Advertisement
১৭ মে ২০২৪

পুলিশের তাড়ায় ট্রান্সফর্মারে, তার ছুঁয়ে মৃত যুবক

নাবালিকাকে অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এক যুবক। পরে থানা থেকে পালিয়ে পুলিশের তাড়ায় উঠে পড়েন বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারে। সেখানেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার এই ঘটনা ঘিরে তেতে ওঠে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার বেলিয়াবেড়া।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৫৮
Share: Save:

নাবালিকাকে অপহরণ করে বিয়ের অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন এক যুবক। পরে থানা থেকে পালিয়ে পুলিশের তাড়ায় উঠে পড়েন বিদ্যুতের ট্রান্সফর্মারে। সেখানেই বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। রবিবার এই ঘটনা ঘিরে তেতে ওঠে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঝাড়গ্রাম মহকুমার বেলিয়াবেড়া।

ঘটনায় পুলিশের দিকে আঙুল তুলেছেন মৃত আশিস সাউ (২৪)-এর পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, লক-আপে পুলিশি অত্যাচার সহ্য করতে না পেরেই আশিস থানা থেকে পালিয়ে তিনশো মিটার দূরে ট্রান্সফর্মারে উঠে পড়েন, তখনও পুলিশ তাঁকে প্রাণে মারার হুমকি দেয়। ভয়ে হাই-ভোল্টেজ বিদ্যুতের তার ধরে ফেলায় তড়িদাহত হয়ে মৃত্যু হয় আশিসের। এই মর্মে বেলিয়াবেড়া থানায় অভিযোগও দায়ের করেছেন আশিসের বাবা পঙ্কজ সাউ। ছোটখাটো হার্ডওয়্যার দোকানের মালিক পঙ্কজবাবু বলছিলেন, “ছেলেকে থানার মধ্যে বেধড়ক মারধর করা হয়েছে। পরে হুমকিও দেওয়া হয়। না হলে এ রকম ঘটত না।” স্থানীয় বাসিন্দা সুবীর নায়েকও বলেন, “পুলিশ বারবার ওকে নামতে বলছিল। না নামলে গুলি করার হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে ওই যুবক তার ধরে ঝুলে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে ছিটকে নীচে পড়েন।”

পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে এ দিন বেলিয়াবেড়ার তপসিয়ায় অবরোধ করা হয় ৯ নম্বর রাজ্য সড়ক। বেলিয়াবেড়া থানার ওসি দেবাংশু ভৌমিককে গ্রেফতারের দাবি তোলেন স্থানীয়রা। স্থানীয় তপসিয়া হাসপাতাল থেকে আশিসের মৃতদেহ বের করার সময় একাংশ গ্রামবাসী পুলিশের গাড়ির সামনে শুয়ে পড়েন।

পুলিশ অবশ্য মারধরের কথা মানতে নারাজ। তাদের বক্তব্য, এখন আর অভিযুক্তকে হাতকড়া পরানো যায় না। তাই কেউ যদি পালিয়ে গিয়ে ট্রান্সফর্মারে উঠে পড়েন, সেখানে কিছু করার থাকে না। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার তথা ঝাড়গ্রামের ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘থানা থেকে পালিয়ে ওই যুবক ট্রান্সফর্মারে উঠে পড়েছিলেন। তারপর বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান। এটা দুর্ঘটনা।’’ তবে পুলিশ সূত্রে খবর, ঘটনার পরেই বেলিয়াবেড়ার ওসি দেবাংশু ভৌমিক এবং মামলার তদন্তকারী অফিসার অনুপ হেমব্রমকে মেদিনীপুরে মেদিনীপুর পুলিশ লাইনে ‘ক্লোজ’ করা হয়েছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, বেলিয়াবেড়ার চোনাবেড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা আশিসের সঙ্গে এক কিশোরীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। একাদশ শ্রেণির ওই ছাত্রী গত শুক্রবার স্কুল থেকে আর বাড়ি ফেরেনি। তার বাড়ির লোক খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, ওই কিশোরী আশিসের সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে মন্দিরে বিয়ে করে নিয়েছে। বিয়ের পরে কিশোরীকে নিয়ে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসেন আশিস। ইতিমধ্যে ওই কিশোরীর পরিবারের তরফে আশিসের বিরুদ্ধে অপহরণ ও নাবালিকাকে বিয়ে করার অভিযোগ দায়ের করা হয়।

আশিসের পরিজনেদের দাবি, শুক্রবার রাতেই বেলিয়াবেড়া থানার ওসি দেবাংশু ভৌমিক তাঁদের বাড়িতে এসে আশিস ও ওই কিশোরীকে থানায় তুলে নিয়ে যান। শনিবার কিশোরীকে ঝাড়গ্রাম আদালতে পাঠায় পুলিশ। আদালত মেয়েটিকে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়ে দেয়। আর কিশোরীর বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে শনিবার সন্ধ্যায় গ্রেফতার করা হয় আশিসকে। রবিবার তাঁকে ঝাড়গ্রাম আদালতে পাঠানোর কথা ছিল। পুলিশের এক সূত্রে খবর, ঘটনার তদন্তভার সিআইডিকে দেওয়া হবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

transformer
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE