প্রতীকী চিত্র
অকালবোধনে লুকিয়ে রয়েছে আর এক অকাল আরাধনার গপ্পো। ভাদ্র সংক্রান্তিতে বিশ্বকর্মার আরাধনা করে গোটা বাংলা। তবে তন্তুবায় সম্প্রদায়ের মানুষ কিন্তু এ দিন বিশ্বকর্মার পুজো করেন না। তাঁতশিল্পীদের বিশ্বকর্মা পুজো হয় পৌষ মাসে। রামচন্দ্রের অকাল বোধনের মতো বিশ্বকর্মারও যেন অকাল আরাধনা হয়!
হুগলির চণ্ডীতলার বেগমপুর এলাকায় একাধিক তন্তুবায় পরিবারের বসবাস। তাঁত আদতে যন্ত্র, ফলে কাপড় যাঁরা বোনেন, তাঁদেরও বিশ্বকর্মার কৃপা প্রয়োজন। কিন্তু ভাদ্র মাসে ঘাড়ের উপরে নিঃশ্বাস ফেলে দুর্গাপুজো। তাঁতিদের কাজের বিপুল চাহিদা এবং ব্যস্ততা থাকে। সেই কারণে দুর্গাপুজোর প্রাককালে বিশ্বকর্মা পুজোয় আমোদ-আহ্লাদ করতে পারতেন না তাঁতিরা। তাই বলে কি তাঁরা বিশ্বকর্মার পুজো করবেন না? অগত্যা নিজেরাই উপায় খুঁজলেন। আজ থেকে ৭০-৭৫ বছর আগে বেগমপুরের ছোট তাজপুর কাঁঠালতলা গ্রামের দুই তাঁতশিল্পী ছবি সেন এবং নিমাই কুণ্ডু নিজেরাই প্রতিমা গড়ে পৌষ মাসের শুক্ল পক্ষের নবমী তিথিতে বিশ্বকর্মার পুজো শুরু করেন। সেই থেকে অকালে বিশ্বকর্মার পুজো চলে আসছে। ধীরে ধীরে সংখ্যা বেড়েছে, ব্যক্তিগত উদ্যোগে শুরু হওয়া পুজো বারোয়ারি পুজোর আকার নিয়েছে। এখন বেগমপুর ও আশপাশের অঞ্চলে প্রায় ত্রিশটিরও বেশি বিশ্বকর্মা পুজো হয়। চার দিন ধরে উৎসব চলে, মেলা বসে।
তবে এই বিশ্বকর্মা মূর্তি অন্যান্য জায়গার চেয়ে খানিক আলাদা। তাঁতের মাকুর শব্দ ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দের প্রায় অনুরূপ। তাই বেগমপুরে বিশ্বকর্মার বাহন হাতির বদলে ঘোড়া। হুগলির পাশাপাশি বাঁকুড়ার গোপীনাথপুরের তন্তুবায় সম্প্রদায় এবং নদিয়ার শান্তিপুর ও ফুলিয়ার তাঁতিরাও পৌষ মাসেই বিশ্বকর্মা পুজো করেন।
এমনই এক ব্যতিক্রমী বিশ্বকর্মা পুজো দেখা যায় পুরুলিয়ায়। সেখানে প্রায় একশো বছরেরও বেশি সময় যাবৎ মাঘ মাসের শ্রীপঞ্চমী তিথিতে বিশ্বকর্মা পুজো হয়ে চলেছে। এখানেও চার দিনের উৎসব চলে পুজোকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় সূত্রধরদের হাতে এই পুজোর সূত্রপাত, নেপথ্যে কারণ সেই দুর্গাপুজো। দুর্গাপুজো উপলক্ষে ব্যস্ততা থাকায় তাঁরা ভাদ্র মাসে বিশ্বকর্মার আরাধনা করতে পারেন না। ফলে শীতে পুজোর আয়োজন করতে আরম্ভ করেন তাঁরা।
এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ।