ভোটে থাকুন, নোটে নয়।
ভোট দিয়ে দেশ গড়ুন, নোটের ফাঁদ এড়িয়ে চলুন।
ভোটারদের সচেতন করতে এ বার এই সব স্লোগান প্রচারে নেমেছে নির্বাচন কমিশন। এতে অনেকের মনেই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে এই উপদেশ মানা না-হলে কী করতে পারে কমিশন? দেশের স্বীকৃত রাজনৈতিক দলগুলি কমিশনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাচ্ছে। কিন্তু পাশাপাশি এ কথাও বলেছে, নোটের খেলার নালিশ উঠলে কমিশনের প্রায় কিছুই করার থাকে না। কারণ, তাদের হাতে সেই আইনি ক্ষমতাটুকুই নেই।
রাজনৈতিক দলগুলির বাঁকা কথা ভোটে যে টাকার খেলা চলে, ওই স্লোগানের মধ্য দিয়েই কার্যত তা মেনে নিচ্ছে কমিশন। তাদের মতে, দেশে ১৯৫২ সালে সাধারণ নির্বাচন শুরুর পর থেকে প্রতি ভোটেই এই অভিযোগ উঠেছে। কিছু ক্ষেত্রে প্রাথমিক তদন্তের পরে অভিযোগ আরও দৃঢ় হয়েছে। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি (আইপিসি), ফৌজদারি কার্যবিধি (সিআরপিসি), অথবা আয়কর আইনে এফআইআর করে মামলা করার বেশি নির্বাচন কমিশনের কিছুই করার থাকে না। আর ভোট মিটে গেলে মামলার পাহাড়ে সেগুলি দিব্যি চাপা পড়ে যায়। কমিশনও তাই নোটের ফাঁদে না-পড়ার আবেদন জানিয়েই ক্ষান্ত থাকছে। বিধিভঙ্গ হলে অভিযুক্তের কী শাস্তি হতে পারে, তা নিয়ে মুখ বন্ধ তাদের।
যাঁদের উদ্দেশে কমিশনের এই প্রচার, সেই ভোটারদের একটি অংশও মনে করেন, ‘নির্বাচনের খরচ’ বলে প্রার্থীরা সাদা-কালোয় যা দেখান, তা নেহাতই নিয়ম রক্ষার্থে বানানো। আসল খরচ তার বহু গুণ। রাজনৈতিক দলগুলি কমিশনের ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুললেও ভোটাররা কিন্তু তাদের বিরুদ্ধেই আঙুল তুলেছেন। প্রার্থীদের প্রচারের জৌলুস ছাড়াও ভোট কিনতে দলগুলি নানা প্রলোভন, এমনকী নগদ টাকা বিলি করে বলেও মত তাঁদের।
কমিশনের এক্তিয়ার সম্পর্কে ওয়াকিবহালরা বলছেন, টাকার খেলা তো দূরের কথা, সাধারণ নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করলেও এফআইআর ছাড়া আর কিছুই করতে পারে না কমিশন। অতীতে সিপিএমের প্রয়াত নেতা সুভাষ চক্রবর্তী, বিজেপি-র বরুণ গাঁধীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগে এফআইআর করেছিল কমিশন। পরে সব মামলা ধামাচাপা পড়েছে। গত বিধানসভা নির্বাচনের সময় সিপিএমের অনিল বসু-র বিরুদ্ধে অশালীন মন্তব্যের অভিযোগ উঠলেও কমিশন কোনও ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এ বারেও তৃণমূলের সৌগত রায়, অনুব্রত মণ্ডল বা সিপিএমের আনিসুর রহমানের বিরুদ্ধে বক্তৃতায় খারাপ ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এই নিয়ে কমিশন ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হলেও শাস্তি দেওয়ার এক্তিয়ার কমিশনের নেই। সে জন্যই কমিশনের প্রচার কতটা কাজের হবে, তা নিয়ে সন্দিগ্ধ রাজনৈতিক দলের নেতারা। তাঁদের কথায়, একমাত্র আইন সংশোধন করে কমিশনের হাতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষমতা না দিলে শত প্রচারেও লাভ হবে না।
যেমন, তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “আমরা ভোটে দুবৃর্ত্তায়ন ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে। আমরা চাই, রাষ্ট্রই ভোটের খরচ বহন করুক।” তিনি জানান, তৃণমূলের নির্বাচনী ইস্তাহারেই এই দাবি তোলা হয়েছে।
সিপিএমের রবীন দেব বলেন, “আমরা বরাবর দুবৃর্ত্তায়ন ও টাকার খেলা নিয়ে বলে এসেছি। এ সব বন্ধ করতে হলে শুধু প্রচার নয়, উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।” সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মঞ্জুকুমার মজুমদারের বক্তব্য, “এ বারের নির্বাচনে রাজনৈতিক দলগুলি সাড়ে ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ করবে বলে শুনলাম। এত টাকা আসছে কোথা থেকে? নিছক স্লোগান-বিজ্ঞাপন দিয়ে এ রোখা যাবে না।”
প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্যের মতে, “নির্বাচন কমিশনের প্রচারকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে স্লোগানে না থেমে সদর্থক পদক্ষেপও করতে হবে।” বিজেপি-র রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “অনেক জায়গাতেই যে টাকা দিয়ে ভোট কেনা হয়, বহু বার তা ধরা পড়েছে। সেটা বন্ধ হলে তো ভাল।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy