দীপান্বিতা কালীপুজোর রাতে বহু বাঙালি বাড়িতেই অলক্ষ্মী বিদায়ের রীতি আছে। কিন্তু কে এই অলক্ষ্মী, কেনই বা কালীপুজোয় তাঁকে বিতাড়িত করে পূজিত হন লক্ষ্মী দেবী? জেনে নিন পুজোর সমস্ত নিয়ম আচার।
দেবী লক্ষ্মীর দিদি হলেন অলক্ষ্মী। তাই অলক্ষ্মীকে জ্যেষ্ঠা বা নিরতী বলা হয়ে থাকে। তিনি দুর্ভাগ্যের দেবী।
অলক্ষ্মী যে বাড়িতে প্রবেশ করেন সেখানেই তাঁর সঙ্গে ঝগড়া, অশান্তি, অমঙ্গল প্রবেশ করে। অলক্ষ্মী কলহপ্রিয়া। মনে করা হয় অলক্ষ্মীর কুদৃষ্টি সংসারে পড়লে ভাই ভাইয়ের মধ্যে বিবাদ হয়, কুলনাশ হয়।
অন্য দিকে দেবী লক্ষ্মী বিষ্ণুর সঙ্গে বৈকুণ্ঠে বিরাজ করেন। বোনকে সুখে থাকতে দেখতে কষ্ট পান অলক্ষ্মী কারণ তাঁর না ছিল বাসস্থান, না স্বামী।
দিদির এই কষ্ট দূর করতে লক্ষ্মী তাঁকে আশীর্বাদ দিয়ে বলেন দৈত্য কলি অলক্ষ্মীর স্বামী হবেন। আর যেখানেই অপরিচ্ছন্নতা থাকবে, আলস্য, অত্যাচার, হিংসে, ক্রোধ, লোভ, কাম থাকবে সেখানেই বিরাজ করবেন দেবী অলক্ষ্মী।
অলক্ষ্মী কৃষ্ণবর্ণা অর্থাৎ কালো। তাঁর হাতে ঝাঁটা থাকে, পরেন লোহার গহনা, রক্তমালা এবং রক্তকমল। গাধা তাঁর বাহন।
এ বার জেনে নেওয়া যাক কী ভাবে করা উচিত অলক্ষ্মী বিদায়। আপনার বাড়িতে আসা অতিথিকে যদি খারাপ ভাবে আপ্যায়ন করেন তা হলে কি থাকবেন আপনার বাড়িতে? বা আর আসবেন? না তো। অলক্ষ্মীকেও সে ভাবেই পুজো করে বিদায় করতে হয়।
অভক্তি, তাচ্ছিল্য সহকারে অলক্ষ্মী পুজো করা উচিত। ঘি বা তেলের বদলে জ্বালানো উচিত কেরোসিনের প্রদীপ। জ্বালানো উচিত ধূপধুনোর বদলে লঙ্কা, ঘুঁটের ধোঁয়া।
এ দিন গোবর দিয়ে একটা পুতুল গড়ে তাতে পুজো করাই নিয়ম। পিছু ফিরে বাঁ হাতে অবজ্ঞা সহকারে ফুল অর্পণ করে হয়। নৈবেদ্যে তাঁকে ফলের খোসা দেওয়া হয়।
পুজো শেষে মূর্তি যখন বাড়ির একদম বাইরে রাখতে যাওয়া হয় তখন কুলো, টিন বাজাতে বাজাতে যাওয়া হয়। এ ভাবেই তাড়ানো হয় অলক্ষ্মী।
অলক্ষ্মী বিদায় করে ভক্তি ভরে দেবী লক্ষ্মীর ঘট পাতুন। ভক্তি সহকারে পুজো করুন দেবী লক্ষ্মীর।
পাঠ করুন দেবী লক্ষ্মীর ধ্যানমন্ত্র। ধুপ ধুনোর গন্ধে আবাহন জানান দেবী লক্ষ্মীকে।
প্রদীপের আলোয় সাজিয়ে তুলুন গোটা বাড়ি।
কিন্তু জানেন কেন অলক্ষ্মী বিদায় করে লক্ষ্মীর আরাধনা শুরু হল?
কথিত আছে এক বার এক রাজার কাছে এক জন কারিগর মূর্তি বিক্রি করতে আসেন। রাজা তাঁকে কথা দেন তাঁর কাছে যে মূর্তিই থাকুক না কেন তিনি সেটি কিনবেন।
আর কারিগরের কাছে ছিল অলক্ষ্মীর মূর্তি। আর সেই মূর্তি কেনার পর থেকেই রাজ্য ছারখার হতে শুরু করে। একের পর এক দুর্যোগ ঘটতেই থাকে।
তখন এই বিপদের হাত থেকে নিষ্কৃতি পেতে লক্ষ্মীপুজো শুরু করেন সেই রাজা। দূর হয় অলক্ষ্মী, বিপদ, দুর্যোগ। ফিরে আসে হারানো শান্তি। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।