অ্যালেক্স ও ওমরান। ছবি: ফেসবুক।
সিরিয়ার সেই শিশু ওমরানের ‘ভাই’ হতে চাইল এক মার্কিন শিশু অ্যালেক্স। সেই আর্জি জানিয়েই ভাঙা ভাঙা ইংরেজি হরফে ৬ বছরের শিশু অ্যালেক্স খোলা চিঠি দিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে। অ্যালেক্স নিউ ইয়র্কের বাসিন্দা। একরত্তির সেই আর্তি এতটাই হৃদয় ছুঁয়ে যায় মার্কিন প্রেসিডেন্টের যে, সম্প্রতি রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ পরিষদের ৭১ তম অধিবেশনে উদ্বাস্তু সংক্রান্ত আলোচনায় ওবামা অ্যালেক্সের লেখা সেই খোলা চিঠি পড়ে শোনান। অ্যালেক্সের ফেসবুক পেজ থেকে সংশ্লিষ্ট ভিডিওটিও দেখানো হয় সেখানে।
কী লেখা ছিল অ্যালেক্সের চিঠিতে?
লেখা ছিল, ‘‘প্রিয় প্রেসিডেন্ট ওবামা, সিরিয়ার সেই শিশুটিকে মনে আছে? দয়া করে আপনি সেখানে গিয়ে তাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসবেন? আমরা তাকে একটি পরিবার দিতে চাই। সে আমার ও আমার বোনের একটা ভাই হবে। তার কাছে কোনও খেলনা নেই শুনেছি। আমি তাকে আমার বাইকটা দিয়ে দেব। কী ভাবে বাইকটা চালাতে হয়, তাও শিখিয়ে দেব। আমার বোন ক্যাথরিন বলেছে, ওমরানের জন্য প্রজাপতি আর অনেক জোনাকি ধরবে। আমাদের স্কুলেও এক জন সিরিয়ার বন্ধু আছে। তার সঙ্গে ওমরানের পরিচয় করিয়ে দেব। ওমরানের থেকে আমরা আরবি ভাষা শিখব। সে-ও আমাদের থেকে ইংরেজি শিখবে। সে এলে আমরা তিন জনে এক সঙ্গে খেলা করব।’’
অ্যালেক্স
চিঠিটা আসলে সিরিয়ার অসহায়তার মুখ সেই শিশু ওমরান দাকনিশকে নিয়ে লেখা। রুশ বিমান হানায় যে বাড়ির ধ্বংসস্তূপের তলায় চাপা পড়ে গিয়েছিল। ধ্বংসস্তূপ সরিয়ে উদ্ধার করার পর তাকে অ্যাম্বুলেন্সে বসানো হয়েছিল। অ্যাম্বুলেন্সের কমলা চেয়ারে বসে থাকা তার সেই ধুলো মাখা রক্তাক্ত চেহারার ছবি ছড়িয়ে পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়ায়। সে দিন ধ্বংসস্তূপ থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল তার দাদা আলিকেও। পরে অবশ্য আলি মারা যায়। ওমরানের সেই করুণ ছবি নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দুনিয়াকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সিরিয়ার অবস্থাটা ঠিক কতটা ভয়ানক, তা বোঝার জন্য এই একটি ছবিই যথেষ্ট। অ্যালেক্স অবশ্য এতটা গভীর ভাবে কিছু ভেবেছে বলে মনে হয় না। তবে তারই বয়সী একটি শিশুর এমন দশা তার মনে দাগ কেটেছে বলেই সরাসরি মার্কিন প্রেসিডেন্টকেই চিঠি লিখে ফেলেছে অ্যালেক্স।
অ্যালেক্সের সেই চিঠি দেখুন:
বুধবার রাষ্ট্রপুঞ্জের অধিবেশনে উদ্বাস্তু নিয়ে আলোচনার সময় ছোট্ট অ্যালেক্সের চিঠি তুলে ধরেই ওবামা উদ্বাস্তুদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘ছোট্ট অ্যালেক্স যা পারে, তা আমরা পারব না কেন? সে যদি ওমরানকে এতটা আপন করে নিতে পারে, নিজের খেলনা পর্যন্ত দিয়ে দিতে চায়, তা হলে আমরা বড়রা পারব না কেন?’’ শিশুটির থেকে শিক্ষা নিয়ে আরও বেশি করে শরণার্থীদের পাশে দাঁড়ানোর আর্জি জানান তিনি। ইতিমধ্যেই ৫০টি দেশ সম্মিলিত ভাবে আরও ৩ লক্ষ ৬০ হাজার শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এর মধ্যে পর্তুগাল, চেক প্রজাতন্ত্র, ইতালি, ফ্রান্স, স্পেন সহ মোট ৭টি দেশ গত বছরের তুলনায় আরও ১০ গুণ শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার কথাও জানিয়েছে।
অ্যালেক্সের চিঠি ‘সিরিয়ার যিশু’- শিশু ওমরানদের পাশে দাঁড়ানোর সঙ্গীর সংখ্যা কতটা বাড়াতে পারে, সেটাই এখন দেখার!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy