Advertisement
১৭ মে ২০২৪

রাজধানীর সভায় ভিড় বাড়াতে ঝক্কির যাত্রা

সব মিলিয়ে লোক ছিল মেরেকেটে এগারোশো। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই এসেছিলেন অন্তত ন’শো। বৃহস্পতিবার দিল্লির যন্তর মন্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘রাহুল গাঁধী’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনার টানে! রাজধানীতে যুবরাজের অভিষেক দেখতে হ্যাপা পোহাতে হয়েছে বিস্তর। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা সমরেশ মণ্ডলের কথাই ধরা যাক। বাসে চেপে একটানা দিল্লি এসেছেন।

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রাজীব বসুর তোলা ছবি।

তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার রাজীব বসুর তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৪ ০৩:১২
Share: Save:

সব মিলিয়ে লোক ছিল মেরেকেটে এগারোশো। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ থেকেই এসেছিলেন অন্তত ন’শো। বৃহস্পতিবার দিল্লির যন্তর মন্তরে তৃণমূল কংগ্রেসের ‘রাহুল গাঁধী’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তৃতা শোনার টানে!

রাজধানীতে যুবরাজের অভিষেক দেখতে হ্যাপা পোহাতে হয়েছে বিস্তর। সুন্দরবনের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বাসিন্দা সমরেশ মণ্ডলের কথাই ধরা যাক। বাসে চেপে একটানা দিল্লি এসেছেন। তিন দিনের পথশ্রমের পরে দম ফেলার ফুরসতটুকু মেলেনি। বাস থেকে নেমে স্ট্যান্ডের কাছের ‘সুলভ’-এ সকালের কম্মোটুকু কোনওমতে সেরেই সটান যন্তর মন্তর। গলা বসে গিয়েছে। তবু ভাঙা গলা নিয়েই চার ঘণ্টা স্লোগান দিয়েছেন, ‘অভিষেক ব্যানার্জি জিন্দাবাদ’।

মোটামুটি তিন রকম ভাবে গত কাল দিল্লিতে লোক এনেছিলেন তৃণমূলের ম্যানেজাররা। সুন্দরবনের মতোই বাস এসেছিল বর্ধমান, দুর্গাপুর আর উত্তরবঙ্গের কিছু জেলা থেকে। দ্বিতীয় দল এসেছে ট্রেনে। এঁরা মোটের উপর দলের নিচু তলার কর্মী। সাংসদ, বিধায়করা বাদে বড় মাপের নেতারাও এসেছেন বিমানে। তৃণমূলের একটি সূত্র বলছে, বাস-ট্রেনের ভাড়া, থাকাখাওয়া, এক দিন দিল্লি দেখার খরচ সব মিলিয়ে লেগেছে লাখ বিশেক টাকা।

যা শুনে দিল্লিতে বিভিন্ন আঞ্চলিক জনসভায় লোক সাপ্লাই করেন যাঁরা, তাঁরা বলছেন, এর অর্ধেকের অর্ধেক খরচেই কাজ সেরে ফেলা যেত। তেমনই এক সাপ্লায়ারের কথায়, “এ রকম জনসভার আগে নেতারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। কবে, কোথায় সভা আর কত লোক লাগবে জেনে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা থেকে লোক নিয়ে আসি আমরা।” লোকসভা ভোটের সময় তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিতের বাইক মিছিলে ভিড় জমানোর ভার নিয়েছিলেন এমনই এক ফোড়ে।

ভাড়া করা লোক হলেও পেশাদারিত্বের অবশ্য কোনও অভাব নেই। সভায় বা সেখানে আসার পথে মিছিলে কী স্লোগান দিতে হবে তা রীতিমতো শিখিয়ে পড়িয়ে দেওয়া হয়।

সব মিলিয়ে লোকপিছু খরচ সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো টাকা। অতএব যন্তর মন্তরে ন’শো লোক আনতে খরচ পড়তো বড়জোর সাড়ে চার লাখ টাকা।

শুনেই ‘শিউরে’ উঠছেন তৃণমূল যুবার নেতারা। তাঁদের দাবি, আদর্শের টানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে অভিষেকের জনসভায় ছুটে এসেছেন তৃণমূল সমর্থকেরা। টাকা দিয়ে লোক ভাড়া করার প্রশ্নই ওঠে না!

তৃণমূল যুবার টি শার্ট পরা ষাটোর্ধ্ব এক প্রৌঢ় অবশ্য মুফতে আধ বেলা দিল্লি দেখার টোপের কথাটা কবুল করে ফেললেন। এই প্রথম বার রাজধানীতে পা রাখা। তাই অভিষেকের বক্তৃতা শেষ হতেই তড়িঘড়ি চলে গিয়েছিলেন খাওয়ার তাঁবুতে। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ের বক্তৃতা শোনারও তর সয়নি। (বস্তুত মুকুল যখন বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, তখন মাঠের এক কোণে খাওয়ার তাঁবু ভিড়ের ঠেলায় ভেঙে পড়ার জোগাড়) তার পরেই বেরিয়ে পড়েছিলেন দিল্লি দর্শনে। তার পর করোলবাগের ধর্মশালায় রাত কাটিয়ে আজ সকালে ফের কলকাতার পথে।

কিন্তু ‘যুবরাজের’ বক্তৃতা তো রাজ্যে বসেই শোনা যেত। তার জন্য এক কষ্ট করার কী দরকার ছিল!

আর রাজধানীর মানুষদের বার্তা দেওয়াই যদি লক্ষ্য হয়, তা হলে তাঁরা তো অধরাই থেকে গেলেন। “দেখবেন এক দিন দিল্লির লোকও গিয়ে কলকাতায় এই রকম ভিড় করবে আমাদের নেতার বক্তৃতা শুনতে” রাজধানী ছাড়ার আগে গর্বিত গলায় বলে গেলেন মেদিনীপুরের সুকুমার গুছাইত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC abhishek bandyopadhyay Yuba
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE