ডবল চিন, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় সাবমেন্টাল ফ্যাট বলা হয়, বর্তমানে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠেছে। বিশেষত নিজস্বী তোলার সময়ে থুতনিতে ভাঁজের সমস্যাটি বেশি চোখে পড়ে, যা অনেকের কাছে অস্বস্তির কারণ। পুজোর সময়ে জমিয়ে সাজের প্ল্যান আছে, ছবিও তোলা হবে দেদার। ফলে নতুন করে মাথাচাড়া দেবে সেই অস্বস্তি। তবে এই সমস্যা কিন্তু শুধুমাত্র অতিরিক্ত ওজন বা বয়স বাড়ার সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। বরং জীবনযাত্রার কিছু অভ্যাসের কারণেও তা হতে পারে। মুশকিল আসান হতে পারে নির্দিষ্ট কিছু ব্যায়াম এবং অভ্যাসের বদল।
ডবল চিন কী এবং কেন হয়? ডবল চিন মূলত ঘাড়ের নীচে এবং চিবুকের চার পাশে চর্বি জমার কারণে হয়। এর প্রধান কারণগুলি হল - অতিরিক্ত ওজন: শরীরের ওজন বাড়লে স্বাভাবিক ভাবেই চর্বি জমে। এর একটি অংশ চিবুক এবং ঘাড়ের আশপাশেও জমতে পারে, যার জেরে ডবল চিন তৈরি হয়। বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা কমতে থাকে। কোলাজেন এবং ইলাস্টিন উৎপাদন কমে যাওয়ায় ত্বক শিথিল হয়ে ঝুলে পড়ে, যার ফলে ডবল চিন তৈরি হয়।
বংশগত কারণ: পরিবারে কারও যদি ডবল চিনের সমস্যা থাকে, তা হলে আপনার এটি হওয়ার আশঙ্কা বেশি। এটি জিনগত বৈশিষ্ট্য হতে পারে। যদি আপনার পরিবারে এই ধরনের সমস্যা থাকে, তা হলে অল্প বয়স থেকেই জীবনযাত্রার মানের দিকে নজর রাখা জরুরি।
খারাপ খাদ্যাভ্যাস: অতিরিক্ত চিনি, নুন এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া ওজন বাড়ায়, যা ডবল চিনের অন্যতম কারণ। এই ধরনের খাবার শরীরে জল জমার প্রবণতা বাড়িয়ে দেয়, যা মুখ ও ঘাড়ের অংশে ফোলা ভাব সৃষ্টি করে।
ভুল অঙ্গভঙ্গি: দীর্ঘ সময় ধরে মাথা নিচু করে মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার করলে ঘাড়ের পেশি দুর্বল হয়ে যায়। এতে চিবুকের চার পাশের ত্বক শিথিল হয়ে ডবল চিন সৃষ্টি করে। এই সমস্যাকে অনেক সময়ে 'টেক নেক' বলা হয়।
পুজোর আগে ডবল চিন দূর করার উপায়: মুখের ব্যায়াম - জিহ্বা প্রসারিত করা: সোজা হয়ে বসুন, মাথা উপরের দিকে তুলে দিন। এ বার জিভ যতটা সম্ভব বার করে নাক ছোঁয়ার চেষ্টা করুন। ১০ সেকেন্ড তা ধরে রাখুন এবং তার পরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসুন। এই ব্যায়ামটি দিনে ৫-১০ বার করলে তা ঘাড় ও চিবুকের পেশি টানটান করতে সাহায্য করে।
মুখের ব্যায়াম - ঠোঁট প্রসারিত করা: মাথা সোজা রাখুন। এ বার ঠোঁট দুটোকে সামনের দিকে এনে মুখ দিয়ে 'O' আকৃতি তৈরি করুন। এই অবস্থায় মুখের পেশিগুলি টানটান থাকবে। এটি ২০ সেকেন্ড ধরে রাখুন এবং দিনে ৫ বার করুন। এটি মুখের চার পাশের পেশিকে শক্তিশালী করে।
স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস - কম ক্যালোরির খাবার: অতিরিক্ত ক্যালোরিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। ফল, সবজি, প্রোটিন এবং ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি করে খান। জল পান: প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে জল পান করুন। তা শরীরকে আর্দ্র রাখে এবং অতিরিক্ত জল জমতে দেয় না।
শারীরিক ব্যায়াম - কার্ডিয়ো: নিয়মিত কার্ডিয়ো ব্যায়াম যেমন - দৌড়, সাইক্লিং বা সাঁতার সামগ্রিক ভাবে ওজন কমায়। এর ফলে চিবুকের অতিরিক্ত চর্বিও কমে যাবে। সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট মাঝারি মানের কার্ডিয়ো করার চেষ্টা করুন।
শারীরিক ব্যায়াম - পুশ-আপ: পুশ-আপ শুধুমাত্র শরীরের উপরের অংশের জন্য উপকারী নয়, বরং এটি ঘাড় ও চিবুকের পেশিকেও শক্তিশালী করে। নিয়মিত পুশ-আপের অভ্যাস করলে এই অংশের পেশিগুলি মজবুত হয়।
সঠিক অঙ্গভঙ্গি: কাজ করার সময়ে বা মোবাইল ব্যবহারের ক্ষেত্রে মাথা সোজা রাখুন। নিয়মিত বিরতিতে ঘাড়ের ব্যায়াম করুন। এটি ডবল চিন এবং ঘাড়ের ব্যথা, দুটোই কমাতে সাহায্য করবে। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।