দুর্গাপুজো মানে নতুন পোশাক, ঠাকুর দেখা, আর সঙ্গে অবশ্যই কব্জি ডুবিয়ে খাওয়াদাওয়া। কলকাতার ভোজনরসিকদের জন্য এই সময়ে তাই শহরের নামজাদা রেস্তরাঁগুলি সেজে ওঠে নতুন ভাবে। তাদের বাছাই করা পদগুলি এই উৎসবে আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। চলুন, জেনে নিই তেমনই কিছু সেরা রেস্তরাঁ ও তাদের সেরা পদ সম্পর্কে।
আরসালান: ঠিকানা: পার্ক সার্কাস। সিগনেচার ডিশ: আরসালান স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি। দাম: প্রায় ৪৫০-৫৫০ টাকা। সময়: সাধারণত দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত খোলা থাকে রেস্তরাঁ। পুজোয় সেই সময়সীমা বাড়তে পারে। কেন খাবেন: কলকাতার বিরিয়ানির এক অবিসংবাদিত নাম আরসালান। এদের বিরিয়ানি হালকা মশলাযুক্ত, সুগন্ধি এবং মাংসের টুকরাগুলি অত্যন্ত নরম। আলু-সহ পরিবেশন করা হয়, যা এই বিরিয়ানির স্বাদ আরও বাড়িয়ে তোলে।
পিটার ক্যাট: ঠিকানা: পার্ক স্ট্রিট। সিগনেচার ডিশ: চেলো কবাব। দাম: প্রায় ৭০০-৯০০ টাকা। সময়: দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। কেন খাবেন: কলকাতার অন্যতম আইকনিক রেস্তরাঁ এটি। এখানকার চেলো কবাব এক কিংবদন্তি। বাটার রাইস, মাটন ও চিকেন টিক্কা, তার উপরে ডিমের পোচের অসাধারণ যুগলবন্দি যে কোনও ভোজনরসিকের মন জয় করবে।
অউধ ১৫৯০ : ঠিকানা: দেশপ্রিয় পার্ক, সল্ট লেক, নাকতলা, রাজারহাট ইত্যাদি। সিগনেচার ডিশ: অওয়াধি বিরিয়ানি। দাম: প্রায় ৪০০-৬০০ টাকা। সময়: দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৩টে, এবং সন্ধ্যা ৬:৩০ থেকে রাত ১০:৩০ পর্যন্ত। কেন খাবেন: লখনউয়ের রাজকীয় অওয়াধি খাবারের স্বাদ নিতে হলে অউধ ১৫৯০-এর বিকল্প নেই। এখানকার বিরিয়ানি মশলার সুগন্ধে ভরপুর এবং এদের রান্নার পদ্ধতি, যা 'দম-পুখত' নামে পরিচিত, তা খাবারের স্বাদ যেন আরও বাড়িয়ে তোলে।
মোকাম্বো: ঠিকানা: পার্ক স্ট্রিট। সিগনেচার ডিশ: ফিশ আ লা ডায়ানা। দাম: প্রায় ৭০০-১০০০ টাকা। সময়: দুপুর ১২টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। কেন খাবেন: সেই ১৯৫৬ সাল থেকে কলকাতার খাদ্যরসিকদের মন জয় করে আসছে মোকাম্বো। ফিশ আ লা ডায়ানা এখানকার অন্যতম জনপ্রিয় একটি পদ। এটি মূলত সুস্বাদু সসে ডোবানো মাছের ফিলে, যা স্বাদে অতুলনীয়।
বালিগঞ্জ প্লেস: ঠিকানা: বালিগঞ্জ। সিগনেচার ডিশ: চিংড়ির মালাইকারি। দাম: প্রায় ৭৫০-১০০০ টাকা। সময়: দুপুর ১২:৩০ থেকে বিকেল ৩:৩০ এবং সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে রাত ১০:৩০ পর্যন্ত। কেন খাবেন: খাঁটি বাঙালি খাবারের আদর্শ জায়গা। নারকেলের দুধের ঘন গ্রেভিতে চিংড়ি দিয়ে বানানো এখানকার মালাইকারি আপনার মন জয় করবেই। এটি বাঙালির ঐতিহ্যবাহী খাবারের এক অনবদ্য প্রতীক।
দাদা বৌদির হোটেল: ঠিকানা: ব্যারাকপুর। সিগনেচার ডিশ: দাদা বৌদির স্পেশাল মাটন বিরিয়ানি। দাম: প্রায় ৪০০-৫৫০ টাকা। সময়: সকাল ১০টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। কেন খাবেন: ব্যারাকপুরের এই রেস্তরাঁটি তার মাটন বিরিয়ানির জন্য বিখ্যাত। নরম মাংস, সুস্বাদু আলু ও ডিমের সঙ্গে সুগন্ধি বিরিয়ানির স্বাদের প্রেমে হাবুডুবু অনেকেই। এই বিরিয়ানি খেতে শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ আসেন।
আমিনিয়া: ঠিকানা: নিউ মার্কেট, এসপ্ল্যানেড, শ্যামবাজার ইত্যাদি। সিগনেচার ডিশ: আমিনিয়া স্পেশাল চিকেন চাঁপ। দাম: প্রায় ৪০০-৫০০ টাকা। সময়: সকাল ১১:৩০ থেকে রাত ১১:৩০ পর্যন্ত। কেন খাবেন: কলকাতার অন্যতম প্রাচীন এই রেস্তরাঁটি তার চাঁপ এবং বিরিয়ানির জন্য পরিচিত। এখানকার চাঁপ অত্যন্ত ঘন এবং মশলাদার, যা পরোটা বা রুমালি রুটির সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।
চিন্তা'স: ঠিকানা: গড়িয়াহাট। সিগনেচার ডিশ: চিকেন রোল। দাম: প্রায় ১০০-১৫০ টাকা। সময়: বিকেল ৪টে থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত। কেন খাবেন: গড়িয়াহাটের এই ছোট্ট দোকানটি তার সুস্বাদু রোলের জন্য বিখ্যাত। ভরপেট এবং সুস্বাদু চিকেন রোল এখানকার সবচেয়ে জনপ্রিয় খাবারগুলির মধ্যে একটি।
ব্লু পপি: ঠিকানা: সল্ট লেক, নিউ টাউন। সিগনেচার ডিশ: চিকেন মোমো। দাম: প্রায় ২৫০-৩৫০ টাকা। সময়: দুপুর ১২:৩০ থেকে রাত ১০:৩০ পর্যন্ত। কেন খাবেন: মোমোপ্রেমীদের জন্য এটি একটি আদর্শ জায়গা। নরম এবং রসালো চিকেন মোমোর সঙ্গে স্পাইসি স্যুপ এবং সস আপনার মোমো খাওয়ার অভিজ্ঞতা একশো গুণ ভাল করে দিতেই পারে।
ট্রিঙ্কাস: ঠিকানা: পার্ক স্ট্রিট। সিগনেচার ডিশ: ফিশ ম্যঁনিয়ে। দাম: প্রায় ৭০০-১০০০ টাকা। সময়: দুপুর ১২:৩০ থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত। কেন খাবেন: ঐতিহাসিক এই রেস্তরাঁটি কেবল তার লাইভ মিউজিক নয়, বরং খাবারের জন্যও সুপরিচিত। এখানকার ফিশ ম্যঁনিয়ে হল হালকা ফ্রাই করা মাছের ফিলে, যা লেবু ও পার্সলের সস দিয়ে পরিবেশন করা হয়। এই পদটি স্বাদে এবং গন্ধে আপনাকে মুগ্ধ করবে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।