Durga Puja Nostalgia

‘দাউ দাউ করে জ্বলে গেল প্যান্ডেল’, বললেন শাশ্বত চট্টোপাধ্যায়

এখানে যদি থাকতেন ‘অনিমেশ দত্ত’? কী করতেন তিনি?

Advertisement

আনন্দ উৎসব ডেস্ক

শেষ আপডেট: ০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৭:৫৭
Share:

এখন পুজোর সময় কলকাতায় থাকি না। চলে যাচ্ছি নর্থ বেঙ্গল। পঞ্চমীর দিন। ফিরব দশমীর পার করে।

Advertisement

এক সময় কত ঠাকুর দেখেছি! বাসে করে পাড়ার ছেলে মেয়েরা মিলে ঠাকুর দেখতে যেতাম। ৫-৭ কিলোমিটার টানা হাঁটতাম। তবে যত বিখ্যাত পুজোই দেখি না কেন, আমার কাছে আমার পাড়ার পুজোই ছিল সবার সেরা।

আগে থাকতাম রাজা বসন্ত রায় রোডে। সেখানে ছিল সঙ্ঘশক্তি ক্লাব। সেই ক্লাবের পুজোয় আমি দারুণ ভাবে জড়িয়ে ছিলাম। তখন স্কুলে পড়ি। ঠাকুর বায়না করা থেকে লরি করে ঠাকুর আনতে যাওয়া অবধি সে কী উত্তেজনা! আমাদের পাড়ায় ঠাকুর আসতেন মহালয়ার দিন। তার পর চলত এক দিকে প্যান্ডেল বাঁধা, অন্য দিকে প্রতিমা সাজানো। পুজোয় অবশ্য বাবা (শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায়) কোনও ভাবে নিজেকে জড়াতেন না।

Advertisement

এক বছর একেবারে অষ্টমীর দিন আমাদের পাড়ার পুজো মণ্ডপ দাউ দাউ করে জ্বলে গেল। আমরা তখন ঠ্যালা করে ভোগ বিলোতে বেরিয়েছি। দেখি মণ্ডপ জ্বলছে। প্রতিমাও পুড়ে গেল। মনে হয় শর্ট সার্কিট হয়েছিল। সে বছর পুজোটা পুরো মাটি হয়ে গিয়েছিল। এখানে ‘আবার প্রলয়’-এর শাশ্বত অর্থাৎ অনিমেষ দত্তর মতো মারকাটারি পুলিশ অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার থাকলেও কাজের কাজ কিছু হত না। ওটা যে পুরো দমকলের ব্যাপার!

আমরা একটা সময় গল্ফগ্রিনে চলে গেলাম। গল্ফ গ্রিনের সেন্ট্রাল পার্কে একটা সুন্দর পুজো হয়। কিন্তু আমি কোনও কালে সেখানে যুক্ত হইনি।

প্রতিমা বলতে ডাকের সাজের ঠাকুর দেখতেই আমার ভাল লাগে। থিমের পুজো ঠিক নিতে পারি না। পুজোয় আরও থাকি না এই কারণে যে, সব ব্যাপারটাই এখন লড়ালড়ির জায়গায় চলে গিয়েছে। কোন পুজো ক’টা পুরস্কার পাবে, তা নিয়েই যত চিন্তা!

পুজোর গান নিয়ে আমার একটা উন্মাদনা ছিল। হেমন্ত জেঠুর কী গান আসবে? আর ডি আর কিশোরকুমার মিলে কী গান আসবে? আশা ভোঁসলে কী গাইবেন...তা শোনার জন্য মুখিয়ে থাকতাম। সে একটা যুগ ছিল....। দূরের কোনও মণ্ডপ থেকে ভেসে আসত, সুরেলা গলায় ‘সন্ধ্যাবেলায় তুমি আমি বসে আছি দুজনে'! আজকের প্রজন্ম পুরনো গান তেমন শোনে না।

পাড়ায় বাড়ি বাড়ি ঘুরে পুজোর চাঁদাও তুলেছি আমি। ওই চাঁদার টাকাতেই পুজো হত। এখন সব বিরাট বিরাট স্পনসরশিপের ব্যাপার। চাঁদা তুলতে যাবার ব্যাপারটা তেমন নেই। এ সব দেখে পুজোয় বাইরে চলে যাওয়াই ভাল বলে মনে হয়। বিয়ের পর থেকে আমার স্ত্রীও জেনে গেছে আমি পুজোয় কলকাতা ছেড়ে থাকতেই ভালবাসি। ওরা অবশ্য পুজোয় দু' বার, তিন বার ঠাকুর দেখতে যাবার চেষ্টা করেছে। প্রত্যেক বারই গাড়ি পার্ক করার অসুবিধে হয়েছে। ঠাকুর দেখার জন্য প্রচুর হাঁটতে হয়েছে। পরে অবশ্য ওরা মানিয়ে নিয়েছে। একটা সাইকেল রিকশা ভাড়া করে অলিগলি দিয়ে ঠাকুর দেখে আসত। তবে আজকাল দেখছি কলকাতা পুলিশ খুব ভাল ভাবে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ করছে।

আর একটু বলি, এই যে বাইরে যাই, তাতেও অনেক রকম ঘটনা ঘটে। একবার মেয়ে বউ নিয়ে দার্জিলিং গিয়েছিলাম। পরে বুঝেছিলাম কী ভুল করেছি! হোটেল থেকে যেই বেরিয়েছি প্রচুর মানুষ আমাকে ছেঁকে ধরলেন। শেষ পর্যন্ত মেয়ে বউ চলে গেল গ্লেনারিজ-এ খেতে। আর আমি ফিরে এলাম হোটেলে।

অনুলিখন: সংযুক্তা বসু

এই প্রতিবেদনটি 'আনন্দ উৎসব' ফিচারের একটি অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement
আরও পড়ুন