়েছিলেন, সে দিন জানিয়েছিলেন যে, পরবর্তী ১০ দিনের মধ্যে মধ্যে জানানো হবে টিএমসিপি-র নতুন সভাপতির নাম। প্রায় ৮ দিন অতিক্রান্ত। তাই ছাত্রনেতাদের নিজেদের তৎপরতা তুঙ্গে তো বটেই। তৃণমূল নেতৃত্বও নতুন নাম নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু করে দিয়েছে বলে খবর। এমন পরিস্থিতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায় নিজের বাড়িতে আলাদা করে কয়েক জন ছাত্রনেতার সঙ্গে কথা বললে সব দৃষ্টি তাঁদের উপরে পড়া অত্যন্ত স্বাভাবিক। ঘটছেও তেমনই।
আরও পড়ুন: দশ বছর জেলে থাকা ছত্রধরের জামিন এক দিনে সম্ভব নয়, জানাল হাইকোর্ট
যে চার জনের নাম বুধবার ভেসে উঠেছে, তার মধ্যে অন্যতম হল বাঁকুড়া জেলা টিএমসিপি-র সভানেত্রী চুমকি বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল যুব কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সভাপতি তথা মুখ্যমন্ত্রীর ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুনজরে রয়েছেন চুমকি। দলের একাংশের দাবি তেমনই। অভিষেকের তরফ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চুমকির নাম প্রস্তাবিত হতে পারে বলে দলের একাংশ মনে করছে। তবে মঙ্গলবার যাঁদের দেখা গিয়েছে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে, তাঁদের মধ্যে চুমকি ছিলেন না।
পার্থবাবুর বাড়ি গিয়ে যাঁরা তাঁর সঙ্গে দেখা করেছেন, তাঁদের কেউ কেউ নিজেদের বায়োডেটাও পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কাছে জমা করেছেন বলে তৃণমূল সূত্রের খবর। কবে থেকে ছাত্র রাজনীতিতে রয়েছেন, কোন কোন স্তরে কাজ করেছেন, ছাত্র সংসদে এবং ছাত্র সংগঠনে এত দিন ধরে কী কী ভূমিকায় তাঁরা কাজ করেছেন, সে সবের বিশদ বিবরণ বায়োডেটায় রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
তৃণমূল সূত্রের খবর, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদিকা লগ্নজিতা চক্রবর্তী মঙ্গলবার পার্থবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন। তৃণমূল মহাসচিব তথা শিক্ষা মন্ত্রী আলাদা করেই লগ্নজিতার সঙ্গে কথা বলেন বলে জানা গিয়েছে। তবে লগ্নজিতা নিজে সে কথা অস্বীকার করেছেন। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সভাপতি নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর কোনও কথা হয়নি বলে লগ্নজিতা জানিয়েছেন। পার্থবাবুর বাড়িতে মঙ্গলবার তিনি গিয়েছিলেন কি না, সে প্রশ্নের কোনও উত্তরও লগ্নজিতা দিতে চাননি।
আরও পড়ুন: ডিএ-বৈষম্যে চুপ থাকতে নারাজ কোর্ট
কয়েক দিন আগে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক কর্মসূচিতে যোগ দিতে গিয়েছিলেন অধুনা বিজেপি নেতা মুকুল রায়। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদ মুকুলকে কালো পতাকা দেখিয়ে ফেরত পাঠায়। যাঁর নেতৃত্বে মুকুলকে সে দিন আটকে দিয়েছিল টিএমসিপি, সেই মণিশঙ্কর মণ্ডল মঙ্গলবার পার্থবাবুর বাড়ি গিয়েছিলেন। লগ্নজিতার সঙ্গে কথা শেষ হওয়ার পরে মণিশঙ্করের সঙ্গে কথা বলেন তৃণমূল মহাসচিব। পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে সাক্ষাতের কথা মণিশঙ্কর অস্বীকার করেননি। কিন্তু তৃণমূল ছাত্র পরিষদের নতুন সভাপতি বাছাইয়ের সঙ্গে ওই সাক্ষাতের কোনও সম্পর্ক নেই বলে মণিশঙ্করেরও দাবি। তিনি বলেন, ‘‘পার্থ চট্টোপাধ্যায় রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী। বিশ্ববিদ্যালয়ের পঠন-পাঠন সংক্রান্ত একটি বিষয় নিয়ে আমি শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে গিয়েছিলাম। কোনও রাজনৈতিক কথা হয়নি।’’
কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি তথা তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক প্রসেনজিৎ মণ্ডলকেও মঙ্গলবার পার্থবাবুর বাড়ির সামনে দেখা গিয়েছে বলে খবর। তবে প্রসেনজিৎ সে বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy