Advertisement
০৪ মে ২০২৪
CERN

CERN: তিন বছর পর আবার চালু সার্ন, এবার আরও নতুন প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে এলএইচসি

সার্ন ল্যাবরেটরির লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি) যন্ত্র ঠিক দশ বছর আগে খুঁজে পেয়েছিল ঈশ্বরকণা। অনেক সাধ্যসাধনার পরে।

ফাইল চিত্র।

পথিক গুহ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০২২ ০৭:০৬
Share: Save:

বাবারও বাবা আছে!

না-হলে যে ঈশ্বরকণা— ওরফে হিগস বোসন কণা— সব পদার্থকে ভর জোগায়, সে কণা নিজে ভর পেল কোথা থেকে? এই ব্রহ্মাণ্ডে কত জিনিস! গ্রহ, তারা, গ্যালাক্সি। আমাদের এই পৃথিবীতেই কত বস্তু! পাহাড়-পর্বত, নদীনালা, মায় এই মানুষ। এ সব ঠিকঠাক আছে, সবের ভর আছে বলে। ভর আছে বলে গ্রহ, উপগ্রহ, তারা, গ্যালাক্সি, আলোর কণা ফোটনের মত দিগ্বিদিকে সেকেন্ডে তিন লক্ষ কিলোমিটার বেগে ছুটে বেড়াচ্ছে না। সব যথাস্থানে আছে ঠিকঠাক। বস্তু গড়া কণা দিয়ে। এক-একটা বস্তু কণার পাহাড়। সেই কণাকে ভর জোগায় ঈশ্বরকণা। তার ভর কে জোগায়?

জেনিভার কাছে সার্ন ল্যাবরেটরি এ বার সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে। ওই ল্যাবরেটরির লার্জ হ্যাড্রন কোলাইডার (এলএইচসি) যন্ত্র ঠিক দশ বছর আগে খুঁজে পেয়েছিল ঈশ্বরকণা। অনেক সাধ্যসাধনার পরে।

এক তো মহামূল্যবান এক আবিষ্কারের দশম বর্ষপূর্তি। তার পরে আবার ২০১৮ সালের শেষ থেকে তিন বছরের জন্য বন্ধ ছিল এলএইচসি। কাজ চলছিল যন্ত্রকে উন্নততর করার। গত এপ্রিল থেকে আবার কাজ শুরু করেছে ওই যন্ত্র। দুইয়ে মিলে সার্ন ল্যাবরেটরি এখন জমজমাট। প্রেস কানফারেন্স, নানা অনুষ্ঠান। মহা ধুমধাম।

আরও নানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজবে এলএইচসি। যেমন কোথায় গেল ‘ডার্ক ম্যাটার’? আজব অপরিচিত এক পদার্থ, যার ইঙ্গিত পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা, কিন্তু যার স্বরূপ বুঝতে পারছেন না মোটেই। অথবা, জগৎসংসার কেন ম্যাটার দিয়ে গড়া? কেন অ্যান্টিম্যাটারের লেশমাত্র নেই কোথাও? বিজ্ঞানীরা অনেক দিন জেনে গিয়েছেন, সব কণারই আছে উল্টো কণা। ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটার। যেমন ইলেকট্রন কণা এবং পজ়িট্রন কণা। সব কিছু এক, কেবল চার্জ ছাড়া। ইলেকট্রন অবং পজ়িট্রনের চার্জ পরিমাণে এক, তবে ঠিক উল্টো চরিত্রের। বিগ ব্যাং-এ ব্রহ্মাণ্ডসৃষ্টির পর ম্যাটার এবং অ্যান্টিম্যাটার ছিল সমান পরিমাণে। অ্যান্টিম্যাটার উবে গেল, আজ চারদিকে শুধু ম্যাটার। কেন?

উন্নততর এলএইচসি? বিপরীতমুখী প্রায় আলোর বেগে ধাবমান প্রোটন কণার স্রোতের মধ্যে ঠোকাঠুকি। সংঘর্ষে প্রাপ্ত এনার্জি জমাট বেঁধে কণা। তার মধ্যে আঁতিপাঁতি খোঁজ। ও ভাবেই মিলেছিল ঈশ্বরকণা বা হিগস বোসন। তিন বছর ধরে ইঞ্জিনিয়ারেরা কাজ করেছেন, শুধু বিপরীতমুখী দুই প্রোটন কণার স্রোতের অভিমুখ যাতে ছোট, আরও ছোট হয়। যাতে ঠোকাঠুকিটা আরও ভাল হয়। সংঘর্ষ জোরদার মানে বেশি এনার্জি। নতুন নতুন কণা তৈরিরবেশি সুযোগ।

হ্যাঁ, নতুন নতুন কণা চাই। বিজ্ঞানীদের উন্মুখ প্রতীক্ষা। সাম্প্রতিক পরীক্ষা দেখিয়েছে, কণা পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব— যার নাম স্ট্যান্ডার্ড মডেল— তা বানচাল হওয়ার দিকে। এক, মিউওন নামের কণা যে ধর্ম দেখাচ্ছে, তা স্ট্যান্ডার্ড মডেলের সঙ্গে মেলে না। যদিও গড়মিলটা দশমিকের পর অষ্টম স্থানে, কিন্তু তা-ই বা হবে কেন? দুই, ডাবলু নামের কণা (যা তেজষ্ক্রিয়তায় কাজে লাগে) স্ট্যান্ডার্ড মডেল যা বলছে, তার চেয়ে বেশি ভারী। স্ট্যান্ডার্ড মডেল বানচাল করতে গেলে চাই নতুন কণা। বিপরীতমুখী প্রোটনের ঠোকাঠুকিতে সে সব কণা পাওয়া যায় কি না, তা নিয়ে গভীর প্রতীক্ষায় বিজ্ঞানীরা।

বিজ্ঞান শেষ বিচারে এক প্রতিযোগিতামূলক উদ্যোগ। গবেষকে-গবেষকে, ল্যাবরেটরিতে-ল্যাবরেটরিতে, দেশে-দেশে প্রতিযোগিতা। এর অনন্য উদাহরণ হিগস বোসন আবিষ্কার। কণা পদার্থবিদ্যার নতুন নতুন আবিষ্কার প্রথম শুরু ইউরোপে। পরে আমেরিকা হয়ে দাঁড়ায় কণা পদার্থবিদ্যায় নতুন আবিষ্কারের পীঠস্থান। ইউরোপে সার্ন ল্যাবরেটরিতে হিগস বোসন আবিষ্কার যেন হৃতগৌরব পুনরুদ্ধার। আগে পাওয়া গেলেও আবিষ্কার ঘোষণার তারিখ লক্ষ্যনীয়। ২০১২ সালের৪ জুলাই। কেন? নিন্দুকেরা বলে থাকেন, ও-দিন ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস।

কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

CERN Laboratory
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE