নিজস্ব চিত্র
ভূতেদের অস্তিত্ব আছে কি নেই, সেই নিয়ে তর্ক-বিতর্কে জড়ালে রাত কাবার হয়ে যাবে। ‘তেনাদের’ উপর অগাধ বিশ্বাসী কিছু মানুষও যেমন রয়েছে, তেমনই খুঁজলে হয় তো দেখা যাবে, আত্মা অথবা অলৌকিক জিনিসে বিশ্বাসী নন, এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম না। আমার এ ক্ষেত্রে সহজ জবাব, ‘জিসকো জিসপে বিশ্বাস করনা হ্যায়, ওহ কারে!’ এখানে আমিই বা কী করতে পারি? হ্যাঁ, তবে নিজের সাম্প্রতিক এক খান অভিজ্ঞতা ভাগ করতে পারি।
না, কোনও আষাঢ়ে গপ্পো নয়, বরং এই ঘটনা আমার সঙ্গে না ঘটলে হয়তো আমিও বিশ্বাস করার আগে দু’বার ভাবতাম।
সদ্যই পাহাড়ে গিয়েছিলাম আমি আর আমার বন্ধু সিদ্ধার্থ। সে দিন ছিল মঙ্গলবার। যেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম, সেই জায়গার একটি খুব জনপ্রিয় হোটেলে গিয়ে উঠি আমরা দু’জন। সপ্তাহের ‘বার’টা উল্লেখ করলাম এই জন্যেই কারণ মঙ্গলবার হওয়ায় আমার বন্ধু হোটেলে ঢুকে স্নান সেরে প্রথমে হনুমান চালিশা পাঠ করে। আর তার পরে আমিও পড়ি। এখনও পর্যন্ত সব কিছু ঠিকঠাকই ছিল। গোল বাঁধল রাতে। শুতে গিয়ে হঠাৎ মনে হতে থাকে কেউ এক জন ঘরে আগে থেকেই ছিল, যে সেই মুহুর্তে নেই। বা বাইরে থেকে চাইলেও ঢুকতে পারছে না।
বাইরে বিশাল বারান্দা। সবটাই ঘেরা কাঁচের দেওয়ালে। ঘরের ভিতর থেকেও সাক্ষাৎ পাহাড়ের দর্শন পাওয়া যায়। এমন দৃশ্য দেখে কোথায় দারুণ ঘুম আসবে ভাবলাম। কিন্তু হল উল্টো। ওই দিন রাতে হঠাৎ হঠাৎ করেই ঘুম ভেঙে যাচ্ছিল আমার। আর যত বার চোখ খুলছি, যেন মনে হচ্ছে, ওই বারান্দাই টানছে আমাকে। ঘড়ির কাঁটা এক বার রাত দু'টোর ঘরে, এক বার ভোর চারটে বা পাঁচটা। অস্বস্তিতে আমার ওই রাতে ঘুম ভাঙছিল বার বার।
শেষ বার যখন ঘুম ভাঙে, আমার স্পষ্ট মনে আছে, ঘড়িতে তখন সকাল সাতটা বাজতে ১০। তখন ঘরের মধ্যে থইথই করছে সোনালি রোদ। বাইরের পাহাড়টাও একে বারে স্পষ্ট। সিদ্ধার্থ ঘুম থেকে উঠতেই আমি বললাম, “বারান্দার কাঁচের দরজাটা খুলে দিয়ে আয় তো। হালকা রোদ আর হাওয়ার যুগলবন্দিটা বেশ ভালই ঠেকছে…” সেই মতো কাঁচ সরিয়ে দিয়েই ও চলে গেল স্নানঘরে। আমি ভাবলাম যত ক্ষণ ও না বেরোচ্ছে, আমি আরেকটু গড়িয়ে নিই বিছানায়। ঘুমোতে যাওয়ার সময়ে বুঝতে পারলাম, গতকাল রাতে ঠিক যে বারান্দায় মনে হচ্ছিল কেউ রয়েছে, মনে হল, সেখান থেকেই কেউ যেন ঘরে এসে ঢুকল। শুধু ‘ঢুকল’ বললেও ভুল হবে, কেউ রীতিমতো আমার পাশে এসে বসল। এখানে দাঁড়িয়ে হয়তো সকলেই বলতেই পারেন, সবটাই আমার মনের ভুল। কিন্তু একটা মানুষের ঘরে ঢোকা, হেঁটে আসা, পাশে বসা- এই সব কিছু একটা অন্ধ মানুষও অনুভব করতে পারবে।
ওই মুহুর্তে আমার ঠিক কী করণীয়, তা বুঝতে না পেরেই বলতে শুরু করলাম, “আমি বুঝতে পারছি তোমার সমস্যা হচ্ছে আমাদের এখানে থাকা নিয়ে। আমি এখানে কাউকে বিরক্ত করতে আসিনি। আর করব-ও না। আমি এখনই ঘরটা ছেড়ে দিচ্ছি…” ওই কথাগুলি আমি সেদিন কার উদ্দেশে বলেছিলাম, জানি না। তবে আমার বলা শেষ হতে না হতেই মনে হল, সে উঠল এবং ঘর থেকে চলে গেল।
এর পর আর এক মুহূর্তও বেশি সময় নষ্ট করিনি। ঘর ছেড়ে দিয়েছিলাম ওই দিনই। অদ্ভুত বিষয় হল, রিসেপশনে যখন গিয়ে জানাই, ঘরে কিছু সমস্যা হচ্ছে, আমাদেরকে আর একটা কোনও প্রশ্ন করা হয়নি। দ্রুত বদলে দেওয়া হয়েছিল আমাদের ঘর। এর পর থেকে আর কোনও রাতেই আমার ঘুম ভাঙেনি।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।