সারা জীবন ছাত্র পড়িয়ে অবসর নেওয়ার পরে পেনশন আদায় করতে শিক্ষকদের জুতোর সুখতলা ক্ষয়ে যায়। এ রাজ্যে এই অভিযোগ দীর্ঘ কালের। সেই সমস্যার মোকাবিলায় স্কুলের শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীদের জন্য এ বার ই-পেনশন চালু করতে চলেছে রাজ্য সরকার। এর ফলে রাজ্যের সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের অবসরের সঙ্গে সঙ্গেই পেনশন পাওয়া নিশ্চিত হবে।
স্কুলের শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীদের অভিযোগ, অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধে পেতে তাঁদের অশেষ ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয়। পেনশন পাওয়ার জন্য পেরোতে হয় একটি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার অজস্র ধাপ। ১৮ মাস আগে সংশ্লিষ্ট স্কুলের পক্ষ থেকে অবসরের তারিখ জানিয়ে দেওয়া হয় শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের। তার পরে অবসরের ১৫ মাস বাকি থাকতে জেলা পরিদর্শকের দফতরে যাবতীয় তথ্য জমা দেওয়ার কথা। জেলা পরিদর্শকের অফিস থেকে সেই সব তথ্য চলে যায় শিক্ষা দফতরে। তারও পরে পেনশন চালু হতে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে যায়। গোটা প্রক্রিয়া নিয়ে বারে বারেই দীর্ঘসূত্রিতার অভিযোগ উঠেছে। অবসরের পরে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মীদের পেনশন পেতে কম করে ছ’মাস লেগে যাচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে সময় লাগে অনেক বেশি।
জেলা পরিদর্শকের অফিস, সল্টলেকের পূর্ত ভবনে পেনশন অফিসে বারবার চক্কর কাটতে হয় অবসরপ্রাপ্তদের। কবে পেনশন মিলবে, তার নিশ্চয়তা থাকে না।
স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এই দীর্ঘসূত্রতায় দাঁড়ি টানতেই তৈরি হচ্ছে ই-পেনশনের পরিকাঠামো। মাস কয়েকের মধ্যেই এই প্রক্রিয়া চালু হয়ে যাবে বলে ওই দফতরের কর্তাদের আশা। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, ই-পেনশন চালু হলে অবসরের ১২ মাস আগেই শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীদের মোবাইল ফোনে এসএমএস করে সব তথ্য জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হবে। গোটা বিষয়টি অনলাইনে চালু করার জন্য এখন পেনশন সংক্রান্ত আলাদা ওয়েবসাইট তৈরির প্রক্রিয়া চলেছে। অবসরের আগে সেখানে লগ-ইন করে যাবতীয় তথ্য জমা দিতে হবে। শিক্ষক-শিক্ষিকা ও শিক্ষাকর্মীরা যাতে অবসরের দিনেই পেনশন সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় নির্দেশ পেয়ে যান, সেই জন্যই এই ব্যবস্থা।
সরকারের এই উদ্যোগে খুশি রাজ্যের শিক্ষক সংগঠনগুলি। নিখিল বঙ্গ শিক্ষক সমিতির কলকাতা জেলা সম্পাদক মৃন্ময় রায় বলেন, ‘‘পেনশন পাওয়ার পদ্ধতি যদি সরল করা হয়, সেটা সব সময়েই সমর্থনযোগ্য।’’
বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির সহ-সাধারণ সম্পাদক স্বপন মণ্ডল বলেন, ‘‘আমরা অবসরের সঙ্গে সঙ্গে পেনশন দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছি দীর্ঘদিন ধরে। ই-পেনশন চালু হলে রাজ্যের সরকার পোষিত এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত ১৩ হাজারেরও বেশি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষাকর্মীদের খুবই সুবিধে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy