পুজো মানেই জমিয়ে পেটপুজো। সে কথা আর আলাদা করে বলার মতো নাকি! বন্ধু-বান্ধব আর পরিবারের সঙ্গে চুটিয়ে আড্ডা, ঠাকুর দেখার সঙ্গেই জম্পেশ ভূরিভোজে ভরা থাকে উৎসবের দিনগুলো। কিন্তু এই ভোজের আনন্দেই যদি বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বাস্থ্য?
কোলেস্টেরল, ডায়াবেটিস বা ফ্যাটি লিভারের মতো রোগ যদি শরীরে বাসা বাঁধে, তখন কি আর খুশিমনে খাওয়া যায়? চিরাচরিত তেল-ঝাল-মশলায় ভরা রান্নাই তখন বিষের মতো মনে হয়। কিন্তু দুর্গা পুজোয় মনটা যে ভাল-মন্দ খাওয়ার জন্যও ছটফট করে!
ভাবছেন, তেল ছাড়া কি আর ভাল রান্না হয়? তেল মানেই স্বাদ– এই ধারণা কিন্তু এখন বদলাচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ এখন এমন পথ খুঁজছেন, যেখানে শরীরও ভাল থাকে, আবার জিভের স্বাদও অটুট থাকে। সেই ভাবনা থেকেই, তেলবিহীন অথচ সুস্বাদু এবং অসাধারণ সব পদ তৈরি করা সম্ভব। রয়েছে কিছু কৌশল, যা পুজোর দিনগুলোতে আপনার হেঁশেলকে এ ভাবেই আরও আনন্দময় করে তুলবে।
১. ভাপা বা ভর্তার সুস্বাদ: যে কোনও শাক বা সবজিকে হালকা করে ভাপিয়ে নিন। তার পরে তাতে জিরে গুঁড়ো, ধনেপাতা, কাঁচা লঙ্কা আর পেঁয়াজ কুচি মেশান। এ বার সামান্য নুন দিয়ে ভাল করে মেখে নিলেই তৈরি হয়ে যাবে স্বাস্থ্যকর আর মুখরোচক ভর্তা। লাউ, আলু, কুমড়ো, এমনকি ডালও এ ভাবে মেখে নেওয়া যায়। ভাবুন তো, গরম ভাতে এ রকম এক বাটি তেলহীন ভর্তা, পুজোয় এর চেয়ে ভাল আর কিছু হতে পারে?
২. টক দইয়ের জাদু: তেলের বিকল্প হিসেবে টক দই ব্যবহার করতে পারেন। দইয়ের সঙ্গে আপনার পছন্দের মশলা মিশিয়ে নিন। তার পরে তাতে সবজি বা মাংস ম্যারিনেট করে রান্না করুন। এতে ঝোলও হবে, আবার তেলও লাগবে না। দইয়ের টক-মিষ্টি স্বাদ রান্নায় এক নতুন মাত্রা যোগ করবে।
৩. গোটা মশলার মন্ত্রগুপ্তি: গুঁড়ো মশলা কষানোর জন্য তেল দরকার হয়। কিন্তু গোটা মশলা ব্যবহার করলে সেই প্রয়োজন থাকে না। রান্নার শুরুতে হালকা আঁচে গোটা মশলা দিয়ে ধীরে ধীরে সবজি বা মাংস সিদ্ধ করুন। এতে রান্নার স্বাদ বজায় থাকবে, আর তেলও এড়িয়ে যাওয়া যাবে।
৪. গরম জলের খেলা: তেলের বদলে গরম জল ব্যবহার করে দেখুন। পেঁয়াজ, টোম্যাটো বা অন্যান্য উপকরণ যখন রান্না করবেন, তখন অল্প অল্প করে গরম জল দিয়ে কষান। এতে মশলার কাঁচা গন্ধ চলে যাবে আর তরকারি হবে দারুণ সুস্বাদু।
৫. লেবুর রস আর চাট মশলার ছোঁয়া: রান্না শেষে একটু লেবুর রস বা চাট মশলা ছড়িয়ে দিন। এতে খাবার আরও মজাদার লাগবে। এই ছোট কৌশলটি খাবারে একটা তাজা আর আকর্ষণীয় স্বাদ এনে দেয়।
৬. ভিনিগার-এর চমক: ভিনিগার ব্যবহার করলে মশলার স্বাদ আরও ভাল ভাবে মিশে যায়। বিশেষত মাছ বা মাংস রান্নার সময়ে সামান্য ভিনিগার দিলে তেল ছাড়াও দারুণ স্বাদ পাওয়া যায়।
এই কৌশলগুলো মেনে চললে পুজোয় তেলবিহীন হবে ভোজ। আনন্দ থেকে নিজেকে বঞ্চিতও করতে হবে না। সুস্থ থাকার সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়জনদের মন জয় করা এ বার বাঁয় হাত কা খেল! এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।