সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি কেনার আগে মেনে চলুন কিছু নিয়ম।—ছবি: ফাইল চিত্র।
পুজো এসেই গেল, নিজের গাড়ি করে ঠাকুর দেখা হোক কিংবা সপ্তাহান্তে একটু লং ড্রাইভ— নিজের গাড়ি থাকার সুবিধা অনেক ক্ষেত্রেই। তবে, যাঁদের এক্ষুনি নতুন গাড়ির প্রয়োজন নেই, সেটা বাজেটের কারণেই হোক কিংবা অনভিজ্ঞতা, চিন্তার কোনও কারণ নেই। অনেকেই তাদের গাড়ি বিক্রি করে দেন এবং বেশ ভাল অবস্থাতেই, যার দাম অনেকটাই কমে যায় ব্যবহৃত বলে। কেনার সময় একটু খেয়াল করে কিনলেই আপনি বেশ সস্তায় ভাল গাড়ি পেয়ে যেতে পারেন। যে বিষয়গুলি মাথায় রাখবেন, সেগুলো জেনে নিন।
গাড়ির বডির অবস্থা
গাড়ির চারপাশে হেঁটে দেখুন গাড়ির বডির অবস্থা কীরকম। কোনও ঘষে যাওয়ার দাগ অথবা কোনও ফাটল আছে কিনা,কোনও পার্ট্স রিপ্লেস করা হয়েছে কিনা এবং সেগুলির ফিটিং ঠিক আছে কিনা। ভাল করে দেখে নিন গাড়ির রং ঠিক আছে কিনা, কোথাও রং চটে যাওয়া বা ফুলে যাওয়া, শুকিয়ে ফেটে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়েছে কিনা। এগুলো দেখে আপনি প্রাথমিক ভাবে একটা আন্দাজ করতে পারবেন গাড়ির মালিক এর আগে গাড়ির কতটা যত্ন নিয়েছেন। যদি নিয়মিত ওয়াক্সিং করা থাকে, বডিতে কোনও ফাটল বা ফিটিং সংক্রান্ত গণ্ডগোল না থাকে, তবে বাহ্যিক ভাবে অন্তত গাড়ির অবস্থা ভালই বলতে হবে ।
গাড়ির তলায়, সাইডে মরচে কতটা
রাস্তাঘাটে গাড়ি চলবে, বৃষ্টিতে ভিজবে, স্বাভাবিক ভাবেই মরচে ধরবে । তবে, সেই মরচে গাড়ির কতটা ক্ষতি করেছে সেটা ভাল করে দেখে নেওয়া দরকার । ২০১৬ সালের জানুয়ারী নাগাদ একটা খবরে সবাই চমকে যায়, মাত্র ৫ লক্ষ টাকা থেকে পাওয়া যাচ্ছে অডি, বিএমডব্লিউ, মার্সেডিজ পোর্শের মত গাড়ি— কারণ ২০১৫ র শেষের দিকের চেন্নাইয়ের ভয়াবহ বন্যায় এই গাড়িগুলি অনেক দিন ধরে জলের তলায় ছিল, তাই সব ঠিক করা গেলেও এর চেসিস ভয়ানক রকম ক্ষতিগ্রস্ত, ফলে জলের দামে বিক্রি হয় গাড়িগুলো। আর সেগুলি কতটা সুরক্ষিত, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। তাই ভাল করে, প্রয়োজন হলে প্রায় শুয়ে পড়ে একবার গাড়ির তলা, দরজার ধার,বাম্পার সবটা ভাল করে দেখে নিন, যাতে কেনার পরে আপনাকে এর পিছনে অনেক খরচ করতে না হয়।
আরও পড়ুন: নিয়মিত গাড়ির স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, ভাল থাকবেন আপনিও
আরও পড়ুন: ঘণ্টায় ৪০০ কিমি গতির বাইকে চড়তে চান!
গাড়ির অভ্যন্তর
দরজা খুলে গাড়ির সবক’টি সিটে বসুন। দেখুন সেগুলি ঠিক আছে কিনা, কোনও ছিঁড়ে যাওয়ার মতোকিছু দেখতে পাচ্ছেন কিনা। ভাল করে দেখলে বুঝতে পারবেন সিট গুলি কতটা নোংরা, যদি সেটা পরিস্কার থাকে, তার মানে গাড়ির মালিক খুঁটিনাটি বিষয়ও মাথায় রাখেন।ড্রাইভারের সিটে বসুন, দেখে নিন সমস্ত লিভার ঠিক থাক কাজ করছে কিনা, সিট আপনার সুবিধে মতো এগতে পিছনে পারছেন কিনা, সিট বেল্ট ঠিক আছে কিনা। মেঝেতে ধুলো-বালি খুব সমস্যার কিছু নয়, সেটা পরিষ্কার করে নেওয়া সম্ভব ।
ইঞ্জিন, ক্লাচ, ট্রান্সমিশন, টায়ার
গাড়িটা চালিয়ে সামনের হুডটা খুলুন, ভাল করে শুনুন কোনও আলাদা অনিয়মিত আওয়াজ পাচ্ছেন কিনা। জেনে নিন কতটা নিয়মিত গাড়ির ইঞ্জিন অয়েল বদলানো হত, এর আগে তার সার্ভিসিং করা হয়েছে কিনা । গাড়ির পেপারের সঙ্গে সার্ভিসের কাগজগুলো থাকলে আরও ভাল, মিলিয়ে নিতে পারবেন। কেনার আগে অন্তত একটা টেস্ট ড্রাইভ নিয়ে দেখুন, চালিয়ে দেখুন গিয়ার চেঞ্জ করার সময় মসৃন ভাবে হচ্ছে কিনা, স্পিড বাড়ালে গাড়িতে মৃদু কম্পন টের পাচ্ছেন কিনা। বর্তমানে প্রায় সব গাড়িতেই নিজস্ব কম্পিউটার আছে, তাতেও আপনাকে জানিয়ে দেবে কোনও সমস্যা হচ্ছে কিনা ইঞ্জিন, ট্রান্সমিশন বা অন্য কোথাও । গাড়ি যখন টেস্ট ড্রাইভ করবেন, একটু স্পিড বাড়িয়ে জোরে ব্রেক কষে দেখুন, আর একবার অল্প অল্প করে ব্রেক কষুন। দেখুন গাড়ি কোনও ভাবে স্কিড করার জায়গায় যাচ্ছে কিনা, নাকি আপনি যেমন ভাবে ব্রেক কষছেন, ঠিক সেভাবেই গাড়ি দাঁড়াচ্ছে। দেখে নিন টায়ারের অবস্থা, তার ক্ষয় কতটা, কতদিন আগে লাগানো হয়েছে এবং আনুমানিক কত কিলোমিটার চলেছে।
কাগজপত্র
শুধু গাড়ি ঠিক থাকলেই নয়, তার সমস্ত কাগজপত্র ঠিক থাকাটাও দরকার । যদি গাড়ি ফিনান্সে কেনা হয়, দেখে নিন সেই হিসেব মিটে গিয়েছে কিনা ।কত বছরের ট্যাক্স দেওয়া আছে, কোনও ফাইন দেওয়া বাকি কিনা দেখে নিন । গাড়ির মালিকানা বদলালে যাতে আপনার নামে পুরনো ইনসিওরেন্স পাল্টে দেয়, দেখে নিন, না হলে নতুন ইনসিওরেন্স করিয়ে নেবেন। এছাড়াও কোথাকার গাড়ি, কোথায় কেনা, তার উপরেও বেশ কিছু নিয়ম রয়েছে, মাথায় রাখবেন সেগুলো কেনার সময়। গাড়ির অরিজিনাল কাগজপত্র, নো অবজেকশন সার্টিফিকেট (যেখানে প্রয়োজন) সব ভাল করে দেখে নেবেন ।
আরও পড়ুন: তেলের দাম আগুন, বাইক কেনার আগে মাইলেজ দেখে নিন
মোটামুটি এই ক’টি জায়গা ভাল করে দেখে নিতে পারলে আপনার কেনা সেকেন্ড হ্যান্ড গাড়ি মোটামুটি ভালই সার্ভিস দেবে বলে আন্দাজ করা যায় । কিছু ব্যাপার— যেমন গাড়ি কতটা চলেছে, ইঞ্জিনের কী অবস্থা এগুলো যদি আপনি ভাল করে বুঝতে না পারেন, সব থেকে ভাল, একজন ভাল গাড়ির মেকানিককে সঙ্গে নিয়ে যান ।আমার আপনার চোখে যেটা ধরা পরবে না, ওরা একবার দেখেই সেটা বলে দিতে পারবে।
লাইসেন্স যদি হয়ে গিয়ে থাকে, আর ঠিক করেই ফেলেছেন গাড়ি কিনবেন,তা হলে আর দেরি কেন?