Advertisement
০২ মে ২০২৪
Pakistan General Election 2024

পাক রাজনীতিতে নতুন মোড়, শরিফকে ঠেকাতে ‘সক্রিয়’ আইএসআই! এ বার ইমরান-বিলাবলের জোট?

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এখনও পিপিপির তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে শাহবাজকে সমর্থনের বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনও ঘোষণা করা হয়নি। ফলে ‘নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ’ নিয়ে ক্রমশ আলোচনা দানা বাঁধছে।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ১২:৪৬
Share: Save:

পাকিস্তানের রাজনীতিতে হঠাৎই সক্রিয় হয়েছে সে দেশের গুপ্তচর সংস্থা আইএসআই। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান মুসলিম লিগ-নওয়াজ় (পিএমএলএন)-কে ঠেকাতে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-এ-ইনসাফ (পিটিআই) এবং প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির দল পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) হাত মেলাতে পারে বলে জল্পনা শুরু হয়েছে। সেই জোট সরকারে একদা ইমরান-ঘনিষ্ঠ মুত্তাহিদ কওমি মুভমেন্ট পাকিস্তান (এমকিউএমপি) যোগ দিতে পারে বলেও সে দেশের সংবাদমাধ্যমেই একাংশের ইঙ্গিত।

পাক পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে এখন মোট আসন ৩৩৬। তার মধ্যে সরাসরি ভোট হওয়ার কথা ছিল ২৬৬টি আসনে। কিন্তু এক প্রার্থীর মৃত্যুর কারণে ২৬৫টি আসনে ভোট হয়েছে। বাকি ৭০টি আসন মহিলা এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য ৬০ এবং ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জন্য ১০টি আসন। পাক সংবিধান অনুযায়ী সরাসরি ভোটে যে দল যে সংখ্যক আসনে জয় পাবে, সেই অনুপাতে ওই সংরক্ষিত আসনগুলিতে প্রতিনিধি ঠিক করে দলগুলি। যদিও এই সংরক্ষিত আসনগুলির উপর সরকার গঠন নির্ভর করে না। সেই হিসাব হবে সংরক্ষিত বাদ দিয়ে ২৬৫টি আসনের মধ্যে। সেই অর্থে বর্তমান পরিস্থিতিতে ১৩৩ জন জয়ীর সমর্থন পেলেই পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ‘জাদুসংখ্যা’ ছোঁয়া সম্ভব হবে।

নির্বাচন কমিশন রাজনৈতিক দল হিসাবে স্বীকৃতি বাতিল করায় পিটিআই সরাসরি ভোটে অংশ নিতে পারেনি। যদিও ইমরানের দল সমর্থিত নির্দল প্রার্থীরা সবচেয়ে বেশি ভোট পেয়ে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির ৯৩টি আসনে জিতেছেন। নওয়াজ়ের দল পেয়েছে ৭৫টি এবং পিপিপি পেয়েছে ৫৩টি আসন। এমকিউএমপি ১৭টিতে। কট্টরপন্থী নেতা মৌলানা ফজলুর রেহমানের নেতৃত্বাধীন উলেমা-ই-ইসলাম ফাজ়ি (জেইউআইএফ) জিতেছে ৪টি আসনে। একক ভাবে কোনও দল সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজনীয় ১৩৩টি আসন না পাওয়ায় জোট সরকার গড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পাক সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরও প্রকাশ্যে জোট সরকারের পক্ষে সওয়াল করেছেন।

এই পরিস্থিতিতে নওয়াজ় ইতিমধ্যেই কয়েক দফায় পিপিপি নেতৃত্বের সঙ্গে বৈঠকের পরে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তাঁর ভাই শাহবাজের নাম ঘোষণা করেছেন। প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছিল সমঝোতার শর্ত হিসাবে আসিফ আবার পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হবেন। তাঁর ছেলে বিলাবল ভুট্টো জারদারি হবেন শাহবাজ সরকারের বিদেশমন্ত্রী। ২০২২ সালে ইমরান ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরে পিএমএলএন-পিপিপি জোট সরকারে শাহবাজ প্রধানমন্ত্রী এবং বিলাবল বিদেশমন্ত্রী হয়েছিলেন। কিন্তু এ বার ভোটে দু’দল পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এখনও পিপিপির তরফে আনুষ্ঠানিক ভাবে শাহবাজকে সমর্থনের বিষয়ে কোনও ঘোষণা করা হয়নি।

ফলে ক্রমশ ‘নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ’ নিয়ে আলোচনা দানা বাঁধছে। আইএসআই ইমরানের সঙ্গে গোপন সমঝোতা করেছে বলেও জল্পনা তৈরি হয়েছে। জেইউআইএ প্রধান মৌলানা ফজলুর সম্প্রতি একটি সাক্ষাৎকারে ২০২২ সালে ইমরান সরকারের পতনের জন্য সরাসরি তৎকালীন পাক সেনাপ্রধান কামার জাভেদ বাজওয়ার ‘চক্রান্ত’কে দুষেছেন। ফলে এক সপ্তাহ আগে শরিফের পাশে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেও তাঁর ভূমিকা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তা ছাড়া, অতীতে অনেক বারই পাক সেনার সঙ্গে আইএসআই-এর সংঘাত প্রকাশ্যে এসেছে। টানাপড়েনের এই আবহেই জেলবন্দি ইমরানের দলের নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যেই ‘জনমত’ উপেক্ষা করে শরিফকে সরকার গড়ার সুযোগ দেওয়ার বিরোধিতায় দেশ জুড়ে আন্দোলনে নেমেছেন। ফলে ক্রমশ প্রবল হচ্ছে নতুন করে অশান্তির সম্ভবনা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE