সংগৃহীত চিত্র।
‘ভূত’ বিষয়টি কি নিজেদের মনের ভুল? না কি আতঙ্ক? সে যে যেটাই বলুক না কেন, আমি মনে করি, এই সবটার সঙ্গেই রয়েছে মনস্তাত্ত্বিক যোগ। কর্মসূত্রে আমরা প্রায় সময়তেই নতুন নতুন জায়গায় শ্যুটিং করি। ধরা যাক, কোনও নতুন জায়গা বা পুরনো বাড়িতে শ্যুট করতে গিয়েই শুনলাম, তার সঙ্গে কোনও ঘটনা বা গল্প জড়িয়ে রয়েছে। অথবা কোনও ভৌতিক উপাখ্যান ছড়িয়ে রেখেছেন কেউ। তখন প্রতি পদক্ষেপেই মনে হবে গা-টা ছমছম করছে। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে-নামতে গেলেও অস্বস্তি হচ্ছে। অথবা দরজায় হাওয়া এসে আঘাত করলেও মনে হবে, এর নেপথ্যেও লুকিয়ে কোনও রহস্য।
আর সত্যি সত্যিই এমনটা ঘটেছিল এক বার। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হচ্ছে। সবাই ভাবছে্ন কেউ হয়তো এটিকে খোলার চেষ্টা করছেন। হতেই পারে সেটা হাওয়া। অথবা দরজাটাতেই কিছু সমস্যা আছে। মেকানিক্যাল বিষয়ে কতটুকুই বা ধারণা আছে আমাদের! কিন্তু ওই যে মাথায় ঘুরছে অশরীরীদের গপ্পো, ভাবছি, সবকিছুই বুঝি তেনারাই চালনা করছে।
কিন্তু এ তো গেল, মজার ঘটনা। একটু ‘সিরিয়াস’ না হলে কি আর ভূতের গল্প পড়ে মজা আছে! আগেভাগেই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে রাখি, ‘এনার্জি’তে কিছু ক্ষেত্রে আমার বিশ্বাস আছে। বিশেষ করে বর্তমানে এই ধারণা নিয়ে যা কাটাছেঁড়া চলছে, বিশ্বাস না করে আর উপায় কী! যাই হোক, ঘটনাটা লেখা শুরু করা যাক।
‘বারাণসী জংশন’-এর শ্যুটিং করতে গিয়েছিলাম। সে কী দারুণ অভিজ্ঞতা! গোটা বারাণসী জুড়ে শ্যুটিং করেছিলাম। শুধু একটাই জায়গায় গিয়ে আমার অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। সেখানে রাজাঘাটের পাশে একটা লম্বা সিঁড়ি ছিল। গোটা জায়গার সিংহভাগেই আলো ভরপুর। কেবল ওই সিঁড়ির কাছটাই আলো-আঁধারিতে ঢাকা।
প্রথম দৃশ্য। আমি ওই সিঁড়ি দিয়ে নেমে আসছি। আমার বন্ধু দাঁড়িয়ে নীচে। তাঁর সঙ্গে দেখা করে আবার হাঁটতে শুরু করব। বেশ। ক্যামেরা চলল। সমস্ত কলাকুশলীরা নীচে। উপরে ছাদের দিকে দলের কেউ এক জন আলো ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। আর আমি এক পা, দু’পা করে নেমে আসছি সিঁড়ি দিয়ে। জানি না কেন, অদ্ভুত ভাবে শুধু নির্দিষ্ট ওই জায়গাটিতে বড়ই অস্বস্তি বোধ হচ্ছিল। গা ভারী হয়ে আসছিল। মনে হচ্ছিল যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শট শেষ করে জায়গাটি ছাড়ি। ওখানে যাওয়ার আগে অবশ্য অনেকেই সাবধান করছিলেন। ভেবেছিলাম, পুরনো সিঁড়ি ভাঙাচোরা থাকতে পারে হয়তো। কিন্তু তেমন কিছুই নয়। ফাটলও তেমন নেই। তা হলে কেন সাবধান করছিলেন সবাই? কেনই না এমন অদ্ভুত অনুভূতি হচ্ছিল? গোটা বারাণসীর আর কোনও জায়গাতে তো এমন কিছু অনুভব হয়নি!
পরে আমরা শুনেছিলাম, ওই রাজাঘাটের কাছাকাছি কোনও জায়গাতেই রাতে তন্ত্র সাধনা বা কোনও রীতিনীতি পালন করা হত। যদিও সমগ্র বারাণসীতে চোখ বোলালে এমন দৃশ্য নতুন নয়, কিন্তু নির্দিষ্ট ওই জায়গাটিকে ঘিরে কিছু প্রাচীন ইতিহাস ছিল বলেই পরে জেনেছিলাম আমরা।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।