পুজোয় এমন চটকদার কেক না চাখলেই নয়।— ছবি: নিজস্ব চিত্র।
একটা লম্বা কাটের পাটাতন বেয়ে জোরে এগিয়ে চলেছে লাল রঙের খেলনা গাড়িটা। জন্মদিনের পরিবেশকে আরও রঙিন করে তুলেছে এই গাড়ি। কিন্তু এমন রিমোট কন্ট্রোল গাড়ি তো আকছার দেখা যায়। এতে আর নতুন কী? গাড়ি দাঁড় করিয়ে, গায়ে ছুরি ঠেকিয়ে কেটে নেওয়া যাচ্ছে গাড়ির শরীর! চমক এখানেই।
এ গাড়ি আদতে কেক। কলকাতাকে এমন চটকদার চলন্ত কেকের সম্ভার দেখিয়েছে ‘লিটল প্লেজার প্যাটিসেরি’। দোকানের কর্ণধার শ্রীপ্রিয়া গুপ্ত বিলেতফেরত ডেজার্ট শেফ। ছোটবেলা থেকেই বাড়িতে মা-ঠাকুমার মিষ্টি তৈরি করা তাঁকে আলাদা করে ভাবাত। তিনিও তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এমন কিছু মিষ্টি তৈরি করতে চাইতেন, যা এই শহরবাসী আগে কখনও পায়নি। বিদেশ থেকে ফিরে কিছু দিন চাকরির পরেই নিজের শহরকে বেছে নিয়েছেন ডেজার্ট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার উন্মুক্ত প্রাঙ্গন হিসাবে। খুলে ফেলেছেন শহরের বুকে ডেজার্ট কাফে।
ক্রেতার পছন্দ অনুযায়ী কেকের নকশা করা, বা তাঁর ইচ্ছে অনুযায়ী কেকের মধ্যে বিশেষ ছবি তুলে ধরা— এ সব এই শহর আগেও দেখেছে। দেখেনি যা, তা হল অন্ধকারে জ্বলতে থাকা কেক বা উপর থেকে কোনও রকম অবলম্বন ছাড়াই ঝুলন্ত কেক! আর দেখেনি কেকের এমন চটকদার উপস্থাপনা।
আরও পড়ুন: খাস চিন থেকে আসে মশলাপাতি, তার পর চাপে ‘চাউম্যান’-এর রান্না
আরও পড়ুন: তিরুঅনন্তপুরমের হেঁশেল মিশেছে ‘সারফিরে দ্য কোস্টাল ক্যাফে’-তে
পুজোর মরসুমে আনন্দবাজার ডিজিটাল হাজির হয়েছিল শ্রীপ্রিয়ার ‘লিটল প্লেজার প্যাটিসেরি’-তে। শরৎ বসু রোডের এই কাফের সামনের তাকে কম করে হলেও সাজানো প্রায় ত্রিশ রকমের কেক। প্রত্যেকটাই ভিন্ন মাপ ও নকশার। প্রতিটির গায়েই ফরাসি কায়দার ‘আর্ট ডেকো’ নিয়ম মেনে সোনালি রঙের ছোঁয়া। ডেজার্টে এই আর্ট ডেকো ফর্ম আধুনিক বিশ্বে সব চেয়ে বেশি নন্দিত।
শুধু মুভিং কেক-ই নয়, কলকাতায় বসে বিদেশি প্রযুক্তির উপর ভর দিয়ে ফ্লোটিং কেক বানিয়েও তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শ্রীপ্রিয়া। ইতিমধ্যেই দেশ-বিদেশে তাঁর কেক সমাদৃত হয়েছে। সচিন তেণ্ডুলকরের জন্মদিন হোক বা খানদানি বলিউডি বিয়ে— নিজের হাতযশেই এই গ্র্যান্ড ইভেন্টেগুলোর কেকের দায়িত্ব পেয়েছেন শ্রীপ্রিয়া।
ছোট ছোট টেবল চেয়ারে সাজানো এই কাফের এক আলদা মাদকতা আছে। ছোট-বড় নানা আকারের কেক ভর্তি শো কেস আর দুধ-ক্রিমের গন্ধ ভরা চারপাশ শৈশবে টেনে নিয়ে যায়। মনে পড়ে যায়, উৎসবের আগে রঙিন কাগজে মোড়ে কেকবিলাসের কথা। বাঙালি ভোজনরসিক, সঙ্গে গুণরসিকও। তাই এই কাফের চেয়ার খুব একটা খালি যায় না। তা সে ছুটির দিন হোক বা অফিস-ফেরত বাড়ি ফেরার বিকেল। ছোট-বড় নানা আকারের পেস্ট্রি রয়েছে এদের ঝুলিতে, যার বেশির ভাগ উপাদানই আসে বাইরে থেকে।
আরও পড়ুন: এ বার পুজোয় রেস্তরাঁর মটন তৈরি হোক আপনার রান্নাঘরেই
সৃজনশীলতা, ব্রাজিলের কফি, বেলজিয়ামের চকোলেট, কলকাতার খাঁটি দুধ আর জনা ছয়েক সহকারী শেফের কেরামতিতেই শ্রীপ্রিয়ার বানানো ডেজার্ট এমন আকর্ষণীয়। দাম শুরু ৪৫ টাকা থেকে। তবে ইলেকট্রনিক ডিভাইজ ব্যবহার করা কেকগুলি ন্যূনতম ওজন তিন পাউন্ড। দাম পড়ে প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা। তবে ক্রেতা চাইলে হাজার দেড়েকের এক পাউন্ডের কেকেও বুদ্ধি আর প্রযুক্তির ঝলক দেখান শ্রীপ্রিয়া। মূলত টেক অ্যাওয়ে হলেও পুজোর সময় বসে খাওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। খোলা থাকবে রাত ১২টা অবধি। বাড়বে আসন সংখ্যাও। পুজো থেকে ভাইফোঁটা পর্যন্ত চলবে এদের উৎসবের মেনু।
ভাবেন কী করে এত স্টাইল? ‘‘হয়ে যায় আর কি! কেক খেতে ভালবাসি, তাই কী ভাবে কেক এলে আমারও ভাল লাগত, সেটা ভেবেই ক্রিয়েটিভ কিছু করার চেষ্টা করি।’’ কেকের নকশা আঁকতে আঁকতেই নরম হেসে জানিয়ে দেন শহরের ব্যস্ততম ডেজার্ট শেফ।