সারা বছরের দেখা-শোনা যতই হোক, এই একটা দিন সব ভুলিয়ে দেয়! ভাইফোঁটা। এই একটামাত্র দিনের জন্য অপেক্ষা চলে বছরভর। দিনটা যে শুধু ভাই বোনের। প্রতিটা যুদ্ধ জিতে আসুক সহোদর, জীবনের প্রতি লড়াইয়ে সফল হোক সহোদরা– এই কামনাই থাকে।
ভাইফোঁটার পুরাণ কাহিনির সঙ্গেও জড়িয়ে আছে এমন জয়-বিজয়ের গল্প। যার উল্লেখ পাওয়া যায় মহাভারতে।
এই কাহিনির কেন্দ্রেও আছেন শ্রীকৃষ্ণ। তাঁর প্রাণাধিক প্ৰিয় সহোদরা সুভদ্রা।
কথিত, ধনত্রয়োদশীর পরের দিন চতুর্দশী তিথিতে নরকাসুরকে বধ করেন শ্রীকৃষ্ণ। বিজয়লাভের পর দ্বারকায় ফিরে আসেন তিনি। তাঁর পথ চেয়েছিলেন বোন সুভদ্রা।
দ্বারকাধীশ তাঁর কাছে আদর আবদারের 'দাদা'। তাই দীর্ঘ অদর্শনে কাতর বোন বরণডালা সাজিয়েছিলেন তাঁর জন্য। দ্বারে দাড়িয়ে দীপ, ধূপ,তিলকে আরতি করে মিষ্টিমুখ করান দাদাকে।
ভীষণ খুশি হন ভ্রাতা শ্রীকৃষ্ণ।
সেই থেকেই ভাইয়ের কপালে ফোঁটা দিয়ে ভাইফোঁটা উত্সব পালনের শুরু।
শ্রীকৃষ্ণের পাশাপাশি লক্ষ্মী-নারায়ণেরও যোগ রয়েছে ভাইফোঁটার সঙ্গে।
সেই কাহিনি আবার এ রকম, এক বার বালির হাতে পাতালে বন্দি হন বিষ্ণু।
অনেক চেষ্টা করেও দেবতারা বিষ্ণুকে বালির হাত থেকে উদ্ধার করতে সমর্থ হননি। তখন তাঁরা দেবী লক্ষ্মীর শরণ নেন।
নারায়ণকে উদ্ধার করার জন্য লক্ষ্মী ভাই পাতান বালিকে। তাঁকে ফোঁটাও দেন লক্ষ্মী। দিনটি ছিল কার্তিক মাসের শুক্লা দ্বিতীয়া তিথি।
ফোঁটা পেয়ে বালি লক্ষ্মীকে উপহার দিতে চাইলে লক্ষ্মী তখন বিষ্ণু তথা নারায়ণের মুক্তি চেয়ে নেন।
ভাইফোঁটা শুধু বাঙালির উৎসব নয়, নানা প্রদেশে নানা নামে পরিচিত। উত্তর-পশ্চিম ভারতে ভাইফোঁটা ‘ভাইদুজ’। মহারাষ্ট্র, গোয়া ও কর্ণাটকে এই উৎসবকে বলা হয় ‘ভাইবিজ’। নেপালে বলা হয় ‘ভাইটীকা’।
তবে যে নামেই ডাকা হোক না কেন, উৎসবের মূল সুরটি কিন্তু সর্বত্র এক। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।