Advertisement
১৯ মে ২০২৪

মমতাকে ছেড়ে কুণালের তোপ মুকুলকে

সারদা-কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়া ইস্তক তিনি যা করে আসছেন, এ বার তাতে কিছুটা ব্যতিক্রম! বিড়ম্বনার বদলে শাসকদলকে কিছুটা যেন স্বস্তিই দিলেন কুণাল ঘোষ! সূত্র, মুকুল রায়। তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল এত দিন আদালতে যাতায়াতের পথে নানা মন্তব্যে বারবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে বিঁধেছেন। খোদ তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রেয়াত করেননি। তবে সোমবার তাঁর তোপের মুখ ঘুরে গিয়েছে তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দিকে, যার সঙ্গে দলের সম্পর্ক ইদানীং তলানিতে।

সোমবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে কুণাল ঘোষ।  নিজস্ব চিত্র

সোমবার ব্যাঙ্কশাল কোর্ট চত্বরে কুণাল ঘোষ। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
Share: Save:

সারদা-কেলেঙ্কারিতে গ্রেফতার হওয়া ইস্তক তিনি যা করে আসছেন, এ বার তাতে কিছুটা ব্যতিক্রম! বিড়ম্বনার বদলে শাসকদলকে কিছুটা যেন স্বস্তিই দিলেন কুণাল ঘোষ! সূত্র, মুকুল রায়।

তৃণমূলের সাসপেন্ড হওয়া সাংসদ কুণাল এত দিন আদালতে যাতায়াতের পথে নানা মন্তব্যে বারবার তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে বিঁধেছেন। খোদ তৃণমূলনেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও রেয়াত করেননি। তবে সোমবার তাঁর তোপের মুখ ঘুরে গিয়েছে তৃণমূলের সদ্য প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের দিকে, যার সঙ্গে দলের সম্পর্ক ইদানীং তলানিতে। “সারদা কেলেঙ্কারি সামনে আসার পরে মুকুল কেন এত দিন চুপ ছিলেন?” এ দিন প্রশ্ন তুলেছেন কুণাল। পাশাপাশি পুলিশ ভ্যানের ভিতর থেকে চিৎকার করে ঘোষণা করেছেন, “আমি এখনও তৃণমূলের এক জন সৈনিক। দল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতেই তৈরি।”

এ দিন কলকাতার নগর দায়রা আদালতে সারদা ট্যুরস অ্যান্ড ট্র্যাভেলস মামলায় কুণালকে হাজির করা হয়েছিল। বিকেলে জেলে ফেরার জন্য গাড়িতে ওঠার সময়ে মুকুল রায় প্রসঙ্গে সংবাদমাধ্যমের প্রশ্নের মুখে পড়েন তিনি। কুণাল বলেন, “অর্থ লগ্নি সংস্থা নিয়ে তদন্ত কমিশন চেয়ে দলকে চিঠি দিয়েছিলাম। তখন মুকুল রায়েরা কী করছিলেন?”

প্রসঙ্গত, কুণালের ওই চিঠি লেখার সময়ে তৃণমূলে মুকুলই ছিলেন দু’নম্বর। কিন্তু নেত্রীর নির্দেশে সেই মুকুল এই মুহূর্তে দলে থেকেও ব্রাত্য। দল ও সংসদে তাঁর যাবতীয় পদ ও ক্ষমতা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এ হেন প্রেক্ষাপটে কুণালের এ দিনের মন্তব্য কার্যত দিদির পক্ষেই গেল বলে দলের অন্দরের অভিমত।

সারদা-জালে জড়ানোর পরে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)-কে চিঠি লিখে দলের একাধিক নেতার নাম করেছেন কুণাল। সেই থেকে গত প্রায় দেড় বছর ধরে শুনানির কারণে আদালতে যাতায়াতের পথে যত বারই তিনি সুযোগ পেয়েছেন, মুখ খুলেছেন তৃণমূল নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। কখনও তাঁর লক্ষ্য হয়েছেন মন্ত্রী মদন মিত্র, কখনও প্রাক্তন পুলিশ-কর্তা রজত মজুমদার। কখনও আবার ‘সারদা থেকে সবচেয়ে বেশি সুবিধা’ নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর দিকে আঙুল তুলে তাঁর পদত্যাগও দাবি করেছেন।


একই আদালতে ভ্যান থেকে নামছেন সুদীপ্ত সেন। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক

অথচ তাঁরই গলায় এ দিন আগাগোড়া অন্য সুর! আদালতের ভিতরে কুণাল বলেন, “সিবিআই গোড়ায় অনেক ভাল তদন্ত করছিল। ইদানীং রাজনীতি ঢুকে তদন্ত ঢাকা পড়ছে।” অনেকের মতে, এই মন্তব্যের মাধ্যমে সিবিআই-তদন্তের উপরে ‘রাজনৈতিক চাপের’ কথাই কুণাল বলতে চেয়েছেন, ঘটনাচক্রে যা কিনা তৃণমূলেরও বক্তব্য। একই সঙ্গে সৃঞ্জয় বসু, রজত মজুমদারদের জামিনলাভের প্রসঙ্গ তুলে তাঁর অভিযোগ, “তদন্তের নামে প্রহসন হচ্ছে!”

এর পরেই কুণাল বলেন, “আমি সাংসদ। জেলে বন্দি থাকায় সংসদে হাজির হতে পারছি না। সারদা কেলেঙ্কারিতে সিবিআই আরও কয়েক জন সাংসদকে জেরা করেছে। পরেও ফের করতে পারে। কিন্তু তাঁরা তো সংসদে হাজির হচ্ছেন!” উল্লেখ্য, মুকুল রায়ও তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ, এবং তাঁকে সল্টলেকে সিজিও কমপ্লেক্সের দফতরে ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে সিবিআই।

পুলিশ অবশ্য এ দিনও যথারীতি কুণালের মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করে গিয়েছে। তিতিবিরক্ত কুণাল এক সময়ে পুলিশকর্মীদের উদ্দেশে বলে ওঠেন, “আমি তো মামলা নিয়ে কিছু বলছি না। তা-ও আপনারা আটকাবেন!” বাধার মধ্যেই নগর দায়রা আদালতে ঢোকার সময় কুণাল বলেন, “দলের দুর্দিনে, কঠিন সময়ে মমতাদি ও মুকুলদার সঙ্গে সময় কাটানোর অভিজ্ঞতা আমার রয়েছে।”

কুণাল, সারদা-কর্ণধার সুদীপ্ত সেন ও সুদীপ্তের ‘ছায়াসঙ্গিনী’ দেবযানী মুখোপাধ্যায়ের জামিন-আর্জি খারিজ করে নগর দায়রা আদালতের সিবিআই বিচারক অরবিন্দ মিশ্র তাঁদের ১৩ মার্চ পর্যন্ত জেল হেফাজত দিয়েছেন। কুণাল অভিযোগ করেছিলেন, প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষ তাঁর সাংসদ-ভাতা সংক্রান্ত অ্যাকাউন্টের চেকে সই করতে দিচ্ছেন না। অথচ এই অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সারদা মামলার কোনও যোগ নেই। বিচারক এ বিষয়ে জেল সুপারের রিপোর্ট চেয়েছেন। সুপারকে কারা-বিধি মেনে কাজ করার নির্দেশও দিয়েছে আদালত।

এ দিন নগর দায়রা আদালতে হাজিরার আগে সারদার সংবাদমাধ্যম সংক্রান্ত পার্ক স্ট্রিট থানার এক মামলায় কুণাল সুদীপ্তকে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে তোলা হয়েছিল। আদালত এই মামলার চার্জ গঠন আগামী ১৫ মে পর্যন্ত স্থগিত রেখেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE