রহস্যের হাতছানি: কলকাতা থেকে কার্শিয়াং - পরিচিত ভূতুড়ে জায়গাগুলির বাইরেও এই বাংলায় এমন কিছু স্থান আছে, যাদের ভৌতিক 'খ্যাতি' হয়তো ততটা প্রচারিত নয়। কিন্তু তাদের রহস্যে ঘেরা, গা ছমছমে নানা কাহিনি আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে! রইল পশ্চিমবঙ্গের এমন পাঁচটি কম আলোচিত 'হন্টেড প্লেস' বা ভূতুড়ে স্থানের হালহদিস। যেখানে রাত নামলেই নামে ভয়, শোনা যায় ইতিহাসের চাপা দীর্ঘশ্বাস!
কাশিমবাজার রাজবাড়ি (মুর্শিদাবাদ): এক কালের জাঁকজমকপূর্ণ এই কাশিমবাজার রাজবাড়ি আজ তার অতীত জৌলুসের ছায়া মাত্র। এর পরিচিতি মূলত রাজ পরিবারের অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র ও মর্মান্তিক মৃত্যুর কাহিনি ঘিরে। প্রচলিত কাহিনি অনুযায়ী, রাজবাড়ির এক রানিকে ব্রিটিশ আমলে অত্যাচার করে হত্যা করা হয়েছিল। স্থানীয়দের বিশ্বাস, সেই রানির অতৃপ্ত আত্মা আজও এই পুরনো প্রাসাদের অলিন্দে ঘুরে বেড়ায়! সন্ধ্যার পর সেখান থেকে নাকি ভেসে আসে নারীকণ্ঠে গোঙানির শব্দ!
জলপাইগুড়ি সরকারি রেস্ট হাউস: জলপাইগুড়ির এই পুরনো সরকারি রেস্ট হাউসটি লোকচক্ষুর আড়ালে থেকেও ভুতুড়ে বলে পরিচিত। পর্যটন মানচিত্রে এর নাম তেমন না থাকলেও, এখানে রাত কাটানো বেশ কিছু অতিথি ও কর্মচারীরা অদ্ভুত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। অশরীরী পায়ের শব্দ, ঘরের ভিতর আলোর রহস্যময় ওঠানামা এবং রাতের বেলা করিডোরে ছায়ামূর্তি দেখতে পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে এই নির্জন বাংলোটি সম্পর্কে! অপরূপ প্রকৃতির মাঝে থেকেও এই স্থানটি হাড়হিম ভয়ের জন্ম দেয়। (প্রতীকী ছবি)
বাঁশবাড়ি (সুন্দরবন): সুন্দরবনের গভীরে বাঁশবাড়িকে স্থানীয়রা অত্যন্ত ভয় পান। এটি মূলত এক ঘন জঙ্গলে ঘেরা এলাকা, যেখানে মানুষের আনাগোনা প্রায় নেই বললেই চলে। লোককথা অনুযায়ী, এই অঞ্চলে রহস্যময় আলো দেখা যায় এবং গভীর রাতে নাকি কারও কারও আকস্মিক নিখোঁজ হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে! এখানকার আদিবাসী এবং জেলে সম্প্রদায়ের লোককথা এই স্থানটিকে ঘিরে নানা অলৌকিক বিশ্বাসের জন্ম দিয়েছে। যা আজও এখানকার পরিবেশে এক চাপা আতঙ্ক তৈরি করে রাখে। (প্রতীকী ছবি)
দিঘার পুরোনো সি বিচ বাংলোর ধ্বংসাবশেষ: দিঘা একটি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র হলেও সমুদ্র সৈকতের কাছাকাছি কিছু পুরনো ও পরিত্যক্ত বাংলোর ধ্বংসাবশেষ রয়েছে, যা স্থানীয়দের কাছে ভুতুড়ে বলে পরিচিত! দাবি করা হয়, এই বাংলোগুলির প্রাক্তন মালিকের আত্মা নাকি আজও এখানে ঘুরে বেড়ায়! অনেকেই নাকি রাতে এই ধ্বংসাবশেষের আশপাশে অস্পষ্ট কণ্ঠস্বর বা ছায়ামূর্তি দেখতে পাওয়ার দাবি করেছেন! এটি দিঘার মনোরম সৈকতের বিপ্রতীপে এক অন্য রকম ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে। (প্রতীকী ছবি)
দার্জিলিং-এর পুরনো মিলিটারি হাসপাতাল: দার্জিলিংয়ের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড়ি এলাকার মাঝে পুরনো মিলিটারি হাসপাতালটি (বর্তমানে ধ্বংসপ্রাপ্ত অংশ) তার অশরীরী উপস্থিতির জন্য পরিচিত। এটি অতীতে ব্রিটিশ সৈনিক এবং রোগীদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হত। স্থানীয়দের বিশ্বাস, অতীতের সৈনিক এবং রোগীদের আত্মা এখনও এই ধ্বংসাবশেষের মধ্যে ঘুরে বেড়ায়! সন্ধ্যার পরে এই জায়গাটিতে গেলে হঠাৎ করে বাতাসের অস্বাভাবিক শীতলতা অনুভব করা যায় বা চাপা গোঙানির শব্দ শোনা যায় বলে দাবি। (প্রতীকী ছবি)
ভৌতিক বিশ্বাস - কেন এই স্থানগুলি এড়িয়ে চলা হয়: বাংলায় ভুতুড়ে কাহিনি ও লোকবিশ্বাসের গভীর শিকড় রয়েছে। এই স্থানগুলি এড়িয়ে চলার প্রধান কারণ হল - অপঘাতে মৃত (যেমন - খুন, আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা) ব্যক্তিদের আত্মার উপস্থিতির দাবি। বিশ্বাস করা হয়, অতৃপ্ত আত্মাগুলি তাদের মৃত্যুর স্থান থেকে সহজে মুক্তি পায় না এবং যারা তাদের 'স্পেস' বা পরিসরে প্রবেশ করে, তাদের নানা ভাবে প্রভাবিত করে!
ইতিহাসের সঙ্গে মিশে থাকা রহস্য: এই কম আলোচিত হন্টেড প্লেসগুলির বেশির ভাগই পুরনো ঐতিহাসিক স্থাপত্য বা ব্রিটিশ আমলের। কাশিমবাজার রাজবাড়ি বা দার্জিলিংয়ের মিলিটারি হাসপাতালের মতো স্থানগুলি তাদের ইতিহাসের কালো অধ্যায় বা মর্মান্তিক ঘটনাগুলিকে যেন আজও ধরে রেখেছে। এই চাপা ইতিহাসই অলৌকিক কাহিনিগুলির প্রধান উৎস।
স্থানীয়দের সতর্কতা - রাতের নীরবতা: যে সব জায়গায় এই ভুতুড়ে গল্পগুলি প্রচলিত, সেখানকার স্থানীয় বাসিন্দারা কঠোর ভাবে সূর্যাস্তের পরে এই স্থানগুলি এড়িয়ে চলেন। তাঁদের মতে, রাতের নীরবতা এখানে অন্য এক শক্তির জন্ম দেয়। যদিও এই গল্পগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবুও, লোকবিশ্বাস ও ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এই জায়গাগুলিকে ঘিরে থাকা রহস্য আজও অটুট রেখেছে।
আপনি কি অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী? পশ্চিমবঙ্গের এই কম আলোচিত ভুতুড়ে স্থানগুলি রহস্যপ্রেমী এবং 'প্যারানরমাল ইনভেস্টিগেটর'দের জন্য নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনের দরজা খুলে দেয়। আপনিও যদি অ্যাডভেঞ্চার ভালবাসেন এবং গা ছমছমে অভিজ্ঞতা পেতে চান, তা হলে এই স্থানগুলি ঘুরে আসতেই পারেন। তবে মনে রাখবেন - স্থানীয়দের সাবধানবাণী মেনে চলবেন এবং সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে তবেই নির্জন স্থানে যাবেন। (এই প্রতিবেদনটি ‘আনন্দ উৎসব’ ফিচারের একটি অংশ)।