বাড়ি মানেই কেবল চার চেওয়ালের সমষ্টি অথবা কিছু প্রয়োজনীয় আসবাবের সমাহার নয়। একটি ঘরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা করতে গেলে তাঁকে যত্ন নিয়ে সাজিয়েও তুলতে হয়। কিন্তু অন্দরসজ্জার প্রসঙ্গ উঠলেই তো খরচের চিন্তা! জানেন কি, ঘর সাজাতে কেবল বিলেতি জিনিসের আমদানির প্রয়োজন পড়ে না। বরং খুব কম খরচেই নিজের বাসভবনটিকে দেওয়া যায় নতুন রূপ। অন্দরসজ্জার উপকরণ আপনার হাতের সামনেই।
পুজো তো প্রায় এসেই গেল। উৎসবের আবহে বাড়িতে অতিথিদের আনাগোনা লেগেই থাকবে। তার আগে কম খরচে এই বিশেষ কিছু উপকরণের মাধ্যমে সাজিয়ে তুলুন আপনার গৃহকোণকে।
ভাঙা জিনিস মানেই তা আবর্জনা? জাপানিরা বলে অন্য কথা। ‘কিনসুগি’ হল জাপানে সেরামিক ও চিনামাটির ভাঙা জিনিস মেরামত করার পদ্ধতি। সোনা, রুপো এবং প্ল্যাটিনামের সঙ্গে বার্নিশ মিশিয়ে জোড়া লাগানো হয় এগুলি। এত দামি ধাতু দিয়ে না হলেও, এ ভাবে আপনিও কারুকার্য করে ভাঙা জিনিসকেই ব্যবহার করতে পারেন অন্দরসজ্জায়।
অন্দরসজ্জার সামগ্রীর মধ্যে সংগ্রহে রাখতে পারেন সেরামিক ও চিনামাটির হরেক জিনিসপত্র। সেরামিকের চায়ের কাপ বা কারুকার্য করা প্লেটও দারুণ অন্দরসজ্জার সঙ্গী হয়ে উঠতে পারে।
এ ক্ষেত্রে একটু সচেতন হতে হবে দেওয়ালের রং নিয়েও। গাঢ় রঙের কাপ-ডিশের নেপথ্যে যদি হালকা রঙের বা মানানসই দেওয়াল না থাকে তাহলে বিষয়টি ফুটবে না।
যে কোনও ঘর সাজানোর সামগ্রীর দোকানে অথবা বাজার-হাটেও সহজে পেয়ে যাবেন চিনামাটির তৈরি ঘর সাজানোর জিনিসের বিপুল সম্ভার। বাসনপত্র তো আছেই, এ ছাড়া জানালায় রাখার মতো টব, দেওয়াল সাজানোর সামগ্রী-সহ আর কী না নেই!
টেবিলে রাখতে পারেন কারুকাজ করা মূর্তি। ফুল ও গাছের শখ থাকলে, চিনামাটির ফুলদানিও রেখে দিন নিজের সংগ্রহে। তা ছাড়া চিনামাটির কাপ, প্লেট, ট্রেগুলিও অন্দরসজ্জার ভাল উপকরণ।
বসার ঘরের সোফার পাশে রাখা টেবিলটি বড় ফাঁকা ফাঁকা লাগছে? অতিথিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করুন ডোকরার নানা মূর্তির সাহায্যে। এর দেওয়াল-শিল্পও বেশ জনপ্রিয়। শুধু ঘরসজ্জা নয়, ডোকরার গয়নাও রমণীদের প্রথম পছন্দ।
সৃজনশীলতা নিয়ে সামান্য জ্ঞান থাকলে পুরনো কাঁচের বোতল বা বেশ শখের কোনও দামি মদের বোতলও হয়ে উঠতে পারে চমকপ্রদ ঘর সাজানোর সামগ্রী।
ছবি আঁকতে ভালবাসেন? তা হলে তো ঘর সাজিয়ে তুলতে আপনার তুলির টানই যথেষ্ট। বাড়ির কোনও একটি দেওয়ালে নিজেই দেখান হাতের জাদু। কিংবদন্তি চিত্রশিল্পী যামিনী রায়ের ধাঁচের কোনও আঁকা বা মধুবনী ঘরানার চিত্রশিল্পও বেশ মানাবে। পাশাপাশি ঠিকভাবে করতে পারলে ঐতিহ্যবাহী ‘ওয়ারলি আর্ট’ও দারুণভাবে নজর কাড়বে সকলের।
এ ছাড়াও নিজে ছবি এঁকে সেটকে বাঁধিয়েও সাজাতে পারেন দেওয়াল। হাতে যখন সাক্ষাৎ সরস্বতীদেবী রয়েছেনই, তা হলে বাইরে থেকে বিপুল অর্থ দিয়ে ছবি কেনারও প্রয়োজন পড়বে না
একই ঘরে আসবাবের বাহুল্য একেবারেই দৃষ্টিনন্দন হয় না। একটু পা বাড়ালেই কিছু না কিছুর সঙ্গে ধাক্কা! একটু বুদ্ধি খাটান আর অপ্রয়জনীয় বস্তুগুলিকে যতটা সম্ভব সরিয়ে দিন। কোনও ছোট ঘরে বড় বিছানার ঝক্কি না রেখে প্রয়োজনে ভাঁজ করা যায় এমন ‘সোফা কাম বেড’কে জায়গা দিন। ইন্টারনেটে খুঁজলে ভাঁজ করা টেবিলের খোঁজও মিলবে।
আলো মানুষের মনকেও স্পর্শ করে। সকালে ঘুম থেকে উঠে পর্দা সরালে প্রথমেই যে আলো ঘরে ঢোকে, তাতে দিনের শুরুটা যেন অন্যভাবেই হয়। অথবা নির্জন একাকী রাতে অন্ধকার বারান্দায় মৃদু আলোর টুনি লাইটও মন ভাল করার সঙ্গী হয়। সাধের বাড়িটিকে এভাবেই সাজিয়ে তুলতে পারেন বাহারি আলো দিয়ে। এটি যেমন ঘরে আলাদা আমেজ তৈরি করে, তেমন সহজলভ্যও বটে।
বই পড়তে ভাল বাসলে বসার ঘরে রাখতে পারেন কোনও বইয়ের তাক। এতে দেখতেও সুন্দর লাগবে আর কোনও অপেক্ষমান অতিথি চাইলে তাক থেকে বই বের করে পড়তেও পারবেন।
ঘর সাজানোর জন্য ‘ইন্ডোর প্ল্যান্ট’ও দারুণ উপকরণ। এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।