সংগৃহীত চিত্র।
প্রবাসে থাকা মানেই কি শিকড় থেকে দূরে সরে যাওয়া? ফিলাডেলফিয়ার বাঙালিদের ক্ষেত্রে অন্তত এমনটা বলা যায় না। গত ৫০ বছর ধরে সেখানে বাংলা ভাষা, সাহিত্য আর সংস্কৃতির চর্চা করে চলেছে 'প্রগতি' । এই সংগঠনটি শুধু একটি দুর্গাপুজোর মণ্ডপ নয়, বরং এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে বাঙালি সংস্কৃতিকে পৌঁছে দেওয়ার একটি সেতু।
১৯৭০ সালে কয়েক জন বাঙালির উদ্যোগে একটি ছোট সরস্বতী পুজোর আয়োজন হয়েছিল ফিলাডেলফিয়ায়। সেখান থেকেই ১৯৭২ সালে ‘প্রগতি’র জন্ম। আজ পঞ্চাশ ছুঁয়ে সংগঠনটি শুধু সাংস্কৃতিক আসর নয়, একেবারে মেলবন্ধনের প্রতীক।
এর পরে পেরিয়ে গিয়েছে ৫০টি বছর। পাঁচ দশকে প্রগতি গড়ে তুলেছে তার নিজস্ব ইতিহাস। স্বাধীনতা দিবস পালন থেকে শুরু করে দুর্গাপুজো-উৎসব, বনভোজন, ফ্যাশন শো, বৈশাখী আসর— সবেতেই থাকে এই প্রবাসী বাঙালিদের মিশ্র স্বর। সময়ের চাকা বেয়ে অনেক কিছুই বদলেছে। এখন সামাজিক মাধ্যমে কলকাতার দুর্গাপুজো সরাসরিই দেখা যায়। কিন্তু ফিলাডেলফিয়ার প্রবাসী বাঙালিদের কাছে 'প্রগতি'র গুরুত্ব কমেনি। বরং, এটি যেন এক মিলনমেলা, যেখানে ঘর থেকে বহু দূরে পুরনো ও নতুন প্রজন্মের বাঙালি একত্রিত হয়।
প্রগতি’র দুর্গাপুজো তিন দিন ধরে চলে। এ বছর তার মূল আকর্ষণ কুমোরটুলির দুর্গামূর্তি। রেকর্ডের ঢাকের বাদ্যি নয়, এ বার মণ্ডপে আসল ঢাকেই কাঠি পড়বে, যা পুজোর আনন্দকে বাড়িয়ে দেবে বহু গুণ। এই আয়োজনে স্থানীয় ভারতীয় বংশোদ্ভূত শিল্পীরা তাঁদের প্রতিভা তুলে ধরেন। পাশাপাশি কলকাতা থেকেও প্রথিতযশা শিল্পীরা সামিল হন। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, রূপঙ্কর বাগচী, লোপামুদ্রা মিত্র, লগ্নজিতা চক্রবর্তী থেকে শুরু করে চন্দ্রবিন্দু ব্যান্ড— অনেকেই এখানে অনুষ্ঠান করে গিয়েছেন। এ বার ৫১তম দুর্গাপুজোয় থাকছেন জনপ্রিয় বলিউড গায়িকা মধুমন্তি বাগচী। সঙ্গে থাকবে বাংলার ব্যান্ড ‘তালপাতার সেপাই’ ও আইকনিক রক ব্যান্ড ‘পৃথিবী’র সুর।
পুজো উপলক্ষে প্রকাশিত হয় ‘প্রগতির কথা’ নামে একটি বার্ষিকী। এতে ভারত, বাংলাদেশ ও কানাডার লেখকদের লেখা থাকে। পাশাপাশি থাকে 'ছোট্ট প্রগতি' নামের একটি বিশেষ অংশ, যেখানে শিশু-কিশোরদের লেখা কবিতা, ছড়া ও ছবি ছাপা হয় । মণ্ডপের বাইরে খাবারের স্টল আর নানা পণ্যের পসরা। বই, শাড়ি, গয়না, পোশাক— সবই পাওয়া যায়। সব মিলিয়ে এই উৎসব যেন আক্ষরিক অর্থেই আনন্দমেলায় পরিণত হয়।
যে মানুষগুলি 'প্রগতি'কে এতদূর নিয়ে এসেছেন, তাঁদের অবদান চিরস্মরণীয়। তাঁদের দেখানো পথেই নতুন প্রজন্মের হাত ধরে এই সংগঠনটি আরও এগিয়ে যাবে বলে আশা রাখেন সদস্যরা। দূরে থেকেও এই আনন্দযজ্ঞের সঙ্গী হতে চাইলে প্রগতির ফেসবুক পেজে চোখ রাখা যেতেই পারে ।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।