পুজো আসছে! এই কথাটার মধ্যে কেমন একটা জাদু আছে। আকাশে-বাতাসে একটা হালকা হিমেল পরশ, শিউলি ফুলের মিষ্টি গন্ধ, আর মনে মনে একটা চাপা উত্তেজনা। এ বার পুজোয় কি প্রথম বার দেবীকে বরণ করে তাঁর আরাধনা করছেন? তা হলে জেনে নিন দুর্গাপুজোর কোন কোন নিয়ম-নীতি মানতেই হবে। লক্ষ্মী বা সরস্বতী পুজো যেমন সহজে করা যায়, তেমনই বাড়িতে দেবী দুর্গারও আরাধনা সম্ভব। তবে তার জন্য খুব বেশি ঝক্কি পোহাতে হয় না। শুধু কিছু নিয়ম মেনে চললেই হবে।
১. প্রথম প্রস্তুতি – দেবীর প্রতিমা বা ছবি ঘরে বসাতে হবে পরিষ্কার, নতুন বস্ত্রে ঢাকা সিংহাসন বা পিঁড়ির উপর। সঙ্গে দেবাদিদেব শিবের ছবিও রাখতে হবে।
২. স্থাপনের দিক – শাস্ত্র মতে প্রতিমা উত্তর বা উত্তর পূর্ব দিকে রাখতে হয়, যাতে পুজারির মুখ থাকে উত্তর বা উত্তর-পূর্ব দিকে। তাতেই সংসারে আসে মঙ্গল ও শান্তি।
৩. বাস্তু অনুযায়ী স্থান – ইশান কোণ অর্থাৎ উত্তর-পূর্ব দিককে পূজার্চনার শ্রেষ্ঠ স্থান ধরা হয়। এ দিকেই ঘট বসালে দূর হয় বাস্তু দোষ।
৪. ঘটস্থাপন – ঘটেই দেবী অধিষ্ঠান করেন। নবগ্রহকে উদ্দেশ্য করে নৈবেদ্য দেওয়ার সময় আতপ বা গোবিন্দভোগ চাল ব্যবহার করা হয়।
৫. পাঁচরকম ফল ও ভোগ – নারকেল, নাড়ু, মোয়া, মিষ্টি—সবই রাখতেই হবে। পাঁচ রকম গোটা রসালো ফল না রাখলে পূর্ণতা আসে না পুজোয়।
৬. প্রদীপ ও ধুনুচি – দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অখণ্ড প্রদীপ রাখলে অগ্নি তত্ত্বের বাস্তু দোষ কেটে যায়। কর্পূর-ধুনুচির ধোঁয়ায় ভরে ওঠে পবিত্রতা।
৭. দেবীর সাজসজ্জা – শাঁখা-পলা, সিঁদুর, আলতা, নতুন শাড়ি— এই সব দিয়েই দেবীকে সাজাতে হয়। যেন নববধূর মতো আগমন ঘটে ঘরে।
৮. দরজায় শোভা – আমপাতা বা অশোকপাতার মালা দিয়ে সাজালে নেতিবাচক শক্তি প্রবেশ করতে পারে না বাড়িতে। তবে শুকিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে সেটাকে পাল্টে দিতে হবে।
৯. শঙ্খ ও ঘণ্টাধ্বনি – পুজোর সময়ে শঙ্খধ্বনি, ঘণ্টাধ্বনি দিলে পরিবেশ হয় পবিত্র। বাস্তু দোষও দূর হয় বলে বিশ্বাস।
১০. কুমারী পূজা – অষ্টমী বা নবমীতে কুমারী কন্যাকে দেবী স্বরূপে মানলে, তাঁদের ভোজন করালে ঘরে আসে সমৃদ্ধি ও ঐশ্বর্য।
১১. নিয়মিত প্রদীপ জ্বালানো – ঠাকুরঘরে শুদ্ধ ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালালে ইতিবাচক শক্তি বৃদ্ধি পায়, মানসিক চাপ কমে।
১২. শেষের দিন বিসর্জন – দশমীর দিন দেবী বরণ, সিঁদুর খেলার আনন্দ শেষে দেবীকে বিদায় জানাতে হয় জল, ফল ও ভোগ দিয়ে। বিশ্বাস করা হয়, বিদায় ঘটলেও সঙ্গে থেকে যায় দেবীর আশীর্বাদ। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।