শারদীয়ার গন্ধে ম ম চার পাশ। নতুন শাড়ি, পাঞ্জাবীর সঙ্গে ঢাকের বাদ্যি আর মণ্ডপ থেকে মণ্ডপ চষে ফেলার উন্মাদনা। পুজোর চার দিনে ঠাকুর দেখা যেমন বঙ্গজীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, তেমনই পেটপুজো ছাড়া সেই আনন্দ যেন অসম্পূর্ণ।
দেশপ্রিয় পার্কের জমজমাট প্যান্ডেল হোক বা তার আশপাশের অন্যান্য নামী পুজোগুলি– এত হাঁটাচলার পরে খিদে পাওয়া স্বাভাবিক। সেই খিদেয় পেট চুঁইচুঁই জনতার জন্যই তো হাজরা মোড়ে হাজির এক অনবদ্য খানা খাজানা!
আশুতোষ কলেজের উল্টো দিকেই রয়েছে ‘মহারাজা স্ন্যাক্স’। পুজোর সময়ে এই দোকানের চিকেন কাটলেট বা ফিশ ফ্রাইয়ের সুনাম কলকাতার প্রায় সব খাদ্যপ্রেমীর মুখে মুখে ফেরে। গরম গরম কাটলেটের উপরের মুচমুচে আস্তরণ আর ভিতরে তুলতুলে মাংসের স্বাদ মনকে এক অন্য জগতে নিয়ে যায়। বছরের বাকি দিনগুলোতেও কলেজপড়ুয়া থেকে অফিস ফেরতা মানুষ– সবার কাছেই এখানকার কাটলেট যেন এক প্রিয় সঙ্গী।
পাশেই রয়েছে ‘মহারানি’। এখানেও মেলে দারুণ সব মুখরোচক পদ। এই দোকানের চিকেন কাটলেট বা ফিশ ফ্রাইয়ের স্বাদেও এক অনন্য আমেজ আছে, যা এক বার খেলে বারবার ফিরে যেতে মন চাইতেই পারে। প্যান্ডেলের লাইনে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত? এই দোকানের গরম কাটলেটে এক কামড় বসিয়েই দেখুন না!
রাসবিহারী মোড়ের কাছেই সুপ্রাচীন ‘রাধু বাবু’র দোকান। কাটলেট থেকে কবিরাজী, ফিশফ্রাই থেকে চপ– এই দোকানের সুস্বাদে মজেননি এক বারও, এমন বাঙালি খুঁজে পাওয়া ভার!
দক্ষিণ কলকাতার এই অঞ্চলে ঠাকুর দেখা শিঙারা আর কচুরি ছাড়া যেন অসম্পূর্ণ। ‘শ্রীহরি’ বা ‘শর্মা সুইটস অ্যান্ড স্ন্যাক্স’-এর গরম শিঙারা আর আলুর তরকারি এক অনবদ্য জুটি। সঙ্গে যদি থাকে খাস্তা কচুরি আর ছোলার ডাল, তবে তো কথাই নেই। এই দোকানগুলির এই সব ভাজাভুজির স্বাদ এক কথায় অতুলনীয়। এই সাধারণ খাবারগুলিই হাজরার স্ট্রিট ফুডের জনপ্রিয়তা ধরে রেখেছে।
হাজরা মোড়ের আর একটু ভিতরে ঢুকলে চিত্তরঞ্জন ক্যানসার হাসপাতালের কাছে রয়েছে ‘খাঞ্চা বিরিয়ানি’। মাটির হাঁড়িতে রান্না করা এই বিরিয়ানির সুবাস দূর থেকেও মনকে টেনে আনে। চিকেন বা মাটন, যে কোনও বিরিয়ানিতেই এই দোকানের বাজিমাত। পুজোর রাতে ঠাকুর দেখার ফাঁকে একটু ভারী খাবার খেতে চাইলে এই বিরিয়ানির জুড়ি মেলা ভার।
বেহালা-হাজরা অটো স্ট্যান্ডের কাছেই রয়েছে ‘ক্লাসিক ফাস্ট ফুড সেন্টার’। এখানকার চাউমিন, মোমো এবং রোলের সুনাম বহু দিনের। পুজোর সময়ে কলেজ-ফেরত ছেলেমেয়েদের পাশাপাশি বিভিন্ন বয়সী মানুষও এখানে ভিড় জমান। কম খরচে পেটভরা সুস্বাদু খাবারের পাশাপাশি জমিয়ে আড্ডার আদর্শ স্থানও বটে।
শুধু পরিচিত দোকানগুলোই নয়, হাজরার কিছু অনামী দোকানও তাদের স্বাদের জন্য বিখ্যাত। যেমন, ‘তন্দুরি দরবার’ ঠিক সামনে একটি ছোট দোকানে পাওয়া যায় দারুণ চিকেন ফ্রাই এবং বিভিন্ন ধরনের চপ। এই অনামী দোকানটির খাবার এতটাই সুস্বাদু যে, নিত্যদিন ভিড় লেগেই থাকে। পুজোর সময়ে এই দোকান যেন আরও প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে তার সুস্বাদের পসরায়।
পুজোর দিনে হাজরা গেলে তবে হাজার খোঁজাখুঁজির দরকার নেই আর। সুলুকসন্ধান তো রইলই! (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।