Advertisement
১৭ মে ২০২৪
দূষণ বিতর্ক

সরতেই হল ফোক্সভাগেন সিইও-কে

দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হচ্ছিল গতকাল থেকেই। শোনা যাচ্ছিল, দুনিয়াজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া দূষণ কেলেঙ্কারির জেরে শুক্রবারই সরিয়ে দেওয়া হবে ফোক্সভাগেনের সিইও মার্টিন উইন্টারকর্নকে।

মার্টিন উইন্টারকর্ন

মার্টিন উইন্টারকর্ন

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০৪:২৫
Share: Save:

দেওয়াল লিখন স্পষ্ট হচ্ছিল গতকাল থেকেই। শোনা যাচ্ছিল, দুনিয়াজুড়ে সাড়া ফেলে দেওয়া দূষণ কেলেঙ্কারির জেরে শুক্রবারই সরিয়ে দেওয়া হবে ফোক্সভাগেনের সিইও মার্টিন উইন্টারকর্নকে। কিন্তু তার আগেই, বুধবার ইস্তফা দিলেন জার্মান গাড়ি বহুজাতিকটির কর্ণধার। সেই সঙ্গে কেলেঙ্কারির কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করল জার্মান সরকারও।

উইন্টারকর্নের দাবি, ‘‘গত কয়েক দিনের ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। অবাক এই দেখে যে, এত বড় মাপে অনিয়ম ঘটেছে এখানে। ঘুরে দাঁড়াতে নতুন করে দৌড় শুরু করতে হবে ফোক্সভাগেনকে। তার পথ প্রশস্ত করতেই সরে দাঁড়াচ্ছি আমি।’’

মার্কিন মুলুকে পরীক্ষায় ধরা পড়ার পরে গতকালই সংস্থা স্বীকার করেছিল, ১ কোটি ১০ লক্ষ ডিজেল গাড়িতে ধোঁয়ায় বেরনো কার্বনের পরিমাণ কমিয়ে দেখাতে কারচুপি করেছে তারা। জানা গিয়েছিল, তাতে বসানো হয়েছে এমন সফটওয়্যার, যার কাজই দূষণ কমিয়ে দেখানো। এ দিন উইন্টারকর্ন অবাক হওয়ার কথা বলেছেন ঠিকই, কিন্তু কার নির্দেশে, কী ভাবে এত বড় মাপের কারচুপি হল, তা খোলসা করেননি।

বরং গত দু’দিনে বারবার ক্ষমা চাওয়ার সময় বলেছেন, ‘‘আমার কাছে এখনই সব প্রশ্নের উত্তর নেই। কিন্তু আমাদের গাড়ি, প্রযুক্তি, ব্র্যান্ড— এই সমস্ত কিছুর উপর চোখ বুজে আস্থা রাখেন লক্ষ লক্ষ ক্রেতা। সেই বিশ্বাস ধাক্কা খাওয়ায় আমি দুঃখিত।’’ কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাতে কাজ হল না। কেলেঙ্কারির দায় নিয়ে সেই সরতেই হল উইন্টারকর্নকে।

শুধু ক্ষমা প্রার্থনায় যে চিঁড়ে ভিজবে না, তা অবশ্য স্পষ্ট হচ্ছিল আগে থেকেই। কারণ, গত পাঁচ দিনে যেন আস্ত পৃথিবীটাই পাল্টে গিয়েছে ফোক্সভাগেনের। দূষণ কেলেঙ্কারির জেরে আমেরিকা, ইউরোপ, এমনকী এশিয়ায় একের পর এক দেশে তদন্তের মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। পরিস্থিতি এতটাই সঙ্গিন যে, শুধু দূষণ কেলেঙ্কারির ধাক্কা সামলাতেই চলতি ত্রৈমাসিকে ৭৩০ কোটি ডলার (প্রায় ৪৭,৪৫০ কোটি টাকা) সরিয়ে রাখার কথা জানাতে বাধ্য হয়েছে তারা। হুড়মুড় করে পড়ছে শেয়ার দর। এই ঘটনা ‘মেড ইন জার্মানি’র মর্যাদায় কালো ছোপ ফেলতে পারে আঁচ করে মাঠে নামতে হয়েছে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মের্কেলকে। তদন্ত শুরু করছে তাঁর সরকার।

অনেকের মতে, দূষণ কমিয়ে দেখাতে ওই ধরনের সফটওয়্যার ব্যবহারের যুক্তিগ্রাহ্য কারণ দেখাতে না পারলে, উন্নত দুনিয়ার অনেক দেশে ফৌজদারি মামলার মুখে পড়তে হবে জার্মান সংস্থাটিকে। গুনতে হবে বিপুল জরিমানা। শুধু আমেরিকাতেই সেই অঙ্ক হতে পারে ১,৮০০ কোটি ডলার। এই পরিস্থিতিতে এ দিন ৬৮ বছরের উইন্টারকর্নকে সদর দফতরে কড়া প্রশ্নের মুখে ফেলে পাঁচ সদস্যের এগ্‌জিকিউটিভ কমিটি। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, তাঁর বিদায়ও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তখনই।

তবে ফোক্সভাগেনের গাড়ি পরীক্ষার সম্ভাবনা ভারতে এখনই নেই। এ দিন কেন্দ্রীয় ভারী শিল্প মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব অম্বুজ শর্মা দিল্লি থেকে ফোনে জানান, আমেরিকা ও ভারতে দূষণ-সহ গাড়ির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতি আলাদা। মার্কিন মুলুকে গাড়ি রাস্তায় নামানোর আগে নিজেরাই পরীক্ষা চালায় সংস্থাগুলি। কিন্তু ভারতে আগে তা করে অটোমোবাইল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন, ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অটোমোটিভ টেকনোলজির মতো সরকারি সংস্থা। সেখানে উত্তীর্ণ হলে তবে বাকি গাড়ি তৈরির প্রশ্ন। তা ছাড়া, এ দেশে মাঝে মাঝে হঠাৎই পরীক্ষার মুখে পড়তে হয় গাড়ি সংস্থাগুলিকে। সব মিলিয়ে, এখনই ফোক্সভাগেনের গাড়ি নিয়ে চিন্তিত নয় কেন্দ্র। তবে বিষয়টির উপর কড়া নজর রাখছে তারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE