সাইবার হানায় এ রাজ্যে তেমন ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ঝুঁকি নিতে নারাজ নবান্ন। সে কারণে, রাজ্যের তিনটি দফতরের পক্ষ থেকে সরকারের সমস্ত দফতরকে নির্দিষ্ট নির্দেশিকা দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হল, ওয়ানাক্রাই ভাইরাসের হামলায় কী করতে হবে, আর কী নয়। শুধু তাই নয়, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আগামী বৃহস্পতিবার রাজ্য সরকারের সব দফতরকে নিয়ে বৈঠকও করবে তথ্য-প্রযুক্তি দফতর।
প্রায় দেড়শোটি দেশে দু’লক্ষেরও বেশি কম্পিউটার সিস্টেমে তালা লাগিয়েছে এই ‘ওয়ানাক্রাই’। কিন্তু অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও পশ্চিমবঙ্গে বিচ্ছিন্ন পাঁচ-ছ’টি ঘটনা ছাড়া ভারতের তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে এখনও তেমন আঘাত হানতে পারেনি কম্পিউটারের ফাইল পণবন্দি করার এই ভাইরাস। কেন্দ্রীয় তথ্য-প্রযুক্তি সচিব অরুণা সুন্দররাজন মঙ্গলবার এই কথা জানিয়েছেন। একই বক্তব্য কেন্দ্রীয় সরকারের সাইবার সুরক্ষা সংস্থা সিইআরটি-র। রাজ্য সরকার সূত্রে এ দিন জানানো হয়েছে, একমাত্র বিদ্যুৎ দফতরের কিছু তথ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তা ছাড়া, তেমন কোনও ক্ষতির খবর নেই।
নবান্নের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, ‘‘বিদ্যুৎ দফতরে গ্রাহকদের সঙ্গে যুক্ত কিছু কম্পিউটারের তথ্য নষ্ট হয়েছে। কিন্তু ভাইরাস মূল সার্ভারের ক্ষতি করতে পারেনি বলে তথ্য উদ্ধার করা গিয়েছে।’’ ওই কর্তার দাবি, অনেক ক্ষেত্রে সরকারি কম্পিউটারে উইন্ডোজ এক্সপি-র পরে আসা ‘অপারেটিং সিস্টেম’ ব্যবহার করা হয়। সেই কারণে ‘ওয়ানাক্রাই’ ভাইরাস হামলা করতে পারেনি।
মঙ্গলবার নবান্নে ভাইরাস হামলার মোকাবিলায় জরুরি ভিত্তিতে রাজ্যের প্রশাসনিক ও পুলিশ কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন মুখ্যসচিব বাসুদেব বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈঠকে ভাইরাস হানা মোকাবিলায় কী করণীয় কতটা কী ক্ষতি হয়েছে— এ সব নিয়ে, আলোচনা হয়। তবে ক্ষতি না হলেও নিরন্তর নজরদারি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য।
এর পরেই মুখ্যসচিব নির্দেশ দিয়েছেন, কর্মিবর্গ ও প্রশাসনিক সংস্কার, তথ্যপ্রযুক্তি এবং সিআইডি-র সাইবার অপরাধ দমন শাখার পক্ষ থেকে রাজ্যের সমস্ত দফতরকে এই পরিস্থিতিতে কী করণীয়, সে সম্পর্কে নির্দেশিকা পাঠানো হবে। সেখানে উইনডোজ-এর বক্তব্যের পাশাপাশি, কোন কোন আইপি, ডোমেন এবং ফাইলকে ফায়ারওয়াল বা অ্যান্টিভাইরাসের মাধ্যমে আটকে দিতে হবে, সে সম্পর্কেও বিস্তারিত তালিকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে।
এ দিনের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে সিআইডি-র সাইবার অপরাধ দমন শাখাকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে এবং কড়া নজরদারি চালাতে বলা হয়েছে। কলকাতা পুলিশ একটি নির্দেশিকা তৈরি করেছে। আমজনতার সচেতনতার জন্য তা প্রচারও করা হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে হোয়াটসঅ্যাপে এই বার্তা পৌঁছে যাচ্ছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। কর্মীদের জন্য একই ধরনের নির্দেশিকা দিয়েছে কলকাতা পুরসভাও। এ দিকে জেলাগুলিতে বিক্ষিপ্ত কয়েকটি সাইবার হানার ঘটনা ধরা পড়েছে। এ দিন বিকল হয়েছে খড়্গপুর রেল ডিভিশনের প্রধান কার্যালয়ের একাধিক দফতরের কম্পিউটার। কমার্শিয়াল বিভাগের ৫টি, স্টোর বিভাগে ২টি ও অপারেটিং বিভাগের ২টি কম্পিউটারে ভাইরাস হানা হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার ব্যারাকপুর ডিভিশন। ব্যাহত হয় বিল জমা নেওয়ার পরিষেবা। সমস্যা হয়েছে বীরভূমের নলহাটি, আমোদপুর, মল্লারপুর, সিউড়ির বিদ্যুৎ অফিসেও। মালদহের মানিকচক ও বামনগোলা এবং জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতেও একই সমস্যা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy