প্রয়াত দোমিনিক ল্যপিয়ের। ছবি সংগৃহীত।
প্রয়াত হলেন ‘সিটি অফ জয়’ গ্রন্থের লেখক দোমিনিক ল্যপিয়ের। সংবাদ সংস্থা এএফপি ল্যপিয়েরের স্ত্রীকে উদ্ধৃত করে জানায়, গত ৪ ডিসেম্বর প্রয়াত হয়েছেন ৯১ বছরের এই ফরাসি সাহিত্যিক। জন্মসূত্রে ফরাসি এই লেখক ভারতের প্রতি অমোঘ টান অনুভব করতেন। কলকাতা শহরে বসে এক রিকশাচালকের জীবনসংগ্রাম নিয়ে তিনি লিখেছিলেন ‘সিটি অফ জয়’। এই উপন্যাস রাতারাতি খ্যাতি এনে দিয়েছিল তাঁকে। পরে এই উপন্যাস অবলম্বনে সিনেমাও হয়। সেই সিনেমা নিয়ে প্রবল বিতর্কেরও সাক্ষী কলকাতা।
১৯৩১ সালের ৩০ জুলাই ফ্রান্সের শাতেলাইলোঁ প্লাজ শহরে জন্ম ল্যপিয়েরের। এক সময় আমেরিকান সাহিত্যিক ল্যারি কলিন্সের সঙ্গে যৌথ ভাবে রচিত তাঁর উপন্যাস ‘দ্য ফিফথ হর্সম্যান’ বেস্ট সেলার হয়েছিল। তাঁর ৬টি বইয়ের ৫ কোটি কপি নিমেষে বিক্রি হয়ে গিয়েছিল।
হিটলারের জার্মানি ফ্রান্সের দখল নেওয়ার পর ফরাসিদের জীবনযাপন কী ভাবে বদলে যাচ্ছিল, তা নিয়ে ল্যপিয়ের লেখেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘ইজ় প্যারিস বার্নিং?’ সমকালের নানা ঘটনা বার বার নাড়া দিয়ে গিয়েছে তাঁকে। তবে বাতানুকূল ঘর কিংবা গজদন্তমিনার থেকে বসে সমকালকে জরিপ করেননি তিনি। এখানেই হয়তো তাঁর বিশিষ্টতা। ১৯৮৪ সালের ভোপাল গ্যাস দুর্ঘটনার পর স্থানীয় মানুষদের জীবনে কী প্রভাব পড়ল, তা নিয়ে গবেষণা করতে ৩ বছর মধ্যপ্রদেশের এই শহরে কাটিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। গ্যাস দুর্ঘটনার শিকার যে সমস্ত মানুষজন, তাঁদের বয়ানে প্রাণ পেয়েছিল ‘ফাইভ পাস্ট মিডনাইট ইন ভোপাল’। এই ইতিহাসভিত্তিক গ্রন্থের অবশ্য সহলেখক ছিলেন ল্যপিয়ের।
সারা জীবনের যাবতীয় সঞ্চয় তিনি উজাড় করে দিয়েছিলেন যক্ষ্মা এবং কুষ্ঠরোগীদের চিকিৎসার জন্য। একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, বই বিক্রি বাবদ পাওয়া সব টাকা দিয়ে চব্বিশ বছরে তিনি শতাধিক রোগীর জীবন বাঁচাতে পেরেছিলেন। এর জন্য তাঁর পাঠকদের ধন্যবাদও জানিয়েছিলেন তিনি। তাঁর সাহিত্যজীবনকে স্বীকৃতি জানাতে ২০০৮ সালে ল্যপিয়েরকে পদ্মভূষণ সম্মানে ভূষিত করে ভারত সরকার।
তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থগুলির মধ্যে ‘ফ্রিডম অ্যাট মিডনাইট’, ‘অর আই উইল ড্রেস ইউ ইন মোর্নিং’, ‘ও জেরুসালেম’, বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই কাজগুলি গোটা বিশ্বে তাঁকে খ্যাতির চূড়ায় পৌঁছে দিয়েছিল। অবশ্য এ সব ছাড়িয়েও এক ফরাসির এই কলকাতা শহরকে ভালবেসে ফেলা, টানা রিকশায়, গঙ্গার ঘাটে ভাবুক হয়ে বসে থাকা এক আন্তর্জাতিক সাহিত্যিকের অভাব অনুভব করবে সারা বিশ্বের পাঠক সমাজের সঙ্গে তাঁর আনন্দনগরীও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy