Advertisement
১৬ মে ২০২৪

রাজনৈতিক সভায় যাবেন না ছিটমহলবাসীরা

ছিটমহল বিনিময় নিয়ে রাজনীতি চাইছেন না ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির বাসিন্দারা। ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহাল বিনিময় কমিটি’র অধীনে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছেন ছিটমহলবাসীরা। আগামী দিনে তাই সংগঠনগত ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৪ ০৪:০৭
Share: Save:

ছিটমহল বিনিময় নিয়ে রাজনীতি চাইছেন না ভারত ও বাংলাদেশের ছিটমহলগুলির বাসিন্দারা। ‘ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহাল বিনিময় কমিটি’র অধীনে সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে সাফল্যের কাছাকাছি পৌঁছতে পেরেছেন ছিটমহলবাসীরা। আগামী দিনে তাই সংগঠনগত ভাবে কোনও রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশে যাবেন না বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।

ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া খানিক এগোলেও মূল কাজ এখনও বহু বাকি। অথচ ছিটমহল বিনিময়ের কৃতিত্ব নিতে আসরে নেমে পড়েছে একের পর এক রাজনৈতিক দল। যে বিজেপি ও তৃণমূল এত দিন সংসদের ভিতরে বাইরে ছিটমহল বিনিময়ের তীব্র বিরোধিতা করেছে, এখন কৃতিত্বের ভাগ নিতে তারাই ময়দানে নেমে তাল ঠুকছে। তাই আশঙ্কার মেঘ জমেছে ছিটমহলের আকাশে। কারণ দলাদলি থেকে যুযুধান পরিস্থিতি তৈরি হলে পরিস্থিতি যে অন্য দিকে মোড় নিতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝছেন ছিটমহলের বাসিন্দারা। অবস্থানগত অসুবিধার জন্য ছিটমহলে কোনও দেশের পুলিশ যায় না। তাই সেখানে রাজনৈতিক গোলমাল বা রক্তারক্তি হলে কী পরিস্থিতি তৈরি হবে, তা ভেবে শঙ্কিত ছিটমহলবাসী।

ছিটমহল বিনিময় কমিটির নেতা দীপ্তিমান সেনগুপ্ত বলেন, “সব রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রেই আমাদের একই বক্তব্য। বিষয়টি নিয়ে আশার আলো দেখা গেলেও এখনও ছিটমহল বিনিময়ের মূল প্রক্রিয়াটি শুরুই হয়নি। তার জন্য সময় লাগবে। এখনই সেখানে রাজনৈতিক বিভাজন শুরু হলে তা বাসিন্দাদের ক্ষেত্রে বিপদের হতে পারে। ছিটমহলগুলিতে এখনও আইনের শাসন নেই। রাজনৈতিক সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হলে তা মারাত্মক আকার নিতে পারে। সেই জন্যই আমাদের এই সিদ্ধান্ত।”

ছিটমহল লাগোয়া নয়ারহাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সভা করেছেন বৃহস্পতিবার। আগামী ১১ ডিসেম্বর মশালদহ ছিটমহলের কাছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহের সভা করার কথা। ওই সভার প্রাক্কালে ছিটমহল বিনিময় কমিটির এই অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক নিখিলরঞ্জন দে-র দাবি, “ছিটমহল বিনিময় নিয়ে কেন্দ্রের ভূমিকার কথা জানাতে দলীয় ভাবে ওই সভা করবেন রাহুলবাবু। বাসিন্দাদের ওই সভায় যোগ দেওয়ার আবেদন জানাতে মশালডাঙা ছিটে যাই। বাসিন্দারা জানান, দীপ্তিমানবাবু তাঁদের যেতে বারণ করেছেন।” তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের সঙ্গে দীপ্তিমানবাবুর যোগসাজশ রয়েছে। আগের সভায় সংগঠনের পতাকা নিয়েই গিয়েছিলেন ছিটমহলবাসীরা। ছিটমহল বিনিময় কমিটির আইনি উপদেষ্টা আহসান হাবিবের জবাব, “আগের সভাটি তো সরকারি অনুষ্ঠান ছিল। জেলা প্রশাসন আমন্ত্রণ করেছিল বলেই ছিটমহলবাসীরা সংগঠনের পতাকা নিয়ে সেই সভায় গিয়েছেন।”

তৃণমূলও ছিটমহল বিনিময় কমিটির সিদ্ধান্তের বিরোধী। দলের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “ছিটমহল সংলগ্ন এলাকায় রাজনৈতিক কার্জকলাপ বন্ধ রাখা সম্ভব নয়।”

ছিটমহলের বাসিন্দাদের ভোটাধিকার না থাকলেও পরোক্ষ প্রভাব রয়েছে। কোচবিহার জেলার চারটি বিধানসভা কেন্দ্র দিনহাটা, সিতাই, মাথাভাঙা এবং মেখলিগঞ্জের ভোটে ছিটমহলের বাসিন্দারা প্রভাব ফেলতে পারেন। কারণ ছিটমহল সংলগ্ন ভারতে থাকা তাঁদের আত্মীয়-স্বজনের সংখ্যা প্রচুর। এই বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে বিজেপি অনেকটাই শক্তিশালী। আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ওই এলাকাগুলিতে তারা তৃণমূলকে বেগ দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। সে দিকে লক্ষ্য রেখেই মশালডাঙার পাশে সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chhitmahal politiical meeting
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE